স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর বাংলাদেশের ভূ-সীমানা বাড়ছে। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতের রাজ্যসভার ও লোকসভায় পাস হওয়ার পর দেশের আয়তন বৃদ্ধি পাবে।
চুক্তিটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চার রাজ্য- আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানারেখায় পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে ছিটমহল সমস্যা, অপদখলীয় ভূমি ও অচিহ্নিত সীমানা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
এর আগে সমুদ্রসীমা মামলায় নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিসি আদালতের রায়ে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ছয় হাজার ১৩৫ বর্গকিলোমিটার পেয়েছে ভারত।
সীমান্ত বিল বাস্তবায়নের ফলে ভারত বা বাংলাদেশ কোন দেশ বেশি জমি পাবে বা জমি হারাবে এ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে গত বছর সচেতনতা বাড়াতে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের ভেতর থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭ হাজার ১৬০.৬৩ একর) বাংলাদেশকে দেবে ভারত। অন্যদিকে ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (সাত হাজার ১১০.০২ একর) বাংলাদেশ দেবে ভারতকে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই পুস্তিকায় বলা হয়েছে, কাগজের হিসেবে ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের কাছে ভারতের জমি হারানোর মতো বিষয় মনে হলেও বাস্তব প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। ছিটমহলগুলো অন্য দেশের ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ বা ভারত কোনো দেশের সঙ্গেই ছিটমহলগুলোর ভৌত যোগাযোগ নেই। বিনিময়ের ফলে ভারতের মধ্যে থাকা ছিটমহলগুলো ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে আর বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ছিটমহলগুলো যুক্ত হবে বাংলাদেশের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রাপ্য ছিটমহল বেশি হওয়ায় নতুন মানচিত্রে দেশের আয়তন বাড়বে।
দেখা যাবে, কোথাও ভারতের সীমানারেখা বাংলাদেশের বর্তমান সীমানার ভেতর ঢুকে গেছে।
আবার ভারতের সীমানার ভেতরও কোনো কোনো স্থানে বাংলাদেশের সীমানারেখা ঢুকে যাবে।
ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারত যে প্রায় ১০ হাজার একর জমি বেশি হারাবে, সে জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না।
পুস্তিকার প্রথম অংশে `মুহুরী নদী (বিলোনিয়া) সেক্টর` শিরোনামে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সীমানা পিলার (২১৫৯/৪৮-এস) থেকে সীমানারেখা আরো পশ্চিম দিকে টেনে ১৯৭৭-৭৮ সালের যৌথ সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি মুহুরী নদী এলাকার নকশায় প্রদর্শিত বার্নিংঘাটের দক্ষিণ সীমায় গিয়ে মিলবে। এরপর তা উত্তর দিকে বাঁক নিয়ে বার্নিংঘাটের বাইরের সীমা বরাবর গিয়ে বর্তমান মুহুরী নদীর কেন্দ্রে মিশবে। এটি আবার বিদ্যমান মুহুরী নদীর মধ্যস্রোত বরাবর গিয়ে ২১৫৯/৩-এস সীমান্ত পিলার পর্যন্ত যাবে। এটি হবে স্থায়ী সীমানা।
তৃতীয় অংশে `লাঠিটিলা ও ডুমাবাড়ি` শিরোনামে রেডক্লিফের আঁকা সীমানারেখা ১৩৯৭ নম্বর পিলার থেকে সোজা দক্ষিণে ডুমাবাড়ি, লাঠিটিলা ও বড় পুটনিগাঁও মৌজার লোহার ব্রিজ পর্যন্ত এবং এরপর তা দক্ষিণ দিকে পুটনিছড়া বরাবর সিলেট-ত্রিপুরা সীমান্ত পর্যন্ত (পিলার নম্বর ১৮০০) টানার কথা বলা হয়েছে। চতুর্থ অংশে `দইখাতা ৫৬ (পশ্চিমবঙ্গ-জলপাইগুড়ি)/পঞ্চগড়` শিরোনামে বলা হয়েছে, এই অংশের স্থায়ী সীমান্তরেখা ১৯৯৭-৯৮ সালের জরিপ অনুযায়ী দইখাতা-৫৬-এর সীমানা বরাবর ৪৪৪/৬ নম্বর সীমান্ত নকশায় (স্ট্রিপ শিট) বিদ্যমান ৭৭৪/৩২-এস সীমান্ত পিলার থেকে শুরু হবে। এরপর তা দইখাতা-৫৬-এর (পূর্ব থেকে পশ্চিম) দক্ষিণ সীমানা অনুসরণ করে ১৮ নম্বর পয়েন্ট পর্যন্ত যাবে।
প্রটোকলের তৃতীয় অনুচ্ছেদে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম সেক্টরে অপদখলীয় ভূমির সীমানা প্রসঙ্গে বলা হয়, ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত উভয় দেশের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে চূড়ান্ত করা অপদখলীয় ভূমির নকশা অনুযায়ী অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে স্থায়ী সীমান্ত নির্ধারিত হবে।
বোসমারী-মাধুগারি (কুষ্টিয়া-নদীয়া) এলাকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যৌথ জরিপ ও ২০১১ সালের জুন মাসে দুই দেশের সম্মতি অনুযায়ী, এ সীমান্ত ১৯৬২ সালের মানচিত্র অনুসারে ১৫৪/৫-এস সীমানা পিলার থেকে শুরু করে মাথাভাঙ্গা নদীর পুরনো ধারা অনুসরণ করে ১৫১/১-এস নম্বর সীমান্ত পিলারে গিয়ে মিশবে।
চর মহিষকুণ্ডি (কুষ্টিয়া-নদীয়া) এলাকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যৌথ জরিপ ও ২০১১ সালের জুনে উভয় দেশের সম্মতির ভিত্তিতে এ এলাকার সীমানারেখা বিদ্যমান সীমান্ত পিলার ১৫৩/১-এস থেকে টেনে মাথাভাঙ্গা নদীর তীর বরাবর ১৫৩/৯-এস নম্বর সীমান্ত পিলার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।
বেরুবাড়ী (পঞ্চগড়-জলপাইগুড়ি) এলাকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ১৯৯৬-১৯৯৮ সালে যৌথভাবে চিহ্নিত সীমান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের অপদখলে থাকা বেরুবাড়ী (পঞ্চগড়-জলপাইগুড়ি) এবং ভারতের অপদখলে থাকা বেরুবাড়ী ও সিংঘাপাড়া-খুদিপাড়ার (পঞ্চগড়-জলপাইগুড়ি) সীমানারেখা আঁকা হবে। প্রটোকলের অপদখলীয় ভূমি অংশে মেঘালয় সেক্টরের ছয়টি এলাকার উল্লেখ রয়েছে।
ডাউকি/তামাবিল এলাকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ১২৭৫/১-এস নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে ১২৭৫/৭-এস নম্বর সীমান্ত পর্যন্ত সীমান্তরেখা আঁকা হবে। উভয় পক্ষ এ সীমান্তের শূন্যরেখায় বেড়া দেওয়ার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে। মুক্তাপুর-ডিবির হাওর এলাকা প্রসঙ্গে প্রটোকলে বলা হয়েছে, ভারতীয় নাগরিকরা এ এলাকার কালীমন্দির পরিদর্শন করতে পারবে।
এ ছাড়া মুক্তাপুর এলাকার পাড় থেকে মুক্তাপুর/ডিবির হাওর এলাকার জলসীমানা থেকে ভারতীয় নাগরিকরা পানি উত্তোলন ও মাছ ধরতে পারবে।সূত্র: জাগো নিউজ ২৪।