সুনামগঞ্জের তিন উপজেলা ও নেত্রকোনার ওপর দিয়ে গতকাল প্রলঙ্করী কালবৈশাখী বয়ে গেছে। এ সময় বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাসের তোড়ে তিনজন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছে। ঝড়ে ২৫০টি গরু মারা গেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তিনটি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে দুইজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ে তিন উপজেলায় প্রায় দুই হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে অন্তত আড়াই শ’ গরুর মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুলসংখ্যক গাছগাছালি। ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়েছে। এ সময় প্রবল শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত এক হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে জেলার দিরাই, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে এসব হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেনÑ দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের গোলেনা বেগম (২০)। ঘূর্ণিঝড়ের সময় গাছচাপায় তার মৃত্যু হয়। অপর নিহত ব্যক্তি হলেনÑ একই উপজেলার শ্যামারচর ইউনিয়নের শ্যামারচর গ্রামের জামাল উদ্দিন (৫৫)। ঝড়ের তোড়ে নৌকাডুবে নিখোঁজ হওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়া।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, ঝড়ে উপজেলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে দেড় হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। এ ছাড়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সাদিরপুর গ্রামের কৃষক আবু সামাহ বলেন, ঝড়ের সাথে বিরাট আকৃতির শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ধানের গাছগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও ছড়ার ধানগুলো ঝরে পড়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফি কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে মারা গেছে ৪৩টি গরু। তিনি বলেন, হাওরগুলোতে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার ছিড়াউড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৫টি গরু। তিনি জানান, পাঠলি ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
এ দিকে ঘূর্ণিঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত দিরাই উপজেলা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দ্রুত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে তাৎক্ষণিক চাল সহয়তা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও ঢেউটিন বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ দিকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে গতকালের প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টিতে উঠতি পাকা বোরো ফসলের ব্যাপক তি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের পাকা ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। এ সময় বজ্রপাতে হোসেন আলী (৫০) নামে এক ধান কাটা শ্রমিক নিহত এবং রুক্কু মিয়া, সিদ্দিকুর রহমান ও আইয়ুব আলী নামে তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের সবার বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগরের চান্দালীপাড়া গ্রামে।
জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পাঁচকাটা, গনিহারগাঁও, সন্ধ্যাহলা, ধনুন, চান্দুয়াইল, দিলুরা, আনন্দপুর, কৈলাটি ইউনিয়নের আজগড়া, বানিয়াপাড়া, পরিশতলা, বিষমপুর, শ্যামপুর, বিষমপুর কান্দাপাড়া, দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডীগড় ইউনিয়নের বড়ইগঞ্জ, মৌ, নাগেরগাতি, বনগ্রাম, কেরনখলা এবং বাকলজোড়া ইউনিয়নের বালিচান্দা, গুজিরকোনা, পাইতপাড়া, নয়াপাড়া গ্রামে প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হয়। জেলার কলমাকান্দার বিষরপাশায় সোনাডুবি হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ধান কাটা শ্রমিক হোসেন আলী, রুক্কু মিয়া, সিদ্দিকুর রহমান ও আইয়ুব আলী আহত হন। তাদের বাড়িতে নেয়া হলে হোসেন আলী মারা যান। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী শিলাবৃষ্টিতে ওঠতি পাকা বোরো ফসলের ব্যাপক তি হয়। এলাকার অনেক কৃষকের জমির ফসল মাটির সাথে মিশে যায়। শিলাবৃষ্টির সাথে মাঝারি ঝড়ও বয়ে গেছে। এতে কিছু গাছপালা এবং কাঁচা ঘরবাড়িও তিগ্রস্ত হয়েছে।
Prev Post