দীর্ঘ ২১ বছরেও লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়নি। এতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিরাজ করছে স্থবিরতা। দীর্ঘ সময়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একাধিকবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও সম্মেলন হয়নি। এ নিয়ে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।
অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডারবাজী, জমি দখলসহ বিভিন্ন সাংগঠন বিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছেন যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এছাড়াও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে, নিজের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করার অভিযোগ রয়েছে। তবে সংগঠনের সাবেক নেতারা মনে করছেন, সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি না হওয়ায় ও দলে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় একটি সুযোগ সন্ধানী মহলের ইন্ধনে নেতাকর্মীরা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন।
এদিকে সংগঠনের জেলা কমিটি গঠন হচ্ছে, এমন খবরে পদ প্রত্যাশী ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে গত কয়েক মাস থেকে চরম বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এ নিয়ে প্রার্থীদের অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি প্রচারণা চালিয়ে নিজেদের আনুগত্যের বিষয়টি জানান দিচ্ছেন।
অন্যদিকে গত ৮/৯ মাস থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের খবরে পদ প্রার্থীরা কেন্দ্রে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। একাধিকবার কমিটি গঠনের খবর ছড়িয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তব রূপ নেয়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ওপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি রায়পুরে প্রকাশ্যে টেন্ডার বাক্স ছিনিয়ে ভাঙচুর করে যুবলীগ নেতাকর্মীরা। একই বছরের মার্চ মাসে রায়পুর পৌর এলাকায় বিরোধকৃত জমি দখল করে দিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠে যুবলীগ নেতাকমীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সংগঠনের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়। ওইসময় অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা পাটোয়ারী সভাপতি ও ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০০২ সালে সৈয়দ সাইফুল হাসান পলাশকে আহ্বায়ক ও সৈয়দ আহম্মদ পাটোয়ারীকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময়েও সম্মেলন না হওয়ায় ২০১২ সালে সৈয়দ আহম্মদ পাটোয়ারীকে আহ্বায়ক ও একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, অ্যাডভোকেট রহমত উল্যা বিপ্লবকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর গত ৩ বছরেও আর সম্মেলন হয়নি।
২০১২ সালে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা গতি পেলেও পরবর্তীতে আবারো স্থবিরতা নেমে আসে। জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে রামগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভায় সাত বছর ও কমলনগর উপজেলায় ২ বছর আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া রামগতি ও সদর উপজেলার পূর্ব ও পশ্চিমে প্রায় ৩ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলেও সম্মেলন হয়নি। এছাড়া সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়পুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি প্রায় দুই বছর আগে স্থগিত করা হয়।
বর্তমানে জেলা কমিটির সভাপতি পদে একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু ও নজরুল ইসলাম ভুলু, সাধারন সম্পাদক পদে রহমত উল্যা বিপ্লব, মুজিবুর রহমান মুরাদ, শেখ জামাল রিপন কেন্দ্রে লবিং করছেন।
প্রার্থীদের মধ্যে নজরুল ইসলাম ভুলু ও একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু’র অনুসারীরা গত ৮/৯ মাস থেকে ব্যানার-ফেস্টুন ও সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি কমিটি গঠন হচ্ছে, এমন খবরে এ দুই প্রার্থীর অনুসারীরা ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাসে প্রচারণা মুখর হয়।
জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা পাটোয়ারী জানান, দীর্ঘ সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগের যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি না হওয়ায় ও গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় এবং একটি মহল ব্যক্তিস্বার্থে সংগঠনকে ব্যবহার করায় যুবলীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। সংগঠনের গতি বৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
Prev Post
Next Post