ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া): ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক ছাত্রলীগ নেতার কাছে দুই শিক্ষকের অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়ার ছবি ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনার পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইবির ছাত্রলীগ নেতা সজিবের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষক মতিয়ার রহমান। তিনি বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এই ছাত্রলীগ নেতার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়।
অন্য ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সজিবের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সফলতার সাথে নাইন এমএম পিস্তল থেকে গুলি ছুঁড়ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষক আজিজুর রহমান মামুন। বর্তমানে তিনি বিসিএস ক্যাডার (ইকোনমি) পদে কর্মরত রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে পাস করা এই সাবেক ছাত্রনেতার বাড়ি গাজীপুর জেলায়। তিনি ৩২তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে প্রশিক্ষণরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ছবিগুলোতে সজিবের অস্ত্র বাহক ছাত্রলীগ কর্মী সালাউদ্দিনকেও দেখা যাচ্ছে। তিনি ইবির আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
সূত্র মতে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার নির্জন ঝোপঝাড়, বাগান, ক্ষেত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীর সংলগ্ন মফিজ লেকের নির্জন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতা সজিবের নিয়মিত অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলে।
ইবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক সজিবুল ইসলাম সজিবের বিরুদ্ধে এর আগে ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজী, আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে।
আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণের ছবির বিষয়ে জানতে চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক মতিয়ার রহমানকে ফোন করা হয়। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘কিসের ছবি?’
পরে ছবির বর্ণনা শোনার পর বলেন, ‘সেটিতো খেলনা অস্ত্র। ছোট বাচ্চারা এ ধরণের পিস্তল নিয়ে খেলাধুলা করে। আমিও সজিবের সাথে খেলনা পিস্তল দেখছিলাম। তখন আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো সাত জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।’
তবে বিসিএস ক্যাডার আজিজুল হক মামুনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে সাভার লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত।
অস্ত্র প্রশিক্ষক ছাত্রলীগ নেতা সজিব অবশ্য অভিযোগের বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের কাছে যদি অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার ছবি থাকে, তা হলে সে ব্যাপারে জানতে চাওয়ার কী আছে?’
জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা সজিব ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে টিন দিয়ে ঘেরা নির্মাণাধীন দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের অভ্যন্তরে এবং মেডিকেল সেন্টারের পেছনে লেকের ঝোঁপঝাড়ে প্রায়ই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। ক্লাস চলাকালে কিংবা বিকেলের নির্জন সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি ক্যাম্পাস ওপেন সিক্রেট বলে জানা গেছে। প্রায়ই এ সব স্থান থেকে গুলির শব্দ কানে ভেসে আসে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।