বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া ও দলটির সিনিয়র নেতাদের পেটানোর কথা বলে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
সরকার বিরোধী জোটের আন্দোলন-সংগ্রাম প্রতিরোধে রাজপথে ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত থাকলেও হঠাৎ করে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক চলে গেলেন নাজমুল আলম। গত বুধবার রাতে একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন তিনি। এসময় তার সঙ্গী হয়েছে আরও চার ছাত্রলীগ নেতা। এদের মধ্যে দু’জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ২ জন মহানগরের নেতা বলে জানা গেছে। এদিকে তার বিদেশ যাত্রা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হরতাল বিরোধী একটি মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকলেও সেক্রেটারির অনুপস্থিতি কর্মীদেরকে অনেকটা হতাশ করেছে। ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজাম্মান সোহাগ জানান, আজকের হরতাল বিরোধী মিছিলের নাজমুল ছিল না। চিকিৎসার জন্য সে মাঝে মাঝে ব্যাংকক যান।
বুধবার রাতে সে ব্যাংকক গেছে বলে তিনি জানেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামের মিরসরাই ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার না করলে কিংবা পরীক্ষার্থীরা কোনরকম হামলার শিকার হলে বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয় ঘেরাও করে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন নাজমুল। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ‘নেড়ি কুত্তার’ মতো পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের এ সাধারণ সম্পাদক। খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় রাজধানীর বকশিবাজার এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের উপর হামলার প্রক্রিয়ায় থাইল্যাল্ড বসে এ হুমকি দেন তিনি। তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাস নাজমুল বলেন, তিন দিনের মধ্যে ছবি বিশ্বাসের উপর হামলার জবাব দেবেন তিনি। ডাক্তার বলেছিলো আরও কয়টাদিন থাকতে আর থাকতে পারলামনা কুকুরদের ঘেউ ঘেউ এর কারণে। ন্যাড়ি কুত্তার মতো পিটামু বিএনপির বড় নেতাদের। নাজমুল সেই সময় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থান করছিলেন বলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে তার অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার মিছিল শেষে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।
সেখানে সভাপতি সোহাগ ছাড়াও অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেয়। এসময় কর্মীদের মধ্যে নাজমুলের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে কানাগুসা শোনা যায়। ঢাবি এফ রহমান হলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি-জামায়াত গত এক মাস ধরে টানা অবরোধ হরতাল দিয়ে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঢেলে দিচ্ছে। বিএনপির এ আন্দোলনে গত একমাসের মধ্যে এই প্রথম ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ কোন সমাবেশ করল। এ সমাবেশে সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতি আমাদের হতাশ করেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতি কর্মীদের হতাশ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বুধবার রাত থেকেই একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল নাজমুল দেশে নেই। বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রলীগের হরতাল বিরোধী মিছিল তার অনুপস্থিতির পর কর্মীরা নিশ্চিত হলেন সাধারণ সম্পাদক দেশে নেই। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমনিতেই চারদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে এমন গুঞ্জন ছড়াচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এই সময় তার দেশের বাইরে যাওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য তাদের।