নারায়নগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনা নিয়ে এখনো দেশজুড়ে বইছে নানা রকম কিচ্ছা কাহিনী। এ ঘটনা কুল কিনারা হতে না হতেই মঙ্গলবার দুর্বৃত্তদের হামলায় ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক (৫০) নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় একজন সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন আরো চারজন। দেশে একের পর এক এসব ঘটনা সামাল দিতে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে।
জনমনে বিপুল প্রভাব বিস্তার করে ৬৫ বছরের যে রাজনৈতিক দলটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সংগ্রামের দীর্ঘ পথরেখা তৈরি করেছে, আজ তার সামনে আলো অনেকটাই নিষ্প্রভ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, ক্ষমতাসীন দলটির অভিজ্ঞ মন্ত্রীসভা থাকা সত্বেও সকল ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হচ্ছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
এদিকে আগামি ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তৃণমূল নেতাকমীদের চাঙ্গা করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি জাঁকজমক ও বর্ণিলভাবে পালনের জন্য এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হচ্ছে।
এসব বিলবোর্ডে তুলে ধরা হচ্ছে প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। এ লক্ষে ২২ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি।
এদিকে মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ জানিয়েছেন, জন্মলগ্ন থেকে ভাষা-আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের বীরোচিত ভূমিকা ও গৌরবোজ্জ্বল অতীতের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দলের ভূমিকার কথা প্রচার করা হবে। এ নিয়ে আগামী বুধবার বিকেল ৫টায় সাজসজ্জা উপকমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, দেশ-বিদেশের নানা চাপ ও বিতর্ক সামলাতে অনেকটা কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতেও তৎপর রয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকলে বিএনপিসহ সরকার বিরোধীরা আন্দোলন জমাতে পারবে না। এ জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা হতাশা দূর করে তাদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখতে আগামী মাসেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আরেক দফা জেলা সফর এবং জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিবর্তনকে বলেন, “সব ভালো যার, শেষ ভালো তার। আগামী চার মাসের মধ্যে দৃশ্যপট বদলে যাবে। জনগণের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনগন চায় উন্নয়ন, দাম্ভিকতা ও অহমিকা ছেড়ে আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। জনগণের চোখ ও মনের ভাষা বুঝতে হবে। দুর্নীতিবাজ, জনবিচ্ছিন্ন কেউ আওয়ামী লীগে আর স্থান পাবে না।”
আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “সময় এসেছে আওয়ামী লীগকে দলীয় নেতাকর্মীদের ভাষা বুঝতে হবে। তৃণমুল থেকে আগামিতে কেন্দ্রে তাদের স্থান দিতে হবে। তাহলেই হাইব্রিড হিসেবে পরিচিত কেউ আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে পারবে না।”
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। এই দলে মতবিরোধ থাকতে পারে, আবার নেতৃত্বে প্রতিযোগিতাও আছে। সুতরাং কিছু সমস্যা থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠা আওয়ামী লীগের জন্যে কঠিন কিছু নয়।”
তিনি আরো বলেন, “তৃণমূল পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি সুপারিশমালা তৈরি করে তা দলীয় প্রধানের কাছে উপস্থাপন করা হবে।”