ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে তারেক রহমান মালয়েশিয়ায় যাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ভুল সংবাদ পরিবেশন করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন দিদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, তারেক রহমানের মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে কোনো গণমাধ্যমকে আমি কিছু জানাইনি।
এদিকে, তারেক জিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রসঙ্গে কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। মিডিয়ায় সঠিক তথ্য আসছে না।
উল্লেখ্য, কোকোকে দেখতে তারেক রহমান মালয়েশিয়া যাচ্ছেন বলে সংবাদ পরিবেশন করে অনলাইন গণমাধ্যম ও দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণগুলো। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংবাদটি সঠিক নয়। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
কোকোর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া
আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক এ মৃত্যুর খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। এখানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
সাংবাদিক জাহিদ নেওয়াজ খান লিখেছেন, কোকোর ছোটবেলার বন্ধুটির সঙ্গে আবার কথা হলো আজ।
একটি সূত্র থেকে বেলা ২টার কিছু পর আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর তাকে ফোন দেই।
জানি, দীর্ঘদিন কোকোর সঙ্গে যোগাযোগ নেই তার। এমনকি কোকো যখন দেশে ছিলেন, মা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে প্রবল ক্ষমতাবান; তখনো তাকে এড়িয়ে চলেছেন। তারপরও জানতাম, কোকোর মৃত্যু সংবাদটি সঠিক কি না; যে ক’জন মানুষ অনানুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেন, তাদের একজন তিনি। বন্ধুত্ব বিষয়টা আসলে ওইরকম। দূরে থেকেও বন্ধুর খবর রাখে বন্ধু।
হ্যাঁ। তিনি খবরটি নিশ্চিত করলেন।
যেমন তিনি শুনিয়েছিলেন, কোকোর বদলে যাওয়ার গল্প।
অনেক বছর আগে কোকো যখন অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তখন মাথায় হাত পড়েছিলো গুলশানের এক খুচরা জ্বালানি তেল বিক্রেতার। কারণ, কোকোর কাছে কয়েকশ টাকা পাওনা ছিলো তার। মোটর বাইকের জন্য কোকোকে কখনো কখনো বাকিতে তেল কিনতে হতো, সবসময় টাকা দিতেন না তার মা। সেই টাকা শোধ করেছিলেন কোকোর ওই বন্ধু।
তার আফসোস ছিলো, সাবেক রাষ্ট্রপতির ছেলে হওয়ার পরও যে ছেলেকে বাকিতে তেল কিনতে হতো, তিনি কিভাবে বদলে গেলেন ওইরকম! কিভাবে আসল বন্ধুদের হারিয়ে নতুন নতুন বন্ধু বানিয়েছিলেন কোকো, যারা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!
সাংবাদিক সালেহ বিপ্লব লিখেছেন, এই দেশে রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাসীনদের নষ্টামি দেখতে দেখতে আমার রুচিবোধ এবং মানসিকতাও পঙ্গু হয়ে গেছে। সবাইরে চোর মনে হয়। সবাইকে সন্দেহ করি। যেমন কোকোর মৃত্যুসংবাদ শুনে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেললাম। আছরের নামাজ পড়ে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত চেয়ে দোয়া করলাম। সন্তানহারা মায়ের জন্যে দোয়া করলাম। এরপর এককাপ চা খেয়ে ভাবতে বসলাম, কীভাবে কী হলো? কেন হলো? ভাইয়ের জানাযা পড়তে তারেক সাহেব নিশ্চয় দেশে আসবেন। তাকে ফিরিয়ে আনার সরকারি চেষ্টা সফল হয়নি, এমনই জেনেছি গণমাধ্যমে। এর মানে কী? বিদেশের হাসপাতালে বাংলাদেশের ভিআইপি মেরে ফেলার ঘটনা আগেও ঘটেছে। খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হত্যা করা হয়েছিলো, নিশ্চয় মনে আছে সবার। মনটা আসলেই পচে গেছে আমার।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান লিখেছেন, Death of Khaleda Zia’s son today (from natural causes) in Malaysia complicates an already complicated picture in relation to the current ‘crisis’ in the country. First, there is the issue of the arrest of Khaleda Zia, which by all reports is being actively considered in the government. The death of her son probably makes it unlikely to happen in the immediate days (assuming of course that it was to happen at all). Secondly, the government may be concerned that it could be a trigger for supporters to converge at the BNP office in Gulshan, where Khaleda is currently located, or later at the funeral. Thirdly, the government will have to make a decision about whether they will allow Khaleda to attend the funeral. Fourthly, Aratat Rahman Koko’s death will inevitably have a significant impact upon Zia herself, and her resolve to continue with the party’s ‘movement’; and finally, there is the matter about whether the party will call off the 36 hour strike it has just called to allow his body back into the country etc
সাংবাদিক জ.ই. মামুন লিখেছেন, আরাফাত রহমান কোকোর মা এবং পেট্রল বোমার আগুনে পুড়ে যাওয়া সন্তানদের মায়েদের প্রতি সমবেদনা জানাই। সন্তান হারানোর বেদনা যেন কোনো মাকে বইতে না হয়। আমীন!
সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মালয়েশিয়ায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সন্তানহারা মা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গভীর সমবেদনা।
সাংবাদিক আরাফাত সিদ্দিক লিখেছেন, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু নিয়ে তামাশা করছেন, আপনাদের মৃত্যু নিয়ে ওরা তামাশা করবে না কেনো? যে দেশে জনগণ যেমন, প্রাকৃতিকভাবে নেতারাও তেমন হয়…
আজহার হসাইন লিখেছেন, আপনিও আজ স্বাদ পেয়ে গেলেন, সন্তান হারানোর বেদনার…
বড় বড় ভূমিকম্পে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়, শোকটা হয়তো আপনার জন্যে অনেক বড়ই হলো, আপনি যদি একটু পরিবর্তিত হতেন ! দেশবাসী আপনার কাছেও মাতৃসুলভ সম্মান-ব্যবহার-আদর্শ আশা করে… (আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার শান্তি কামনা করছি)।
সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম মুকুল লিখেছেন, কিছু দুঃখজনক ঘটনার মাধ্যমেও অনেক সময় কিছু সমস্যা মিটে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যদি খালেদা জিয়ার অফিসে ছুটে যান, পাশে দাঁড়ান-
আর বেগম জিয়া যদি হরতাল অবরোধের ইতি টানেন-
দু’পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছান-
এতে সাধারণ মানুষ আশার আলো দেখতে পারে, বদলে যেতে পারে দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট। নির্ঝঞ্ঝাটে এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। আর আমাদের সন্তানরা মাথায় ঝুঁটি বেঁধে প্রাণোচ্ছল হাসিতে ছুটতে পারে স্কুলে- আমরা আতঙ্ক ছাড়াই উঠতে পারি পাবলিক বাসে- ছুটে যেতে পারি প্রিয় ভূখণ্ডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। নিঃশ্বাস নিতে পারি মন খুলে। হাঁসতে পারি, কাঁদতে পারি- খুনসুটি করতে পারি।
প্রিয় (!) রাজনীতিকরা দয়া করে এই সুযোগটি একবার দিন আপনাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকা ১৬ কোটি মানুষকে।
সম্পর্কিত খবর