ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সামনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতেই দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতারা।
বুধবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সভায় উপস্থিত সূত্র জানায়, সাড়ে তিন ঘণ্টব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সভায় খালেদা জিয়া কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি মতবিনিময় সভায় সাধারণ সদস্য থেকে শুরু করে সহসম্পাদক পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন ছাত্রদল নেতার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।
রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় সভা মূলতবি করা হয়। আগামী রোববার বিএনপি চেয়ারপারসন আবারও মতবিনিময় করবেন, সেখানে বাকিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।
সূত্র জানায়, ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ মতবিনিময় সভা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কতিপয় সিনিয়র নেতা তাদের পকেট কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তথাকথিত সিনিয়র জুনিয়রের ধুয়া তুলে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্রভাবিত করছিলেন।
কিন্তু ছাত্রনেতাদের বক্তব্য না শুনে কমিটি গঠন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে দলের একজন সিনিয়র নীতি নির্ধারকের এমন পরামর্শে খালেদা জিয়া সব পর্যায়ের ছাত্রনেতার সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নেন। কমিটি গঠনের আগে সবার বক্তব্য শোনার জন্যই এই মতবিনিময় সভার
আয়োজন করেন খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, এই সুযোগ পেয়ে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ সিনিয়র নেতাদের সামনেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নেতারা।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতা বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি অথর্ব, ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতার জন্য ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। মধুর ক্যান্টিনে যেতে পারেনি। এখন পর্যন্ত যেতে পারছে না। এদের ছাত্রদল করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। কমিটির পদ দেয়া নিয়েও অনেক বাণিজ্য হয়েছে।
বিশেষ করে যারা অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
একাধিক নেতা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি নেই দীর্ঘদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কমিটি একদিনও যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলন জমাতে না পারলে আন্দোলন কখনোই শতভাগ সফলতার মুখ দেখবে না।
নেতারা বলেন, এই কমিটি শতভাগ ব্যর্থ। এ্যানী ও টুকুকে এই মুহূর্তে যদি প্রশ্ন করা হয় ছাত্র দলের বেস্ট নেতৃত্ব কে? তাহলে তারা তাদের এলাকার বা অনুগত কারো কথা বলবেন। ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতা নাক গলালে ম্যাডাম আপনি কখনো ছাত্র দলকে সঠিকভাবে সুন্দর করে সাজাতে পারবেন না। তাই ছাত্র দলের কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনো নেতা যেন নাক গলানো সুযোগ না পায়।
ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতাই খালেদা জিয়াকে বলেন, বয়স্ক ও বিবাহিতদের বাদ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর কমিটি গঠন করলে ছাত্রদল আরো বেগবান
হবে। এছাড়া আঞ্চলিকতা পরিত্যাগ করার জন্যও খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান তারা। যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের হাতে ছাত্রদলের দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ করেন তারা।
এর মধ্যে জুয়েল নামে এক সদস্য বলেন, বিগত আন্দোলনে আউনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের কারণে আন্দোলনে ব্যত্যয় ঘটেছে। এছাড়া মিছিল মিটিং এর আগাম তথ্য পুলিশের কাছে চলে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। যা সংগঠনের ভেতর থেকইে কেউ দিয়েছে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
মতবিনিময় সভায় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানী, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বর্তমান সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব,সিনিয়র সহসভাপতি আবুল মনসুর খান দিপক, সহসভাপতি ওমর ফারুক স্বাধীন,যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির,এজমল হোসেন পাইলট, দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লয়ের সুপার ফাইপ কমিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার মতবিনিময়কে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়। সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর শাখার বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হন। এ সময় ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তার অনুসারীদের নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করেন।