আন্দোলনে আরও গতি আনার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। মার্চ পর্যন্ত ‘টার্গেট’ থাকলেও চলতি মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যেই একটি ফল আশা করছেন দলের নেতারা।
এই লক্ষ্যে দলের চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও আন্দোলনের যাবতীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ‘অ্যাপস’ ব্যবহার করে যোগাযোগ এবং সার্বিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।
বিএনপি সূত্র জানায়, দলের কিছু সুবিধাবাদী নেতাদের কারণে ২০১২ সালের ১২ মার্চ ‘চল চল ঢাকা চল’, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ও ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ এবং দশম সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে ব্যর্থ হয় বিএনপির নেতৃত্বাধানী ২০ দলীয় জোট। এ শিক্ষা থেকে খালেদা জিয়া ১ বছর ধরে দলের শীর্ষ ও বিশ্বস্ত নেতাদের নিয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে কয়েক স্তরের নেতৃত্ব। আন্দোলনের পরিকল্পনায়ও রয়েছে কয়েকটি ধাপ। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কেউ গ্রেফতার বা অসুস্থ হলে আপনা আপনি পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তার স্থান পূরণ করবেন। কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করতেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে কিভাবে কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন করা হবে সেটিও চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। অতি গোপন রাখা হয়েছে এসব পরিকল্পনা। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অধিকাংশ নেতাই জানেন না এসব পরিকল্পনা।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ করে আন্দোলন কর্মসূচি নির্ধারণ করতেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য পেয়ে সরকার গত ১৭ জানুয়ারি ইন্টারনেটে যোগাযোগের মাধ্যম ‘ভাইবার’ ও ‘ট্যাঙ্গো’ বন্ধ করে দেয়। কয়েকদিন পর অবশ্য তা চালু করা হয়। কিন্তু গত শনিবার মধ্যরাতে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের ইন্টারনেট, ফ্যাক্স, টেলিফোন, টিভি কেবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর তিনি কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় দু’জনের মধ্যে স্বাভাবিক কথাবার্তা ছাড়া রাজনৈতিক আলাপ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গত সোমবার মন্ত্রিসভায় খালেদা জিয়ার ৪ বছর আগের ফোনালাপ প্রকাশ করায় আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে দু’জনের মধ্যে আলাপ বন্ধ রয়েছে। ফলে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণসহ সার্বিক দায়িত্ব এখন তারেক রহমান পালন করছেন। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হতে পারেনÑ এ আশঙ্কা থেকেও এ কৌশল নিয়েছে দলটি।
চলমান আন্দোলন আরও বেগবান ও শক্তিশালী করার জন্য তিন ধাপে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মার্চ মাস পর্যন্ত চলতে পারে। খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বালুর ট্রাক ও অতিরিক্ত পুলিশ প্রত্যাহার এবং গত শনিবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর পুনঃসংযোগ আন্দোলনে অনড় এবং দলের কূটনৈতিক তৎপরতার ফসল বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ভাইয়ার (তারেক রহমান) সঙ্গে দু’জনের রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দোলন গতিশীল করতে তিনি তরুণ কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারাই বর্তমানে মাঠে আন্দোলন পরিচালনা করছেন। তারেক রহমানই এখন কর্মসূচি প্রণয়নসহ আন্দোলনকে আরও চাঙ্গা করতে নিয়মিত তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। ম্যাডাম গ্রেফতার হলে তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। তারেক রহমান দেশে আসার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। সরকার পদত্যাগ করলেই তিনি দেশে আসবেন এমন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণতন্ত্র মুক্তি’ আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ। বিরোধী দলের কার্যালয় অবরুদ্ধ। শেখ হাসিনার প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের কারণে এদেশের জনগণ দুঃশাসনের কবলে পড়েছে এবং গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম চলবে। পৈশাচিক কায়দায় জনগণের ন্যায্য আন্দোলন দমানোর অপচেষ্টা বুমেরাং হতে বাধ্য। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছেন, জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের সংগ্রাম এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও তিনি প্রস্তুত।