বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব কে হচ্ছেন এ নিয়ে দলটির ভেতরে ও বাইরে চলছে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। একটি সূত্র মানবকণ্ঠকে জানিয়েছে, দলের মহাসচিব পদ নিয়ে দলের ভেতরেও বিকল্প চিন্তাভাবনা চলছে। জানা গেছে, বিএনপি হাইকমান্ডের কাছে দলের কয়েক সিনিয়র নেতা মৌখিকভাবে ভারতের কংগ্রেসের মতো মহাসচিবের পদ সংখ্যা বাড়ানো যায় কিনা তা ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য প্রয়োজনে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঁচজন মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা মানবকণ্ঠকে জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির এমন একজন মহাসচিব প্রয়োজন যার তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলের মধ্যে নিরঙ্কুশ কমান্ডিং পাওয়ার রয়েছে। যিনি দলকে সাংগঠনিকভাবে নেতৃত্ব দেবেন। আবার নীতি নির্ধারণেও ভূমিকা রাখবেন। আবার আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দলের মুখপাত্র হিসেবেও একজনের দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করা প্রয়োজন। তার পদ মর্যাদাও মহাসচিবের মর্যাদাই থাকবে।
জানা গেছে, সিনিয়র নেতাদের এমন প্রস্তাব বিএনপির হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এখনো সুনির্দিষ্টভাবে তারিখ নির্ধারিত না হলেও ১৯ জানুয়ারি কাউন্সিলের জন্য জায়গা বরাদ্দ চেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ২৫ মার্চের আগেই বিএনপি তাদের ষষ্ঠ কাউন্সিল করবে। কাউন্সিলকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিএনপির মধ্যে পদপদবির জন্য লবিং-গ্রুপিং শুরু হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া আবারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। তারেক রহমানও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদেই বহাল থাকছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহল দলের মহাসচিবসহ অন্যান্য পদ নিয়ে।
নতুন পরিকল্পনা অনুয়াযী গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিএনপির মহাসচিব পদে তরিকুল ইসলাম ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেখা যেতে পারে। তবে কাউন্সিলকে সামনে রেখে বিএনপির মহাসচিব পদে স্থায়ী কমিটির সদস্য এম তরিকুল ইসলাম, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আলোচনায় রয়েছেন। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের ওপর কমান্ডিং ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দলের বিপদের সময়ে তিনি তার সেই যোগ্যতাও প্রমাণ করেছেন। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকলেও তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান এই নেতা দলের বাইরেও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। আবার বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মার্জিত রুচি-ভাষার জন্য সবার কাছেই পছন্দনীয়। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দলের দায়িত্ব পালনকালে দীর্ঘদিন তিনি জেল খেটেছেন। অর্ধশতাধিক মামলার আসামি। সদালাপি ফখরুল দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও গ্রহণযোগ্য। প্রাণবন্ত কথাবার্তা মানুষ পছন্দ করে। রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট প্রজ্ঞাবান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের মঙ্গলের জন্য বিভিন্ন পরার্মশ আসতেই পারে। সব পরামর্শ যাচাই-বাচাই করে দলের কাউন্সিলের দিনে কাউন্সিলরদের মতামত শুনে মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতা নির্বাচন করা হবে। দলকে শক্তিশালী করার জন্য ইতিবাচক কাজের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধন করা যেতেই পারে।
২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর প্রায় সাত বছর কেটে গেলেও দলটি তাদের কাউন্সিল করতে পারেনি। রাজনৈতিক নানা টানাপড়েনের মধ্যে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সর্বশেষ কাউন্সিলে বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ সৃষ্টি করেছিল। যেখানে কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছাড়াও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিযুক্ত করেছিলেন খালেদা জিয়া। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরপর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বিভিন্ন সময় বিএনপি ও এর বাইরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দীর্ঘদিন ধরে থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছে দলটি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়ে এত বড় একটি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এর ফলে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।