আসলে এরশাদ কি পাগল!

0

arsad.thumbnailমেজর মো. আখতারুজ্জামান (অব.) : মঙ্গলবার দিন ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ দুপুর আড়াইটায় মতিঝিলের হেলভিশিয়াতে একা বসে ফিস ফিলেট খাচ্ছিলাম। এমন সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জেনারেল মাহাবুব স্যারের একটি টেলিফোন পেলাম। সারাদেশে বিএনপির ডাকে অবরোধ চলছে। বিএনপির সব নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে। প্রায় সবার টেলিফোনই বন্ধ, বিশেষ করে বিএনপির সকল উচ্চ পদের নেতাদের। টেলিফোন করে প্রথমে তিনি আমার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। পরে তিনি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে ও কারো কোন কিছু ভুল হলে তার মুখের ওপর সে ভুল ধরিয়ে দিতে কখনই ভুল করেন না।

গত ১ ডিসেম্বর ২০১৩ রাতে এসএ টিভির একটি আলোচনার অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বক্তব্য নিয়ে একটি খবর ছাপা হয় সেই খবরে উল্লিখিত জেনারেল মাহবুব ও সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়া সম্বন্ধে আমার একটি বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করেন। আমাকে কোন জবাব দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে তিনি আরও বললেন মান্নান ভূইয়া মারা গেছেন তাই তিনি তার অবস্থানের জবাব দিতে পারবেন না।  কিন্তু তার সমন্ধে যা বলা হয়েছে তিনি অবশ্যই তার প্রতিবাদ করবেন। তার জবাবে আমি বললাম, পত্রিকায় কি লেখা হয়েছে তা আমি দেখিনি তবে তারা যাই লিখে থাকুক না কেন, এটি যে স্যার আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে এ জন্যই আমি খুব খুশী। তখন তিনি বললেন, “এই বিষয়টি আমি অন্ততঃ তোমার কাছ থেকে আশা করিনি”।

আমি আবারও বিনয়ের সঙ্গে বললাম, “গত ৫ বছর ধরে আপনি স্থায়ী কমিটির সদস্য, কই এক দিন তো আমার কোন খোঁজ নেন নাই।” আমার এ কথার জবাব না দিয়ে তিনি পত্রিকা থেকে কি লেখা হয়েছে তা পড়ে শুনাতে থাকলেন যে ওয়ান এলিভেনের সময় যারা সংস্কারপন্থী  হিসাবে কাজ করেছে প্রকান্তরে তারা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। মেজর আখতার বললেন তেমনি একজন লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান কীভাবে দলের স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পেলেন। সংস্কারপন্থী  হওয়াতেই তো মান্নান ভূইয়া বহিস্কৃত হয়ে মারা গেলেন।  উনার পড়া শেষ হওয়ার পরে  বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাইলাম এই বক্তব্যে কি কোন ভুল আছে ? তখন তিনি অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে বললেন তিনি আমার কাছ থেকে এই বক্তব্য আশা করেন না – বলে টেলিফোন রেখে দিলেন।

দুপুরের  খাবার খাচ্ছিলাম। জেনরেল স্যারের আচরণ দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। তিনি একজন সাবেক সেনা প্রধান এবং বর্তমানে বিএনপির মতো একটি বিশাল দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য। আমি যদি কোন কিছু ভুল করে বলে থাকি তাহলে তিনি ধমক দিতে বা শাসাতে পারতেন। কই আমি তো অতীতে বহুবার দল, ম্যাডাম, তারেক রহমান, দলের গুলশান অফিস নিয়ে অনেক কঠিন কঠিন কথা বলেছি, তখন তো তিনি কোন রকম হতাশাও ব্যক্ত করেন নাই। গত কোরবানী ঈদের  আগে তার বাসায় দেখা করে তারেক রহমানের প্রতি তার অবস্থান পরিবর্তন করে তারেক রহমানের পক্ষে আসার জন্য বলেছিলাম। কই তখন তো তিনি আমার কাছ থেকে এই বক্তব্য  আশা করেন নাই বলে আশাহত হন নাই। সে দিন প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা এবং যৌক্তিকতা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি তখন আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তারেক রহমান দলে ফিরে এলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিবেন। জানি না এটি তার শেষ কথা বা মনের কথা ছিল  কি না !

গত বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০১৩ বিকালে আমি টেলিফোনে স্যারকে আন্দোলনের বিরতি না দিয়ে লাগাতার করা উচিত্ বলে অনুরোধ করলে তিনি বলেছিলেন আন্দোলন করে কি হবে বলে উল্টো জবাব দিলেন পরে আমার মতামত জেনে রাখলেন বলে টেলিফোন রেখে দিলেন। আমার মতামতে তিনি খুব উত্সাহিত ছিলেন বলে আমার মনে  হল না। এছাড়াও উনার সঙ্গে আমার পূর্বে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে এবং প্রতিবারই তিনি আমার অতিতের বক্তব্য ও অবস্থানকে উৎসাহিত করেছেন। কখনই তিনি আমার কোন বক্তব্যে হতাশ হন নাই বলেই জানতাম। এবারও তো  হতাশ হওয়ার কথা নয়। আমি তো কোন অসত্য কথা এবং গোপনেও বলি নাই। যদি  আমার কথা অসত্য হতো তাহলে তিনি তো আমার উপর রাগ  করতে পারতেন। আমাকে ধমকাতে বা শাসাতে পারতেন, বেশী রাগান্বিত হলে সরকারের সঙ্গে উনার  যে সু-সম্পর্ক তাতে তিনি আমাকে সরকার দিয়ে শায়েসত্মা করাতে পারতেন। অতীতে তিনি ড়্গমতাশীন সেনাপ্রধানকে গ্রেফতার করার মতো ক্ষমতা ও সাহস দেখিয়েছেন। অথচ তিনি আমার মতো একটি চুনুপুটি মেজরের বক্তব্যে হতাশা ব্যক্ত করলেন মাত্র। তিনি এক সময় দুই বৃহত্ দলের দুই জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মাইনাস করে দেওয়ার জন্য অগ্রসেনানায়ক হিসাবে ঝাপিয়ে পড়তে পেরেছিলেন এবং উত্তরাধিকার রাজনীতির মূল উত্পাঠন করে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার জন্য জাতির কাছে  আহবান জানাতে পেরেছিলেন সেই মহাপরাক্রমশালী  সাবেক সমরনায়ক বর্তমানেও  বিশাল ড়্গমতাশালী রাজনীতিবিদ, দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অতি আস্থাভাজন, নিরাপত্তা রড়্গক ও চৈনিক স্বার্থের ধারক কিনা আমার মতো একজন খেটে খাওয়া ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মীর কথায় হতাশা ব্যক্ত করলেন – ভাবতে কেমন যেন ভয় হচ্ছে। এ যেন কোনও অশনি সংকেত !  কিসের যেন পদধ্বনি শুনা যাচ্ছে ! তাই তিনি এই মুহূর্তে চুনুপুটি মেরে রাঘব বোয়ালকে  সাবধান করবেন না বলে কেন জানি আমার মনে হয়েছে।

আমার ঊর্ধ্বতন জেনারেল আমাকে অনেক আপন মনে করে হতাশার মাধ্যমে আমাকে  যেন  বলে দিতে চাইলেন যে আমরা কেন পরস্পর বিরোধী কথা বলবো। আমরাতো ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আগামীতেতো আমাদের দিন আসছে। “আর কটা দিন সবুর কর, রসুন বুনেছি” এই কথাটিই যেন তিনি “আমার কাছ থেকে আশা করেনি ” বলে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন । শ্রদ্ধাভাজন জেনারেল তার হতাশার মাধ্যমে হয়তো আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং অচিরেই  আমার দুঃখ দূর হয়ে যাবে বলে হতাশা ব্যক্ত করার মাধ্যমে আমাকে সান্ত্বনা দিতে চেয়েছিলেন!

আমার মাথা মোটা বলেই হয়তো আমি তার হতাশার কারণ বুঝতে পারিনি। হয়তো আমার মত অনেকে বা আমাদের বড় বড় নেতারা এমন কি শীর্ষ নেতারাও বোঝেন না!  যেমন অনেকে বুঝি না বা বুঝতে চাই না কেন বা কার স্বার্থে  এরশাদ বার বার পাল্টী  খায়। তা হলে এরশাদ কি পাগল! আমরাতো তাও বুঝি না!

লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য

বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More