জামায়াতের নীরবতা : পর্যবেক্ষণ না কৌশল!

0

jamatড. সরদার এম. আনিছুর রহমান:: এ কথা আমাদের সবারই জানা- বর্তমানে দেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল রয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি বহু পুরানো দল। সেই ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট দলটির জন্ম পাকিস্তানের লাহোরে। এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদূদী, বাংলাদেশ তথা নিখিল পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক বহুল আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি। প্রতিষ্ঠার পর প্রায় পৌনে শতবর্ষ কেটে গেলেও দলটি মাত্র একবার অন্যদের গড়া সরকারের মন্ত্রীসভায় দুইজন নেতা যোগদান ছাড়া আর কখনো ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা এর কাছাকাছিও যেতে পারেনি। এছাড়া দেশের জনগণের সমর্থনও সেভাবে আদায় করতে পারেনি।

এরপরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বদা বড় ফ্যাক্টর হিসেবেই কাজ করেছে এই দলটি। কেননা, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতার কারণে দেশ স্বাধীনের পর মাত্র কয়েক বছর বিরতিতে প্রায় অধিকাংশ সময় জুড়েই জাতীয় সংসদে কমবেশী জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছে তারা। সংসদে যেমন তেমন মাঠে-ময়দানে আন্দোলন সংগ্রামে সর্বদাই বড় ফ্যাক্টর তথা বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে তারা।আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলই তাদের সাথে ঘাটবেঁধে একসাথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে।যা কোনোভাবেই অস্বীকার যাবে না।

কখনো কখনো এই জামায়াতই সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কিংবা সরকার পতনে বড় নিয়ামক হিসেবেও অন্যদের কাছে দেখা দিয়েছে। মাঠের রাজনীতিতেও খুবই সুংগঠিত একটি রাজনৈতিক শক্তি, যাদের সারা দেশে রয়েছে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থক।জামায়াত শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে শোনা কথা জানিনা কতটা সত্য, এই সংগঠনটির মতো দল-আদর্শের প্রতি এতটা আনুগত্যশীল জনশক্তি নাকি বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।

বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন এবং সবশেষ গেল উপজেলা নির্বাচনের চিত্র বিশ্লেষণেও দেখা যায়, দেশের ১৭-১৮ কোটি জনগোষ্ঠির প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ কম-বেশি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অথবা দলটিকে সাহায্য ও সমর্থন করে থাকে। শত জুলুম-নির্যাতনেও দমাতে পারেনি তাদের। কোনো না কোনভাবে তারা সক্রিয় থেকেছে। সেদিক থেকে তাদের শক্তি ও সক্রিয়তায় দলটি প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ ইতিহাসে বর্তমান সময়ের মতো এতটা সুবিস্তৃত এবং সংগঠিত কোনোকালেই ছিল বলে আমার মনে হয় না। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এর বিশাল সমর্থক। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তাদের প্রভাব একেবারেই কম বলা যাবে না। ফলে এই দলটিকে কোনোভাবেই একসাইডে রেখে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি অন্যদলগুলো। এ কারণে যখন যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহার করে পরবর্তীতে ছুড়ে মেরেছে। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি যে তাদের কখনো বুকে টেনে নিবে না এটা জেনেও তারা নিজেরা বারবার ব্যবহৃত হয়েছে দাবার গুটি হিসেবে। এমনটিই লক্ষ্যনীয় বিগত দিনের রাজনীতির চিত্র থেকে। এখনও তাই।

বলা যায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমল থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালোই সুখে ছিল এই দলটি ও তাদের নেতাকর্মিরা। এমন কি স্বৈরশাসক এরশাদ ও বিগত ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগের আমলেও তারা বেশ স্বাচ্ছন্দেই রাজনীতি করেছে। কিন্তু দু:সময় নেমে আসে মূলত: ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী ইশতিহারে মহাজোট ৭১’র যুদ্ধাপরোধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর ক্ষমতায় এসে মহাজোট সরকার ঠিকই ২০১০ সালের মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে।

এরপরও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নেয়নি দলটি। তাদের ধারণা ছিল, বিচার প্রক্রিয়া একটা পর্যায়ে যেতে না যেতেই এরই মধ্যে তারা সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হবে। কিংবা মহাজোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সে ধারণা যে ভুল ছিল তা ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে। ইতোমধ্যেই দলটির আধ্যাত্মিক গুরু সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হয়ে রায় কার্যকরের আগেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন, বিচার প্রক্রিয়া শেষে দলের দুই শীর্ষ নেতার ফাসিঁ কার্যকর এবং দলের আমীর-সেক্রেটারী জেনারেলসহ অধিকাংশ শীর্ষ নেতার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।পর্যায়ক্রমে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে অন্যান্য নেতাদেরও।

শুধু তাই নয়, দলটির নিবন্ধনও ইতোমধ্যে সরকার কৌশলী প্রক্রিয়ায় (হাইকোর্টের কোর্টের রায়ে) বাতিল করে দিয়েছে। এখন আপিল বিভাগে চূড়ান্ত হলেই সরকার দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। শুধু আভ্যন্তনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দলটি চাপের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক শুনানিতে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে বোকো হারামের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অবশ্য জামায়াত এর আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ফলে সবমিলেই আজ বড়ই দু:সময় পার করছে দলটি ও এর নেতারা। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গেল পৌনে শত বছরে দলটি এই সময়ের ন্যায় ইতোপূর্বে আর কখনো এতটা সঙ্কটে পড়েছে বলে আমার জানা নেই। দমন-নিপীড়ন আর নির্যাতনে এত নেতাকর্মিকেও আর কখনো হারাতে হয়নি তাদের।দলটির নেতাদের ভাষ্য মতে, গেল ৬ বছরে তারা প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মিকে হারিয়েছেন, অসংখ্য নেতাকর্মি আহত-পঙ্গু হয়েছে আবার হাজার হাজার নেতাকর্মি জেলজুলুম ভোগ করেছে। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া দলটি গেল ৫ বছর ধরেই প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। সরকার ক্রমেই তাদের একঘরে ফেলেছে। এতে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মিদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টিও করেছে।

এতো শক্তি সামর্থ থাকার পরও কেন আজ দলটির করুণ পরিণতি সেটি নিয়ে ভাবনা যেমন দলের ভেতরে রয়েছে তেমনি বাইরেও রয়েছে। এতে বিগত ৬ বছরে খোদ দলের বেতর থেকেই দলীয় সংস্কারের দাবি উঠে একাধিকবার। এমন কি কারাবন্দী জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানও বর্তমান পরিস্থিতিতে দলকে সংস্কারের বেশ কয়টি প্রস্তাব রেখে জেল থেকে দলের নেতাকর্মিদের কাছে খোলা চিঠি লেখেন। দলটির নামে বাংলাদেশ শব্দটি শেষ থেকে প্রথমে আনা এবং গঠনতন্ত্রে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে নিবন্ধন রক্ষা করা ছাড়া তেমন কিছুই সংস্কার হয়নি। আমলে নেয়া হয় নেতাকর্মিদের সংস্কারের কথা।

এই পরিস্থিতিতে দলের কট্টরপন্থীরা হয়তো বরাবরের মতোই বলবেন, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের পরীক্ষা, ইসলামী আন্দোলনে এ ধরনের পরীক্ষা আসবেই। দলের কট্টপন্থীদের এমন মত থাকলেও যারা দলীয় গন্ডির বাইরেও প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় দল ও দেশের রাজণীতি নিয়ে একটু অন্যভাবে ভাবেন এমন তরুণ নেতারা বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দলীয় ব্যর্থতা এবং নেতাদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণকেই দায়ি বলে মনে করেন। তাদের মতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে জামায়াতের অবস্থান যৌক্তিক হলেও তা যে ভুল ছিল পরবর্তীতে প্রায় সবা প্রবীণ নেতারাই দলের অভ্যন্তরে স্বীকার করেন। তবে স্বাধীনতার ৪৪ বছরে দলীয়ভাবে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করে নিয়ে নতুনভাবে রাজনীতি করার এবং জনগণের কাছে পৌঁছার যে অপার সুযোগ ছিল সেটা নেতারা করতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছেন।

কেননা, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছুই নেই, একসময় এই জামায়াতই আওয়ামী লীগের সাথে আটবেঁধে তৎকালীন বিঁএনপি বিরোধী আন্দোলন করেছে। পরবর্তীতে আবার বিএনপির সাথে আটবেঁধে আওয়ামী সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে। এরপরও কাদের মোল্লার রায় কার্যকরের আগে এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতার একটা প্রস্তাব থাকলেও সে সুযোগ নেয়নি দলটি, এটাও দলের একটা বড় ধরনের ভুল বলেই মনে করে দলের ভেতরকার একাংশ। এরফলে যা হবার তাই হচ্ছে।

ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ হলে কি করবে জামায়াত এমন মুখরোচক আলোচনা চা-পানের দোকান থেকে শুরু করে ছোট বড় হোটেলগুলোতে। যাত্রীবাহী বাসেও জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা কম হয় না। অনেকটা কোণঠাসা জামায়াত স্বাধীনতার স্বপক্ষের ক্ষমতাসীন সরকারের কৌশলের কাছে শেষ পর্যায়ে এসে আদৌ কুলিয়ে উঠতে পারবে কিনা এ নিয়ে আলোচনার কমতি নেই।

অবশ্য এর আগে শোনা গেছে, নিষিদ্ধ হলেই নতুন নামে দল গঠন করবে জামায়াত। দলীয় কাঠামো, গঠনতন্ত্র, নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে দলটি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল হিসেবে জামায়াতের বর্তমান যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের মূল নেতৃত্ব থেকে বাদ দিয়ে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হবে নতুন দলে। প্রবীণ এসব নেতা পেছন থেকে নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করলেও মূলত তরুণ নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে সব কমিটি। জন্মতারিখ দেখে দেখে ১৯৭১ সালে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো জামায়াত নেতাকেই ওই কমিটিতে রাখা হবে না। নিষিদ্ধ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের মতামত নিয়ে নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। জামায়াতের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেলেও কোনো নেতাই এখনো প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কোন কিছু বলতে নারাজ।

প্রসঙ্গত, গেল বছর ১ আগস্ট হাইকোর্টের একটি রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন থেকে দলটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সংসদকে জানায় গেল সোমবার। সর্বশেষ গেল ২৫ মার্চ যুদ্ধাপরাধের সাতটি অভিযোগে জামায়াত নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তখন দলটিকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে এমন ঘোষণা দিয়েছলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।

২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সরকার জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরিকল্পনা করছে।

২৩ মার্চ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, জামায়াতের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতের কার্যক্রম শেষ হলেই সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ২৬ মে মঙ্গলবার বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আদালতের মামলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে।

ঘোরেফিরে জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। সোমবার জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দ্রুত শোনানির আবেদন করার জন্য বাদীপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে বলে সোমবার জাতীয় সংসদকে এ তথ্য দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার সচিব সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য কোনো গেজেট প্রকাশের দরকার নেই। অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশেই দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তবে হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দলটি। এতে তারা জয়ী হলে আবার নিবন্ধন দেওয়া হবে।

সরকারপক্ষের লোকজন যাই বলুক না কেন, তবে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অভিমত, আইনগতভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। নেতাদের ভাষ্য হলো, এরপরও যদি সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ করে, তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় তখনই ঠিক করা হবে। নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই দলকে নিজেরা নিষিদ্ধ করতে চায় না। সরকার নিষিদ্ধ করলে তখন সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াত।

প্রসঙ্গত, ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। প্রথম নিষিদ্ধ হয় ১৯৫৯ সালের ৮ অক্টোবর। ওই সময় আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করলে জামায়াতসহ সব দলের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬২ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত এ ফরমান বলবৎ ছিল। এরপর ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারি আইয়ুব খান জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। সে বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের রায়ে জামায়াত আবার প্রকাশ্যে রাজনীতি করার অধিকার পায়। সর্বশেষ ১৯৭২ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়।

ফলে বলা যায়- এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়টি জামায়াতে ইসলামীর জন্য নতুন নয়, এর আগেও তারা এ ধরনের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে ফের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেদিক বিবেচনায় এবার দেখার বিষয় বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোন পথে হাটেঁ জামায়াত। তবে আগামী দিনে চলার পথ যে তাদের জন্য মসৃণ হবে না সেটা সহজেই অনুমেয়। কেননা, সরকার যেভাবে আটঘাট বেঁধে জামায়াত-শিবির উৎখাতে নেমেছে তাতে সহজেই সঙ্কট কাটিয়ে উঠা তাদের জন্য বেশ কঠিন হব। তবে তাই বলে যে সরকার জামায়াত-শিবির নির্মূলে শতভাগ সফল হবে সেটাও আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। ফলে আমাদেরকে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে সরকার ও জামায়াতে ইসলামী কি করে তা দেখার জন্য।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক। ই-মেইল:sarderanis@gmail.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More