জাসদ সমাচার এবং ‘র’ এর নয়া প্রেসক্রিপশন

0

[ads2]শেখ মহিউদ্দিন আহমেদঃ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে ‘র’ এর হাতে গড়া বিশেষ গ্রুপের দ্বারা বাংলাদেশ আমলে গড়ে তোলা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের দল ‘জাসদ’ এর lpb-sheikhআমলনামা নিয়ে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে উঠেছে। এমনভাবে এই সরগরম চলছে যেন বাংলাদেশে আর কোন সমস্যা নেই এবং শেখ মুজিবর রহমানের শাসনামলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধাচরন সশস্ত্রভাবে করেছিল বলে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দলও এখন তাদের উষ্মা প্রদর্শন করা শুরু করেছে জাসদের বিরুদ্ধে যা প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যখন বাংলাদেশে পাকিস্তানের মত জঙ্গির উত্থান চলছে যখন জঙ্গির নামে হাজার হাজার নিরীহ নাগরিকদের ধরপাকড়ে হয়রানি, নির্যাতন ও বানিজ্য চলছে তখন জাসদ নিয়ে এই নয়া খেলা কেন এবং বিএনপিই বা কোন লাভে এই খেলায় জড়িয়ে যাচ্ছে। তবে কি জাসদের ঐক্য আসন্ন একটি বৃহৎ বিরোধী দল বানানোর জন্য? 

জাসদের জন্ম ইতিহাস নিয়ে কোন কারুর কোন সংশয় নেই যে এই দলটি ‘র’ এর জেনারেল উবান এর হাতে গড়া লোকজন নিয়ে এমন সময়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় যখন দেশপ্রেমিক বিপ্লবী সিরাজ সিকদার ও অন্যান্য বিপ্লবী দলের হাতে আওয়ামী স্বৈর শাসনের পতনের দিনগোনা শুরু হয়ে যায়। ‘র’ এর হাতে সৃষ্টি হয়ে রুশ-ভারতের দালালদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে সমাজ বিপ্লবের ডাক দিয়ে হটকারী সশস্ত্র কর্মকাণ্ড শুরু করে দলটি ও দলের সামরিক শাখা গণবাহিনী। ‘র’ এর এই প্রেসক্রিপশনের লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল বিপ্লবের আকাংখা নিয়ে উন্মুখ ভারত বিরোধী লাখো নতুন প্রজন্মের তরুন যুবকদের ধংস করে দেয়া। অন্যদিকে নিশ্চিত পতনের পরেও যেন ভারতের কর্তৃত্ব বাংলাদেশ থেকে শেষ হয়ে না যায়।[ads2]

এরই মধ্যে দেশপ্রেমিক সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টিতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দেয়া হয়। কর্নেল জিয়াউদ্দিন ও কামাল হায়দার ওরফে প্রবীর নিয়োগী এদের মধ্যে অন্যতম। এদের হাতে পার্টি কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এর বর্ণনা আজকে নয়; তবে এই দুইজনের পরিনতি উল্লেখ করলেই এর প্রমান মিলবে। প্রবীর নিয়োগী সিরাজ সিকদারের হত্যাকাণ্ডের পরে দলের মধ্যে প্রচুর নেতা কর্মী হত্যা করে ব্যক্তি জীবনে এসে ১৯৯৬ পরবর্তী আওয়ামী আমলে সহকারী এটর্নি জেনারেল হন। আর কর্নেল জিয়াউদ্দিন একই কর্ম করে অর্থাৎ অসংখ্য সর্বহারা কর্মী হত্যা করে ব্যক্তি জীবনে ফিরে এসে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহন ও পেনশন লাভ করেন বিএনপি আমলে। এসময় জিয়াউদ্দিন সমান র‍্যাংক ও স্ট্যাটাসে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হন।

উপরের এই উদাহরন দিলাম পাঠকদের বোঝানোর জন্য যে কিভাবে ‘র’ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো কাজ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। জাসদের মধ্যেও একই কাজ ছিল। গণবাহিনীর অধীনেও ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ গড়ে ওঠে সশস্ত্র বাহিনী ধংস করতে। সেনা অফিসারদের হত্যার উদ্দেশ্যে এটি করা হয়, জেনারেল জিয়াকে ঘুঁটি বানানোর চেষ্টা বিফল হলে তাহের বধ কাব্য রচিত হয়। এই বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার চেতনাই কাজ করে পিলখানায় সেনা অফিসারদের হত্যাযজ্ঞে। একই ফর্মুলা কাজে লাগানো হয় সেই ‘র’ এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী।[ads2]

সাম্প্রতিককালে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা তাদের কাজ আবারো শুরু করেছে এই রিপোর্ট শেখনিউজ ডট কমে আগেই বেরিয়েছে। মিসেস হাসিনা ওয়াজেদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এবং সেনা প্রধান সহ অনেক জিওসি এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু সৈনিক সংস্থার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা। এমনকি কুমিল্লার নাট্যকর্মী তনু হত্যার বিষয়েও সেনাবাহিনী কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না সৈনিকদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা ও কম্যান্ড নষ্টের সম্ভাব্য আশংকায়। শাহবাগিদের দিয়ে যখন সেনাবাহিনী বিরোধী আন্দোলন জোরালো করা হয় তখনি সেনা কম্যান্ড গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে যায়, কিন্তু সৈনিক সংস্থার লিফলেটের ও উড়ো চিঠির কারনে তা থমকে যায়। তবে কঠোর নিরাপত্তা অবস্থান নেয়ায় রাজনৈতিক বা নাশকতার কোন ঘটনা ঘটেনি।

কিন্তু সামপ্রতিককালের জঙ্গি ঘটনাগুলো নিয়ে নতুন অংক শুরু হয়। পাকিস্তানে যেমন ‘র’ এর টাকায় তালেবান সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশেও তেমনি চলছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ভারত থেকেও লোকজন এসেছিল বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল, যেমন জেএমবি সৃষ্টিও হয়েছিল ‘র’ এর প্রেসক্রিপশনে যার লালন পালনে তখনকার সরকারের অনেকেই জড়িত ছিল। আমরা প্রতিটি বিষয়ে সেকেন্ডারি অপশন নিয়ে কথা বলার কারনে মূল সংগঠকের বিষয়টি জ্ঞাত অজ্ঞাতসারে এড়িয়ে যাই। যে কারনে এই ধরনের ষড়যন্ত্র একের পর এক চলতেই থাকে।[ads2]

এখনকার জাসদ সংক্রান্ত আলোচনা কেন চলছে? নানান সুত্র থেকে চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে। ‘র’ তাদের বানানো সকল শক্তিগুলোকেই সামনের সারিতে নিয়ে আসতে চাইছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিমধ্যেই জাসদের ভিত্তি আগের চেয়ে মজবুত হয়েছে। বিভক্তি দেখা দিলেও তা ‘র’ এর ইঙ্গিতে হয়েছে আবার নয়া প্রেসক্রিপশনে সকল অংশের জোড়া লাগাও অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে জাসদকে শক্তিশালী বিরোধী দলে রাখতে চায় ভারত। জাসদকে দিয়ে বিএনপির রিপ্লেসমেন্ট করতে চায় তারা। কিন্তু এ বিষয়টি বিএনপি আদৌ আমলে নিচ্ছে কিনা তা তাদের কর্মকাণ্ডে বোঝার কোন উপায় নেই। তবে ভারতের সাফল্য হলো বিএনপির গায়ে ভারত ও ইসরায়েলের তকমা লাগিয়ে দেয়া এবং এতে তারা অনেকটাই তৃপ্ত। জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই বিএনপির এই ভারতমুখী অবস্থানে নিদারুন সংশয় দেখা দিয়েছে যা তাদেরকে যে কোন আন্দোলন থেকে বিমুখ করে রাখছে। বিএনপিকে ভারত কোন কিছুর বিনিময়েই বিশ্বাস করতে পারছে না। কারন শুধু নেতৃত্ব ভারতের অনুগত হলেও তাতে ভারতের পারপাস সফল হবার কোন কারন নাই, বিএনপির ৯৯% ভারত বিরোধী লোকজনের কারনে তা সর্বদাই ভারতকে ঝুঁকিতে ফেলে দেবে এটা ভারত ভালো করেই জানে।

জেনারেল জিয়া ১৫ আগস্টের নায়কদের রক্ষার জন্যই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের অংশ করেছিলেন, কারন বিএনপি সরাসরি ১৫ আগস্টের বেনিফিসিয়ারি। বিএনপির ভোটারদের ৯৯% আগস্টের ঐ পরিবর্তনকে সমর্থন করে। কিন্তু জেনারেল জিয়া পরবর্তী বিএনপি সেই আগস্ট অভ্যুত্থানের নায়কদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে তাদেরকে ‘ডেথ সেল’ থেকে কখনোই মুক্তি দেয়নি বা আইনি সুবিধাও দেয়নি। এই বিষয়গুলোও সশস্ত্র বাহিনী ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করে যা বর্তমান বিএনপি নেতৃত্ব কোন আমলেই নেয়নি। তেমনি দেশপ্রেমিক সিরাজ সিকদারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চেষ্টা করে কিন্তু সিরাজ সিকদারকে কখনোই তার স্বাধীনতা যুদ্ধের ভুমিকার জন্য স্বীকৃতি দেয় না। এই বিষয়গুলো বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ভেতরে ভেতরে দুর্বলতর করে। কারন বিএনপি এমন একটি দল যা গঠিত হয়েছে ভারত বিরোধী নানান পন্থী জনগণের সমর্থনে। যা ভারত ভালভাবেই জানে। তাই তাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা চলতেই থাকে; উদ্দেশ্য তাদের দখলদারিত্ব পোক্ত করা।[ads1]

তাই এই মুহূর্তে যা আশংকার বিষয় তা হলো জাসদকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করে সশস্ত্র বাহিনীকে সাইজ করে বাংলাদেশের সরকারী ও বিরোধী দলের ভুমিকায় ১০০% অনুগত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিষ্ঠার নীলনকশা যে কোন ভাবে সফল করতে ‘র’ বদ্ধ পরিকর। আগামীতে সেজন্য রাজনীতিতে ও বাংলাদেশের সামাজিক জীবনে আরও কিছু বিপর্যয়কর অঘটন দেখতে জাতিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যাতে পরিস্কার হয়ে যাবে কোন দিকে যাবে জাতির ভবিষ্যৎ। তবে এই মুহূর্তে ‘র’ এর এই নীলনকশা বাস্তবায়নে বাঁধা দেয়ার মত দৃশ্যমান কোন শক্তি অবশিষ্ট নাই। কেবলমাত্র ‘মানুষ ভাবে এক বিধাতা করে আরেক’ এই আশায় বুক বেঁধে থাকা ছাড়া কোন উপায়ও আপাততঃ নেই। [ads2]

লেখকঃ রাজনৈতিক সংগঠক এবং স্ট্র্যাটেজিক এনালিস্ট।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More