এসজে স্বপন: দেশে ব্লগার হত্যা হয়েছে কয়েকজন। কারোর ক্ষেত্রেই বিচার হয়নি। আজ পর্যন্ত সাগররুনি সহ বেশকিছু সাংবাদিক হত্যার বিচারও হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনির হাতে বিনা বিচারে হত্যা হয়েছে কয়েকশ মানুষ। বিএনপি-জামায়াতের প্রথম সারির কয়েকডজন নেতাকর্মী গুমের শ্বিকার হয়ে আজও নিখোঁজ রয়েছেন। এ সবকিছুর পেছনে জঙ্গিদের দায়ি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকেই। বিরোধী নেতাদের হত্যা-গুমের ঘটনায় টনক নরেনি সরকারের। অনেকের অভিযোগ ছিল এসব গুমের পেছনে সরকারই জড়িত। নচেৎ তথ্য বের হয়না কেন। এ অভিযোগগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে দেখা যায়নি সরকারকে। প্রত্যেকটি খুনের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবিও করেছিলেন, তাতে কান দেয়নি সরকার।
হঠাৎ সম্প্রতি বিদেশিদের হত্যার ঘটনায় নরেচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এই ঘটনায় প্রধামন্ত্রীকে দফায় দফায় সংবাদ মাধ্যমে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তবে দায় চাপানোর পুরোনো নীতির পরিবর্তন হয়নি। গতানুগতিক দায় বিরোধীদের উপরই চাপানোর চেষ্টা করছে সরকার। বিদেশি হত্যা তো আর বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী হত্যার মতো নয়? দায় চাপানোর মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকছেনা। এই হত্যার জন্য বিদেশীরা উদ্বেগই প্রকাশ করেনি। বরং বিদেশিরা তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। দাবি তুলেছে বাংলাদেশ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি পরিলক্ষিত হয়েছে বিদেশীদের কাছে। বিদেশি গণমাধ্যমেও ব্যাপক তোলপার শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে বিদেশী হত্যার বিষয়ে সুনিদ্রিষ্ট তথ্য তারা আগেই জানতেন। সরকারকে সেই তথ্য দিয়েছিলেন কিন্তু সরকার কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। বর্তমানে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনি যেভাবে তৎপর হয়েছে আগে সেভাবে তৎপর ছিলেন না।
আরব নিউজে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে- শিরোনাম করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জন্য অশুভ ইঙ্গিত’ বাংলাদেশে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যায় ক্রমবর্ধমান জঙ্গি তৎপরতার বিপদের কথা তুলে ধরেছে আরব নিউজ। এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এতে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এটা বাংলাদেশের জন্য অশুভ ইঙ্গিত।
এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করেই আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ, তারা বলেছে, বাংলাদেশকে ভয়মুক্ত করুন। সেখানে বিদেশি দুই নাগরিক হত্যার নিন্দা জানানো হয়েছে। নিউ ইয়র্ক সময় সোমবার জাতিসংঘের মুখপাত্র কর্তৃক প্রেরিত এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ আশা প্রকাশ করছে যে, বাংলাদেশ সরকার অবিলম্বে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছেন বিদেশিরা। বাংলাদেশে হঠাৎ করেই এক সপ্তাহের মধ্যে ইতালি ও জাপানের দুই ‘নিরীহ’ নাগরিক খুনের ঘটনায় বিদেশিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই চুপিসারে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ক্রিকেট কোচ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মী- সবাই চলে যাচ্ছেন। হঠাৎ ছুটি নিতে শুরু করেছে বিদেশিরা। এক সপ্তহের মধ্যে দুই বিদেশিকে বাংলাদেশে একই কায়দায় হত্যা করা হলেও ঘটনার কোনো কারণই বের করতে পারছে না গোয়েন্দারা।
প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশিরা চাইলেই নিরাপত্তার খাতিরে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন, করছেনও । কিন্তু বাংলাদেশে যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা কোথায় যাবেন? সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির মাঝে তোরজোর শুরু হলেও পূর্বে শত শত দেশি নাগরিক হত্যার পরও এমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। তাহলে ধরে নেয়া যায়কি, নিরাপত্তা শুধু বিদেশিদের?
জাপানি নাগরিক হত্যায় স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি সোহেলের ভাই বিপ্লবসহ ২ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বিএনপি দাবি তুলেছে, সরকার সব বাহিনীকে বিরোধী দল দমনে নিয়োজিত করেছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ অভিযোগ করেন। নিরাপদ যদি কেউই না হয়, তাহলে কি দেশ নিরাপদ?
সম্পাদকীয় ডেস্ক/এনএনবিডি