হাসিনার অস্বাভাবিক কর্মকান্ডে যারাই নিজের চুল নিজে ছিঁড়ছেন, তাদের জন্য দারুণ সুসংবাদ। সুযোগ্য বন্ধু উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জং উন তার নিন্দুকদেরকে উন্নতি দেখানোর জন্য, ভয়ানক এক লংকাকান্ড করে ফেলেছে। যে দেশের মানুষের বস্তি ভাড়া দেয়ার ক্ষমতা নেই, কার কথা শোনে কিম জং? ৮ কিলোটনের হাইড্রোজেন বোমা ফাটিয়ে পশ্চিমাদেরকে দেখিয়ে দিলো, কতো উন্নত দেশ উত্তর কোরিয়া? বোমা ফাটানোর ভিডিওতে দেখালো, লক্ষ লক্ষ কোরিয়ান রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত তালি দিচ্ছে আর কিম জং-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ঠিক যেমন বাংলাদেশে।
এবার মিলিয়ে দেখুন। ব্রিটিশের কারাগারে বসে ১৯৪২ সনে ইন্দিরাকে জহওরলালের লেখা পত্রগুলো নিয়ে বইটিতে অখন্ড ভারতের কথা বারবার লেখা। ভারত ভাগের জন্য গান্ধিকে হত্যা করেছিলো আরএসআর, যে দলের সদস্য ছিলেন মোদি। পাকিস্তানে গিয়ে মোদির কদমবুচি রাজনীতি, রাজনাথ সিং-দের অখন্ড ভারতের প্রচার আরএসআর-এর তরফ থেকে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠায় নানান কর্মকান্ড হাতে নেয়া, সর্বোপরি বাংলাদেশের সঙ্গে বিজেপির কিছু সন্দেহজনক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবশেষে আর দুঃখ করার কিছু নাই। বিজেপি-বিজেবি সব একাকার হয়ে গেছে। বাস্থব মানতেই হবে, অখন্ড ভারতের রাজনীতিতে প্রথম বলি ৭১ সনে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা বাংলাদেশ। ওরা ধরেই নিয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ এক। বীর্য কন্ঠে আরএসআর-এর মুখপাত্র ঘোষণা করলো, “ভিয়েতনাম-জার্মান এক হলে বাংলাদেশ-ভারত কেন এক হবে না। অবশ্যই হবে।” বিজেপি-বিজেবি সব একাকার, কিছু বুঝলেন?
কাকতালীয় বটে, মনে হচ্ছে আমি যেন গণক। বাংলাদেশের ভবিষ্যত বলে দিচ্ছি একটার পর একটা। আজ পাকিস্তান যা বললো, গত লেখায় আমি আগে বলেছি । পাকিস্তান বললো, “জামায়েতের নেতাদেরকে ফাঁসি দিচ্ছে ভারত।” আরো বললো, “বাংলাদেশের লোকেরা হয়তো ইতস্তত বোধ করে কিন্তু ভারত চাইছে জামায়েত নিষিদ্ধ হোক।” লেখাটি পড়ে আমি বাকরুদ্ধ।
বাপ-বেটি দুইজনেরই কাজ, গণতন্ত্রের লেজে আগুন দিয়ে আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্থ। কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে তাকে। তার যন্ত্রণায় আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো ইনু, তাহের, রাশেদ খান মেনন এবং সিরাজ শিকদারেরা। এরাই মুজিব হত্যাকান্ডের ঢাকে বাড়ি দিয়েছিলো। তার অত্যাচারেই মেজর জলিলের মতো মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুজিবের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হয়েছিলো। ভারতের বুদ্ধিতে রক্ষিবাহিনী নামে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্যারালেল মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে সকলের পাছায় আগুন দিয়ে সেকি জঘন্য অত্যাচার! স্বাধীন দেশের মানুষ হতবাক, হায়-হায়! ভয়ে লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু দেশ ছেড়ে আমাদের সামনে দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেলো। তখন আমি কলেজের ছাত্রী। ১ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবিতে আমার স্বর্গীয় পিতাকে ময়মনসিংহ জেলের পায়খানায় ৩ দিন বন্দি রেখে সিগারেটের আগুনে তার চামড়া পুড়িয়ে দিয়েছিলো রক্ষিবাহিনী। প্রতিবাদে অর্ধদিবস হরতাল করেনি শেরপুরবাসী? সেদিনের রক্ষিবাহিনীর অত্যাচারের সঙ্গে আজকের পার্থক্য একটাই, আপেল গাছ থেকে বেশি দূরে পড়ে না। আমার একটি অভিযোগও মিথ্যা হলে মাগুরলীগকে প্রমাণ করতে হবে, আমার দেবতাতুল্য পিতার জান খারাপ করে দেয় নাই এবং শেরপুরের সংখ্যালঘুদেরকে চাঁদার দাবিতে গ্রেফতার করে ডিমথেরাপি দেয় নাই? আরো প্রমাণ করতে হবে, দেশজুড়ে তখন দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, চাঁদাবাজ এবং মজুতদারদের সংস্কৃতি সৃষ্টি করে নাই? তখনকার অবস্থা ৭১এর চেয়েও ভয়ানক ছিলো এবং এসবই ঐতিহাসিক সত্য। কেন বলছি এসব কথা? যারা মুক্তিযুদ্ধ করে নাই, দেখে নাই কিংবা পাকিস্তানীদের কোলে বসে সজীব ওয়াজেদকে সিএমএইচ-এ প্রসব করলো, একমাত্র সেইসব কারজাইদের পক্ষেই রক্ষিবাহিনী থেকে বিজেবি, শিমলা চুক্তি থেকে দেশ বিক্রির চুক্তি, হাসিনার আমলে যতো চুক্তি… জনতাকে অন্ধকারে রেখে সম্ভব করলো দিল্লি।
মনে হচ্ছে বাপের মতোই জামায়েত-শিবিরকে আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠানোর প্রস্থতি শেষ। বিএনপির অতীত কবরে, বর্তমান অন্ধকারে, ভবিষ্যত কারাগারে। আসিতেছে এতিমের টাকা চুরির অভিযোগে খালেদার ২৫ বছরের জেল, যদিও নিজেদের পাছায় লক্ষ ছিদ্র। কিম জং উনের সুযোগ্য বন্ধু এবং চেয়ারম্যান মুজিবের যোগ্য উত্তরাধিকারী স্যার হাসিনার দুই হাতে ভারতের হ্যান্ডকাপ। তাদের ইচ্ছার বাইরে কিছুই করার সাধ্য নেই বরং টোপ দিয়েছে ২০০ বছরের ক্ষমতা। প্রথম কিস্তিতে ২০২১ এবং ২০৪২ দিয়ে পরীক্ষা। সফল হলে, উত্তর কোরিয়ার মতোই বংশানুক্রমে চলবে দুইখন্ড ভারতের ছত্রছায়ায় একখন্ড রাজনীতি। পাকিস্তানের আগেই আমি ভবিষ্যতবাণী করেছিলাম। নিজামীর ফাঁসি বাংলাদেশ দেয়নি, কারোটাই দেয়নি বাংলাদেশ। দিতে পারে না কারণ বাংলাদেশিরা তাদের ক্ষমাশীল হৃদয়ের জন্য দেশে-বিদেশে নন্দিত। এইরকমের নিষ্ঠুর কর্মকান্ড বাংলাদেশ কখনোই করবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তলে তলে আওয়ামী মন্ত্রীরাও ৪৪ বছর পর প্রমাণ ছাড়াই এইভাবে বানোয়াট ফাঁসি দেয়ায় বিব্রত এবং শংকিত। শুধুমাত্র দিল্লির তরফ থেকে ২০০ বছরের ক্ষমতার গ্যারান্টি না পেলে তোফায়েল-ইনুরা বহু আগেই আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিতো। কারণ তারাও দেখছে, সোস্যাল মিডিয়ায় হাসিনাসহ নানান মন্ত্রীদের সঙ্গে সংসদে এদের কাড়িকাড়ি ছবি। এটাও দেখছে, বারবার বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় আজ যাদেরকে ফাঁসি দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে এরশাদ এবং খালেদা বিরোধী আন্দোলনে। সুতরাং সাক্ষুস প্রমাণ সত্ত্বেও, ফাঁসি দিচ্ছে কেন? আমার বিশ্বাস, একটি ফাঁসিও হাসিনা দেয়নি বরং দিল্লির ইচ্ছা পূরণে বাধ্য হয়ে ভয়ংকর কাজে লিপ্ত হয়েছে। এককথায়, তাকে দিয়ে ভারতের কাজটি করিয়ে নিচ্ছে।
জঙ্গি নিধনের নামে ভারতবর্ষ জুড়ে অঘোষিত মার্শল ল’। জঙ্গি গন্ধ পেলেই ফাঁসি দিচ্ছে। হিটলারের মতোই হাসিনার বিরুদ্ধেও জনগণের যে জনরোষ, নির্বাচন হলে ৯৫ ভাগ ভোট পাবে বিএনপি। কিন্তু দিল্লির ইচ্ছায় বিএনপি-জামায়েতের গায়ে জঙ্গির সিল মারতে বাধ্য হলো হাসিনা, এটাই বিরোধীদলকে ধ্বংসের লাল ফরমান। জঙ্গির সিল দেওয়ার পর, কেন বাঁচিয়ে রাখবে দিল্লি? আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ক্ষমতায় আসামাত্র বিএনপি-জামায়েতকে জঙ্গি দল হিসেবে অভিহিত করলো আওয়ামী লীগ। মাথার গোবর ফেলে কিছু মস্তিষ্ক রোপণ করেন। বিএনপি-জামায়েতকে পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্যই দিল্লির নীলনকশা এগুলো। এই কারণেই বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মেরুদন্ডবান অফিসারদেরকে হত্যা করে নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে বিজেবি।
আপনারা যদি গত ৬ মাসের বক্তব্য লক্ষ্য করেন, যদি বডিল্যাংগুয়েজ পরীক্ষা করেন, দেখবেন, হাসিনা এবং মন্ত্রীদের বক্তব্যের সঙ্গে এই বাংলাদেশ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। মনে হবে তারা অন্য গ্রহের কথা বলছে। তাদের অস্বাভাবিক বক্তব্য দুইটা- ১) সন্ত্রাস, ২) উন্নতি। উন্নতির নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের হাতে হাতকড়া লাগাচ্ছে বিদেশিরা আর সন্ত্রাসের নামে ট্রাইবুন্যাল খাড়া করে একটার পর একটা ফাঁসি। দেখবেন, জামায়েতের ১ম এবং ২য় সারির প্রতিটি নেতারই ফাঁসি হবে এবং যতোই আপত্তি আসুক কোনকিছুতেই কাজ হবে না। এর কারণ, এই অঞ্চলের মোড়ল ভারত একটি উদীয়মান অর্থনীতি। ভারত চায় না এমনকিছুই করবে না পশ্চিমারা। মোদির হ্যান্ডশেক এবং কদমবুচি বোঝার মতো মস্তিষ্ক শেষ করে ফেলেছে মিডিয়া প্রপাগান্ডা দিয়ে। প্রতিটি ফাঁসির হুকুম গণভবনে পৌঁছে দিচ্ছে দিল্লি এবং যথারীতি রায়ের ১২ ঘন্টায় ফাঁসি। বিচারকেরা অসহায় এবং সাফাই সাক্ষিরা টাকা পেলেই খুশি। মনে রাখবেন, আজ বাংলাদেশে যেসকল অস্বাভাবিক কর্মকান্ড অব্যাহত, কোনটাই বাংলাদেশিদের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। বাংলাদেশিরা এতোটা নিষ্ঠুর কখনোই নয়। হলে ৭৩ সনেই যা করার করে ফেলতো। ৪৪ বছর পর বিএনপির বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার মামলা এবং ট্রাইবুন্যাল গঠন করে ফাঁসির প্রতিটি ইঞ্চির মালিক দিল্লি। ফাঁসি দিচ্ছে দিল্লি সুতরাং ২০০ বছরের ক্ষমতার গ্যারান্টি তথ্যবাবার পরিবারকে দিলে, কি করার আছে আওয়ামী লীগের?
আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি, খালেদাকে সন্ত্রাসী মনে করে মোদি। হোটেল সোনারগাঁয়ে মোদি-খালেদার বৈঠকে বারবার এই সন্ত্রাসের কথাই জিজ্ঞেস করলো মোদি এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের প্রশ্নে ক্ষতবিক্ষত করলো খালেদাকে। এরপর আপনারা কি করে ভাবেন, নিজামীদের ফাঁসি না হয়ে খালস হবে? দিল্লি যতোদিন পর্যন্ত বন্ধ না করবে, ফাঁসি চলবে। প্রমাণস্বরূপ, সামসুদ্দিন মানিক যে নাকি একাধিক ফাঁসির রায় লিখলো, সেই এখন টকশো এবং ইমরান সর্দারদের মিছিলে একস্বরে কথা বলছে। বিচারক মানিক খালেদাকে পাকিস্তান চলে যেতে বলছে। মনে রাখবেন, ইমরান সর্দার, বিচারপতি মানিক, মিডিয়া মেশিন, ট্রাইবুন্যাল… প্রতিটি ইঞ্চির মালিক দিল্লি।
মিনা ফারার ফেসবুক থেকে