যশোরে চাঁদার দাবিতে হানা দিয়ে কিশোরী ধর্ষণ, নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং জড়িত দু’জনকে পুলিশ আটক করেছে। আটক এক আসামি রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং ঘটনার শিকার কিশোরীর জবানবন্দিও গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তার ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। আটক দু’জন হলো শহরের আরএন রোড এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে তরিকুল ইসলাম ও এনামুল হক গাজীর ছেলে বিল্লাল। এ দু’জনসহ মামলার আসামিরা সবাই জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ আশ্রিত সন্ত্রাসী বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে শহরের সিটি কলেজপাড়ার ফজলুল হক বাবুর ভাড়া বাড়িতে চাঁদার দাবিতে এক বাড়িতে হানা দিয়ে দুর্বৃত্তরা এক কিশোরীকে ধর্ষণ এবং বাড়ির সদস্যদের নগ্ন করে ছবি তোলে। একইসাথে বাড়ির সদস্যদের জিম্মি করে টাকা, এটিএম কার্ড, ব্যাংকের কাগজপত্র নিয়ে যায়। পরে লজ্জা ঢাকতে ওই কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এলাকাবাসী ও মামলার অভিযোগে জানা যায়, যশোর সিটি কলেজের পিছনের ফজলুল হক বাবুর ভাড়া বাড়িতে শুক্রবার রাতে তারাবি নামাজের সময় চাঁদার দাবিতে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। বাড়িতে পুরুষ লোক না থাকায় বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে নারীদের মারপিট করে দুর্বৃত্তরা। এক পর্যায়ে নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরেন ফজলুল হক বাবু। দুর্বৃত্তরা তার কাছে চাঁদা দাবির এক পর্যায়ে তাকে ‘নগ্ন’ করে মারপিট করে। এ সময় তারা টাকা, এটিএম কার্ড, ব্যাংকের কাগজপত্র নিয়ে নেয়। পরে তার বাড়ির গৃহপরিচারিকা কিশোরীরও জামা কাপড় খুলে ফেলে এক সাথে ছবি তোলে। এরপর দুই দুর্বৃত্ত ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ লজ্জা ঢাকতে শনিবার ভোরে ওই কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। শনিবার সন্ধ্যায় ওই কিশোরীকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। ফজলুল হক বাবুর স্ত্রী আমেনা খাতুন জানান, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ৮/৯ জন তাদের বাড়িতে গিয়ে মারপিট ও লুটপাট করেছে। এ সময় তারা মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। এতে লজ্জায় মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় শনিবার রাতেই যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন বাড়ির মালিক ফজলুল হক বাবু। মামলায় ইব্রাহিমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ ও ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিকদার আক্কাস আলী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার আসামি তরিকুল ও বিল্লালকে পুলিশ আটক করেছে। তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তরিকুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনার সাথে কারা কারা জড়িত এবং কিভাবে তারা এটি ঘটিয়েছে তাও বলেছে তরিকুল। একইসাথে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু ইব্রাহিমের আদালতে ধর্ষণের শিকার কিশোরীরও জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চাঁদার দাবিতে হানা দিয়ে ধর্ষণ ও নগ্ন ছবি তোলার ঘটনায় জড়িত ইব্রাহিম, বিল্লাল, তরিকুল, বাদশা, সোহরাব, লাক্কুসহ সন্ত্রাসীরা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ আশ্রিত। শহরের মনিহার এলাকায় রিয়াদের অফিসকে কেন্দ্র করেই এদের তৎপরতা।