লক্ষ্মীপুর সদরের আবু তৈয়ব রাফি উদ্দিনের চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মিনহাজুর রহমান ফাহিম (২৩)। তার স্বপ্ন ছিল তুরস্ক যাওয়ার। আমেরিকা বা ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে তুরস্কে সুযোগ-সুবিধা ভালো বলে মনে করছিলেন তিনি। স্বপ্নপূরণে নেমে পড়েন তিনি। তবে রওনা হন অবৈধপথে। ঢাকা থেকে তুরস্কের সাবেক রাজধানী ইস্তানবুল; এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি চোখের সামনের অনেককেই দালালদের হাতে জীবন হারাতে দেখেছেন। অনেকের লাশ নদীতে ফেলে দিতেও দেখেছেন। বাঙালি হয়েও আরেক বাঙালির সঙ্গে এমন ব্যবহার কেউ করতে পারে, এটাও ছিল তার ভাবনার বাইরে। আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে তুরস্কের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও তার লেগেছে তিন মাসের বেশি সময়। আর দেশে ফিরতে লেগেছে প্রায় ১০ মাস। দীর্ঘ এই ১৪ মাসের ভয়াবহ যাত্রার লোমহর্ষক গল্প শুনিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনকে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক যাওয়ার জন্য পাশের গ্রামের শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা হয় ফাহিমের। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় গ্রিস প্রবাসী আলী হোসেনের (দালাল) সঙ্গে। পরিচয়ের পরের মাসেই ৩ এপ্রিল দুবাইয়ে তার ফ্লাইট বলে জানায় দালালরা। করোনা মহামারির মধ্যেই ফাহিম দেশের সীমানা পাড়ি দিতে পারলেও লিবিয়া থেকে ইরান হয়ে তুরস্কে আর যেতে পারেননি। অনেক চেষ্টার পর যদিও তুরস্কে পৌঁছান, কিন্তু অসুস্থতা আর পরিবারের কান্নায় দূতাবাসের বিশেষ সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে মিনহাজুর রহমান ফাহিমের কথা হয়। তিনি জানান, দালালের সঙ্গে কথা হয় ভিসা দিয়ে সরাসরি ফ্লাইটে তুরস্ক নিয়ে যাবে তারা। কিন্তু ভিজিট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পরে পাসপোর্ট ও সঙ্গে থাকা ডলার নিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। সে পাসপোর্ট এখনও ফেরত পাননি ফাহিম।
বাংলা ট্রিবিউনকে ফাহিম বলেন, ‘করোনার মধ্যে ফ্লাইটের কথা বলে ঢাকায় আনে। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মহাখালীর একটি আবাসিক হোটেলে উঠি। পরে দালাল চক্রের সদস্য শাহাদাত হোসেনকে বললে তিনি সকালে ভাটারা নতুন বাজার এলাকায় তার ছোট ভাইয়ের বাসায় গিয়ে থাকতে বলেন। এ সময় প্রবাসী আলী হোসেন ও তার সহযোগী হান্নানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তাদের কথা মতো ১০ এপ্রিল করোনা টেস্ট করিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় এসে একটি হোটেলে অবস্থান করি। তার দুই দিন পরে ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় দুবাই ফ্লাইট হয় আমিসহ আরও তিন জনের।’
ক্যারিয়ার গঠনে বিদেশ যাত্রার শুরুতে কত রকম স্বপ্ন ভেসে ওঠে সবার মনে! ফাহিমের বেলাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। পরিবারের সবাইকে ফেলে এই যাত্রা নিশ্চয়ই সুদিন বয়ে আনবে, এই চিন্তা করতে করতেই পৌঁছে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানে মানবপাচার চক্রের সদস্য আব্দুল হান্নান সবাইকে রিসিভ করে নিয়ে যান রেস্টুরেন্টে। সেখানে সকালের নাস্তা শেষে সবার কাছ থেকে পাসপোর্ট ও ডলার নিয়ে নেন।
ফাহিম বলেন, ‘আমার কাছে থাকা ৬০০ ডলার ওই সময় নিয়ে যায় হান্নান। আর ব্যাংকে টাকা জমা দিতে বলে। পরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আলী হোসেনের স্ত্রী রাশিয়া বেগমের হিসাব নম্বরে টাকা পাঠানো হয়। নাস্তা শেষে তাদের রেস্টুরেন্টের পাশেই একটি বাসায় (সেফ হাউজ) রাখা হয়।’ সেখানে দুই রুমে মোট ৩৫ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও সবাই ধরে নিয়েছিল হয়তো ক্ষণিকের কষ্ট। কিন্তু কেউ ভাবতেও পারেনি সেটাই ছিল দুর্বিষহ যাত্রার শুরু।
সেখানে প্রতিদিন একবার করে হান্নান এসে দেখে যেতো। ফ্লাইটের কথা জানতে চাইলে বলতো, দুই-এক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। এভাবে পাঁচ দিন কেটে যায়। ফাহিম বলেন, ‘১৭ এপ্রিল সেফ হাউজ থেকে নিয়ে আসে এবং সিলেট থেকে যাওয়া অন্য তিন জনসহ আমাকে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে গিয়ে একটি নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। সেখানে থাকা তিন-চার জন লোকের সঙ্গে বেশ সময় কথা বলে হান্নান। কথা শুনে মনে হয়েছে, তারা দুবাই ও ইরানের লোক ছিল।’
‘পরে সেখানে তাদের কাছে আমাদের চার জনকে দিয়ে আসে। তারা একটি গাড়িতে তুলে আমাদের নিয়ে দুবাইয়ের নৌ-বন্দরের মধ্যে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে মোট ৫৩ জনকে একটি ছোট মাছ ধরা ট্রলারে তুলে দেয়। ট্রলারটি বন্দর থেকে বেশি গভীরে সাগরের মধ্যে সারাদিন রাখে। সন্ধ্যার পরে ট্রলার চলতে শুরু করে। আমাদের নিয়ে টানা প্রায় ৪০ ঘণ্টা চলে। পরে ১৩ থেকে ১৪ জনের ছোট ছোট গ্রুপ করে চারটি স্পিড বোটে তুলে দেয়। ৬ ঘণ্টা চলার পরে ইরানের সীমান্তে নামিয়ে দেয় আমাদের।’
তিনি আরও জানান, ‘সাগরপথে প্রায় ৫০ ঘণ্টা যাত্রার সময় যখনই আকাশে ইরানি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহলরত কোনও হেলিকপ্টার দেখেছে, তখনই আমাদের কম্বলের নিচে লুকিয়ে রেখেছে দালালরা। হেলিকপ্টার চলে গেলে আবার কম্বল সরিয়ে দিতো। ইরানের সীমান্তের কাছাকাছি সাগরের মধ্যে সবাইকে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে সাঁতরে ইরানের সীমান্তে উঠি আমরা। পরে পাঁচটি প্রাইভেটকারে করে তুলে নিয়ে ইরানি বন্দর আব্বাসের পাশে একটি সেফ হাউজে রাখে আমাদের।’
ফাহিমের ভাষ্য, ‘মূলত সেখানেই চলে টাকা আদায়ের জন্য টর্চার। ওই রুমে আটকে রেখে দফায় দফায় সবার থেকে টাকা আদায় করা হয়। হান্নান ও আলীর কথায় তার স্ত্রী রাশিয়া বেগমের ব্যাংক হিসাব নম্বরে আবার টাকা পাঠানো হয়। টাকার জন্য এক ইরানি প্রায়শই মারধর করতো। সহ্য করতে না পেরে হাত-পা ধরে মাফ চাইতাম। এক পর্যায়ে হান্নানের সঙ্গে কথা বলার পরে আমাকে মারা বন্ধ করে।’
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ফাহিম বলেন, ‘সেখানে ইরানি দালালরা বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। তারা এতটাই নিষ্ঠুর যে হাতজোড় কিংবা কান্নাকাটি কিছুই তাদের টলাতে পারে না একমাত্র দালালদের কথা ছাড়া। সেখানে টাকা দিয়েও কারও রক্ষা হতো না। ওই সময় সেফ হাউজে দেখেছি টাকার জন্য অনেকের হাত-পায়ের নখ পর্যন্ত উঠিয়ে ফেলছে। এছাড়া সেফ হাউজের অবস্থা দেখতে আলী ও হান্নান প্রতিদিন ভিডিও কল করতো। এরমধ্যে কেউ অসুস্থ হলেও চিকিৎসা দিতো না। মারা গেলে লাশ ফেলে দিতো পাশের ডোবায়।’
ফাহিম বলছিলেন, খুব কষ্টে সেফ হাউজ থেকে তিন দিন পরে ছাড়া পান তিনি। সেখান থেকে তেহরানের উদ্দেশে তিনিসহ পাঁচ-ছয় জনকে একটি বাড়ির কাছে নামিয়ে উট ও ভেড়ার খামারের মধ্যে বসিয়ে রাখে। সেখানে গিয়ে পাঁচজন আফগান যুবকের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে আধো ইংরেজিতে কথা হয় তাদের। আফগানি যুবকরা জানায়, তারাও একইভাবে ভাগ্য বদলাতে এসেছেন এখানে। দালাল চক্রের সদস্যরা সবার কাছ থেকে ম্যানিব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে নেয়।
ওইদিন সন্ধ্যায় ১০-১১ জন উটের খামার থেকে বের করে গাড়িতে তুলে নেয়। ঘণ্টা তিনেক গাড়ি চলার পরে একটি বাড়িতে নিয়ে রাতে সেখানে রাখে। সকালে তিনটি মোটরসাইকেলে করে নিয়ে গিয়ে আরেকটি গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তারা কিছুদূর যাওয়ার পরে মরুভূমির মধ্যে নামিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তা দেখিয়ে বলে সামনে গেলে তাদের লোক পাওয়া যাবে। তারা বলে দেয় টহল হেলিকপ্টার দেখলে পাহাড়ে আড়ালে বা আশপাশে লুকিয়ে যেতে, না হলে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়বে ইরানি গার্ডরা।
কঠিন সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে ফাহিম বলেন, ‘তিন ঘণ্টা হেঁটে দালালদের কাছে পৌঁছে দেখি, সেখানে নারী-শিশুসহ ১০০ জনের মতো লোক অপেক্ষা করছে। সবাইকে তুরস্কে পাঠানো হবে। সেখানে না খেয়েই সারাদিন কেটে যায়। সেই অবস্থায় আবার হাঁটা শুরু করি। বেশ কিছু দূর যাওয়ার পরে ছয়টি গাড়িতে সবাইকে তুলে নেওয়া হয়। পরে একটি চেকপোস্টের কাছে নামিয়ে আবার হাঁটাতে থাকে। এরমধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে বেদম মারপিট করে দালালরা। যেন দেহে প্রাণ থাকা পর্যন্ত কারোর কোনও রক্ষা নেই। সবাইকে হাঁটতে হয়।’
দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে ১২-১৪ ঘণ্টা পরে তেহরান পৌঁছান ফাহিম ও তার সাথীরা। সারাদিন না খাওয়া, অসুস্থ হয়ে পড়েন ফাহিম। সেই অবস্থায় হান্নান তাকে তার তেহরানের এজেন্ট মিজাদুলের কাছে পাছিয়ে দেয়। মিজাদুল তেহরানে থাকে, সে ফাহিমকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়। ফাহিম বলছিলেন, ‘আমি তাকে আমার অবস্থা সব বললাম, অনুরোধ করলাম বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া জন্য। ওই সময় মিজাদুলের বাসায় আলী হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেনের সঙ্গে আমার দেখা হয়। কিন্তু সে আমাকে এড়িয়ে যায়। আমি দালাল আলী হোসেন ও আব্দুল হান্নানকে ফোন করেও আমার শরীরের অবস্থা বলি। তাদেরও অনুরোধ করি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বলে, এখান থেকে বাংলাদেশে ফেরার কোনও পথ নেই। হয় আমাকে তুরস্ক পৌঁছাতে হবে, না হয় এখানেই মরতে হবে। তবে তুরস্ক পৌঁছাতে পারলেই সেখান থেকে সহজে দেশে ফিরতে পারবো। এছাড়া সেখানে চিকিৎসাও নিতে পারবো।’
ফাহিম জানান, এরপর থেকে অজ্ঞাত কারণে তার সঙ্গে ফোনে কথা বলাও বন্ধ করে দেয় আলী হোসেন। সেখানে ২০-২৫ দিন থাকার পরে মিজাদুলকে বাড়তি টাকা দিয়ে বর্ডার পার করে দিতে অনুরোধ করেন। পরে মিজাদুল তেহরান থেকে তুর্কি বর্ডারে পাঠার ফাহিমকে এবং বলে দেন অনেক কষ্টে বর্ডার পার হতে হবে।
ফাহিমের বর্ণনায়, ‘নামিয়ে দেওয়ার স্থান থেকে ৫ ঘণ্টার পথ হেঁটে যেতে হয়। এরমধ্যে ছোট-বড় পাহাড় পাড়ি দিতে হয়েছে। ওই সময় আমি একবার পাহাড় থেকে পড়ে যাই। সঙ্গে থাকা এক আফগানি আমাকে ধরে তোলেন। পরে তার কাঁধে ভর করে তুর্কি সীমান্তের কাছে আসি। পরে আমার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তার পক্ষে কাঁধে করে নেওয়া সম্ভব হচ্ছি না। সেখান থেকে ঘোড়ার পিঠে করে সন্ধ্যায় তুর্কি বর্ডারের কাছে একটি মাটির গর্তের মধ্যে সারারাত লুকিয়ে রাখে। সকালে মাটির গর্ত থেকে বের করে পাশের শহরে নিয়ে যায়, সেখানে দালালের ছেলে সাব্বির হোসেন আমার মতো আরও ৩০ জন নারী-পুরুষকে বর্ডার পার করে দেওয়ার জন্য আগেই নিয়ে এসে রেখেছে।’
ওই রাতে ইরানি পুলিশ সেই বাসায় অভিযান চালায়। এ সময় দালাল সাব্বিরসহ সবাই পালিয়ে যায়। ফাহিম বলছিলেন, ‘আমরা যে যার মতো পারছি জঙ্গলে পালিয়েছি। পুলিশ চলে যাওয়ার পরে সাব্বির ও তার সঙ্গীরা এসে সবাইকে জঙ্গল থেকে খুঁজে বের করেন। পরে ওই রাতেই তুরস্কের উদ্দেশে একটি গাড়িতে করে সবাইকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে দালালরা। অবশেষে একেবারে তুর্কি সীমান্ত এসে পড়ি। শুধু একটি নদী পার হলেই তুরস্ক। আমাদের সবার একটি জাহাজে ওই নদী পার করা হয়। নদী পার হয়ে ১৪ ঘণ্টার পথ হেঁটে তুরস্কের একটি শহরে পৌঁছায়। সেখান থেকে আরেক শহরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের পাঁচজনকে পুলিশ ধাওয়া করে। পরে পাশের একটি জল ডোবায় লাফ দেই। সেখানে ঘণ্টাখানেক পানির মধ্যে থাকার পরে পুলিশ চলে যায়। উঠে মিজাদুলকে ফোন করলে গাড়ি পাঠিয়ে আমাদের নিয়ে যায় একটি হোটলে। সেখানে থেকেই আমি তুর্কি বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করতে থাকি।’
ফাহিমের ভাষ্য, ‘তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়, দেশে ফিরতে হলে দূতাবাসে এসে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। পরে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে আলীর ছেলে সাব্বির হোসেনের সঙ্গে ইস্তানবুলের উদ্দেশে বের হয়। আঙ্কারা শহর পার হয়ে ইস্তানবুল শহরে প্রবেশের আগেই চেকপোস্টে পুলিশের কাছে ধরা পরে যায়। পরে ১১ দিন জেল খেটে ২০২১ সালের ৪ জুন ছাড়া পেয়ে ইস্তানবুলে আমার পরিচিত একজনের কাছে গিয়ে উঠি। এরমধ্যে আলী হোসেন অনেকবার ফোন করে তার লোকদের কাছে যেতে বলে। কিন্তু আমি আর সেখানে যাইনি। এই সময়ে ২৩ জুন আমি বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে দেখা করে কাগজপত্র জমা দেই। তারা জানান, কাগজপত্র তদন্ত করে দেশে যাওয়ার জন্য আউটপাস দেওয়া হবে। ১০ মাস পর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাকে আউটপাস দেওয়া হয়। পরে ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল তুরস্ক থেকে দেশে ফিরে আসি।’
দুর্বিষহ এই যাত্রা করা তরুণ বলেন, ‘এই জার্নির কথা মনে করলে এখনও রাতে ঘুমাতে পারি না। তবে সৌভাগ্য এতটুকুই যে, জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছি। এই যাত্রায় অনেককেই দেখেছি স্বপ্ন নিয়ে ডুবে যেতে!’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই চক্রের সদস্য শাহাদাত হোসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষদের সংগ্রহ করে। পরে সেসব যাত্রীদের ঢাকায় বাকি কাজ শেষ করেন আব্দুস সালাম নামে ওই চক্রের আরেক সদস্য। আর দেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের রিসিভ করে দুবাইয়ে থাকা আব্দুল হান্নান। তবে চক্রের প্রধান গ্রিস প্রবাসী আবুল হোসেন ও ইরান প্রবাসী তার ছেলে সাব্বির হোসেন। আর মানবপাচারের এই সব টাকা আসে আলী হোসেনের স্ত্রী রাশিয়া বেগমের হিসাব নম্বরে। ইতোমধ্যে দেশে অবস্থান করা ওই নারীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। রিমান্ড শেষে বর্তমানে জেলে আছেন রাশিয়া বেগম। আর বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।