হেলপারের হাত যখন পিঠে

0

একজন নারী রোজ ঢাকার রাস্তায় যতরকমের হেনস্তার শিকার হন—এরমধ্যে বাসে যাতায়াত তার জন্য সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের। রোজ বাসে করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা অফিসে যান এমন নারীরা বলছেন, এই হয়রানি কেবল মুখ বুজে সহ্য করে যেতে হয়। বাসে উঠবেন বা নামবেন, গেটে একজন হেলপার এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন যে তার শরীর এড়িয়ে আপনি ওঠানামা করতে পারবেন না। আপনাকে ওঠানামায় ‘সহযোগিতা’ করার জন্য আপনি না চাইলেও পিঠে হাত দিবেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। এ যেনো নিয়ম হয়ে গেছে।

মনোবিশ্লেষকরা বলছেন, রোজ যে যৌন হয়রানির শিকার নারী হচ্ছেন এবং তার জীবন থেমে না যায় যেনো সেকারণে চুপ করে থাকছেন। এর একটা বড় ধরনের প্রভাব তার মধ্যে ঘটতে থাকে। আর নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, কোনও সভ্য দেশে এইধরনের আচরণ দেখা যায় না।

বাসের মধ্যে নানা ধরনের হয়রানির ঘটনা ঘটে, নারীরা যেসবের প্রতিবাদ করে, সেসব নিয়ে কথা হয়। কিন্তু যে বিষয়টি একেবারেই কথা বলা যায় না তা হলো, নারী যাত্রীর বাসে ওঠানামার সময় হেলপারের হাতের স্পর্শ। সাধারণত আদর্শ নিয়ম হলো—বাস দাঁড়াবে, লাইন করে বাসে একে একে উঠবেন। তারপরে বাস যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনগুলো এই নিয়মের মধ্যেই নেই। হেলপার দাঁড়িয়ে থাকেন চাপা একটা দরজায়। তার পাশ দিয়ে বাসে উঠতে হবে। এই ওঠানামার সময় সে তার এক হাত যাত্রীর পিঠে দিয়ে ‘সহযোগিতা’ করে। এই সহযোগিতা নারী যাত্রী চান বা চান না সেটা বড় বিষয় না।

সাহানা রোজ শ্যাওড়াপাড়া থেকে পল্টন যান বাসে। উঠতে-নামতে এই হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আপনি কথা বলতেও পারবেন না। সবাই ভাববে আমি খারাপভাবে দেখছি। এক-দুইবার বলে দেখেছি, অন্য পুরুষরা বলেন, আমি যেনো পড়ে না যাই সেইজন্য নাকি হেলপার পিঠে হাত দেন। তারপর একসময় রোজকার এই হয়রানি গিলে ফেলেছি।

আগস্ট মাসে প্রকাশিত ‘জনস্থানে নিরাপত্তা ক্যাম্পেইন’ সম্পর্কিত এক অনলাইন জরিপের তথ্য বলছে, ৫৭ শতাংশ নারী গণপরিবহনকে সবচেয়ে অনিরাপদ বলে মনে করছেন। প্রকাশ্যে হয়রানির শিকার হয়েও ৪৪ শতাংশ নারী কোনও সহযোগিতা পাননি।

হেলপারের হাত যখন পিঠে

এ পরিস্থিতি বন্ধে হেলপার কোনটা করতে পারবেন আর কোনটা করতে পারবেন না তার বর্ডার লাইন টানতে হবে উল্লেখ করে ‘আমরাই পারি’র সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোন হাতটা কোন উদ্দেশ্যে তাকে স্পর্শ করছে—এটা নারী খুব ভালোভাবেই টের পায়। বাসের ভিড়ে ধাক্কাধাক্কিতে গায়ে স্পর্শ লাগতেই পারে। সেটা খারাপ না ভালো সেটা বোঝার ক্ষমতা নারীর আছে। ফলে সে যদি কোনটার প্রতিবাদ করে সেটা নিয়ে তাকে কটাক্ষ করার সুযোগ নেই। বাস নিয়ম মতো এসে থামবে এবং নারী ও পুরুষ উভয়ে তাদের মতো করে বাসে উঠবে। গায়ে হাত দিয়ে ঠেলে ঢুকানোর কিছু নেই। হেলপারকে এসব বিষয়ে অবহিত করা দরকার এবং অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেইটা তাকে জানাতে হবে। তবে এর সুরাহা সম্ভব।

মনোরোগবিশ্লেষক তাজুল ইসলাম মনে করেন, এই হয়রানি এতোটাই প্রভাবিত করতে পারে যে, নারীর মধ্যে চরম অনিরাপদবোধ তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে অবাঞ্ছিত স্পর্শ নিয়ে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই নানা শঙ্কা কাজ করে। একজন স্বাবলম্বী শিক্ষিত নারী বাসে করে কর্মস্থলে যাবে—সে বাসে উঠতে জানে না? তাকে কেন রোজ নতুন নতুন হেলপারের হাতের স্পর্শের শঙ্কায় থাকতে হবে। এটা তাদের মধ্যে ভীষণ খারাপ অনুভূতির জন্ম দেয়।

উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More