নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুছড়ি ইউনিয়নের লেমুছড়ি গ্রামের দুছড়ি খালের কালুরঘাট পাড়। রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে নৌকায় করে সেখানে আনা হয় মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) হাতে নিহত বিজিবি সদস্যের লাশ। পঁচে, ফুলে ভারী হয়ে যাওয়া লাশটি পাড়ে তুলতে পারছিলেন না বিজিবি সদস্যরা। বাধ্য হয়ে তারা উপস্থিত সাধারণ লোকের সহযোগিতা চান। কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে কেউই লাশটি তুলতে চাচ্ছিলেন না।
এসময় এক বিজিবি অফিসার লোকজনের উদ্দেশ্যে কাতর কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা দেশ পাহারা দিই, আমাদের লাশ কাঁধে নিতে আপনাদের এত সমস্যা!’ অপর এক বিজিবি সদস্য লাশ তোলার জন্য সবার কাছে গিয়ে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একদিন সবাইকে মরতে হবে। এই জওয়ান দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের সহযোগিতা করুন।
এসময় দুছড়ি খালপাড়ের পরিবেশ কিছুটা ভারী হয়ে উঠে। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ ভারী হয়, সহকর্মীর কাঁধেও যে সহকর্মীর লাশ ভারী হয় তার প্রমাণ দেখা গেলো দুছড়ি খালপাড়ে। মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) হাতে বিজিবি’র সদস্য নায়েক মিজানুর গত বুধবার নিহত হন। তিনদিন পর শনিবার বিকেলে বিজিপি তার লাশ বিজিবি’র হাতে হস্তান্তর করে। মায়ানমারের সীমান্ত এলাকা থেকে লাশটি এনে শনিবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাইনছড়ি ক্যাম্পে রাখা হয়।
পাইনছড়ি থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে শনিবার সকালে লাশটি দুছড়ি খালে আনা হয়। ওই খালের সামান্য পানিতে কিছুদূর নৌকা চালিয়ে আবার কিছুদূর ঠেলে সকাল পৌনে ১০টার দিকে লাশটি পৌঁছে লেমুছড়ি বিজিবি ক্যাম্প থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে কালুরঘাটে।
লাশ আনতে বিজিবিকে সহযোগিতার জন্য পাইনছড়ি ক্যাম্পে যান কালুরঘাট এলাকার বাসিন্দা আমির হামজা।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পরশু (শুক্রবার) বিজিবি’র সঙ্গে লাশ আনতে মায়ানমার গিয়েছিলাম।
তার লাশ তো দেয়নি, গুলি করে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। কাল (শনিবার) লাশ দেয়ার পর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাইনছড়িতে এনেছি। সেখান থেকে লেমুছড়ির কালুরঘাটে খালের মধ্য দিয়ে আনি।
সকালে দুছড়ি খালপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নিহত মিজানুরের পরনে এখনও বিজিবির পোশাক, পায়ে জুতা। লাশ ফুলে বিকৃত হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ এড়াতে লাশের শরীরে বারবার ঢালা হচ্ছে কেরোসিন।
চারদিন ধরে লাশ ফেরত না দেয়ার পর শুক্রবার লাশ আনতে যাওয়া বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ার ঘটনায় বিজিপি ও বিজিবি’র মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শুক্রবার উভয়পক্ষে কয়েক দফা গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এর এক পর্যায়ে শনিবার সন্ধ্যায় বিজিবি কর্মকর্তারা আবারও মায়ানমার সীমান্তে গেলে লাশ ফেরত দেয় বিজিপি। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, লাশটি ফুলে যাওয়ায় খালপাড় থেকে সেটি গাড়িতে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প পদ্ধতিতে লাশটি দ্রুত নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ৩১ বিজিবি ব্যাটালিয়নে নেয়া হবে। সেখানে বাহিনীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ কুমিল্লায় নিহতের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।
সুত্রঃ বাংলানিউজ২৪.কম