[ads1]স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলাকান্দর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শিরিষকাঠ খাল। এ খালে বছরে পানি থাকে ৬ মাস। গ্রামটি দিয়ে অতিক্রম করার সময় চোখে পড়বে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। গ্রামের ৪৩ জন নারী মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের ৪৩ জন নারী নিজেরাই লেগে পড়েছেন মাছ চাষে। স্বপ্ন দেখেন তারা নিজেরা মাছ চাষ করে খাবেন এবং অতিরিক্ত মাছ বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করবেন। গত ৪ বছর ধরে শিরিষকাঠ খালে এভাবে মাছ চাষ করেন। নিজেরাই মাছের খাবার দেওয়া, দেখা শোনা এমনকি মাছ ধরার কাজটি নিজেরাই করেন। ইতিমধ্যে তাদের গড়ে তোলা দোয়েল ও কোয়েল সমবায় সমিতিতে মাছ বিক্রির কয়েক লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেছেন।[ads2]
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার নিয়ামতপুর ইউণিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে শিরিষকাঠ খাল। খালটির সঙ্গে মলিকপুর, কামালহাট, দৌলতপুর, বলরামপুর, মহেশ্বরচাদা, হরিগোবিন্দপুর গ্রামের মাঝখানের বিস্তর মাঠ ও টায়াখালী বিলের সাঙ্গে রয়েছে খালের সংযোগ। আর বলাকান্দর গ্রামের মধ্যে দিয়ে যে অংশ গিয়েছে তার নাম শিরিষকাঠ খাল।
আরও জানা যায়, বলাকান্দর গ্রামের ২টি নারী সমিতি আছে। একটির নাম দোয়েল মহিলা সমবায় সমিতি অপরটি কোয়েল মহিলা সমবায় সমিতি। দুটি সমিতির প্রায় ৪৩জন সদস্য রয়েছে। তারা প্রতি সপ্তাহে চাদা জমা দিয়ে থাকেন। তারা একদিন উদ্যোগ হন কিভাবে শিরিষকাঠ খালে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। উভয় সমিতির সদস্যরা একদিন মিটিংয়ে বসেন। তার পর কোন পুরুষের সহযোগিতা ছাড়াই তারা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালের দুপাড় পরিস্কার পরিচ্ছন করেন।
এর পর তার প্রাথমিক অবস্থায় বেশ কিছু মাছের পোনা ছাড়েন পরীক্ষামুলক ভাবে। সেটা ২০১৩ সালের কথা। সে বার তারা যে টাকার মাছ ছেড়েছিল তার চেয়ে প্রায় ৩ গুন টাকার মাছ আহরন করে। এর পর তারা আর থেমে থাকেনি। প্রতিবছর গ্রামের ঐ খালে তারা রুই, কাতল, সিলভারকাপ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ শুরু করে। গত ২০১৫ সালে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। এবার ২০১৬ সালেও লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।
দোয়ের মহিলা সমিতির সভানেত্রী হাজেরা খাতুন জানান, তারা প্রায় ৪ বছর ধরে এই খালে মাছ চাষ করছেন। তিনি জানান, প্রথমে একটি সমস্যা হচ্ছিল মেয়েরা খালে নেমে মাছ চাষ করবে ? পরে যখন সকল সদস্যই চাষকৃত মাছ হাতে পেলো এবং বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় হলো তখন থেকে উদ্যোম আরো বেড়ে গেছে।[ads1]
কোয়েল মহিলা সমিতির সভানেত্রী আজিজা বেগম জানান, তাদের খুব ভাল লাগছে। গ্রামের মধ্যে প্রবাহিত পরিত্যক্ত খালকে তারা পরিস্কার করে মাছ চাষ করছে। আর যারা মাছ চাষ করছে তারা সকলেই নারী। বাড়ির অন্য কাজ শেষ করে এই খালে মাছের পেছনে তারা সময় দিচ্ছে।
তিনি আরো জানান, শিরিষকাঠ খালে বছরে ৬ মাস পানি থাকে। যদি সরকার এটিকে খনন করে সংস্কার করে ১২মাস পানি থাকার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে তারা এখানে ১২মাস মাছ চাষ করতে পারতো।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দ: শরিফা আক্তার জানান, তিনি নিজে ঐ গ্রামে মাঝে মাঝে যান এবং খালে যে সব নারীরা মাছ চাষ করেন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এবার মৎস অধিদপ্তরের সহযোগিতায় শিরিষকাঠ খালে বেশ কিছু মাছের পোনা দেওয়া হয়। যার মালিক পরবর্তীতে দুটি সমিতির মহিলা সদস্যরাই পান। মাছ আহরনের দিন তিনি তাদের সাথেই ছিলেন।[ads2]