দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে গুলি করে মারল পুলিশ

0

115233_1দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় পুলিশের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম রেজোয়ান হক (২২)। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার তুলসীপুর (তালপাড়া) গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ দাবি করেছে, রেজোয়ানের বাবা স্থানীয় বিএনপি নেতা হাবিবুল হক নাশকতার মামলার আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করলে রেজোয়ান নিহত হন। এ সময় চার পুলিশ সদস্যসহ আরো ১০ জন আহত হয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছে, হাতকড়া পরানোর সময় হাবিবুল হক পালিয়ে যান। পরে পুলিশ রেজোয়ানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি (রেজোয়ান) মাটিতে পড়ে যান। এ সময় পুলিশ অস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁর পেটে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। রেজোয়ান স্থানীয় ব্রহ্মপুর মাদ্রাসার ফাজিল ক্লাসের শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা হাবিবুল হক উপজেলার ১ নম্বর পুনট্রি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কমিটির সভাপতি। গতকাল রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রেজোয়ানের লাশ ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিল। পুলিশের ভাষ্য মতে, বিএনপি জোটের টানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চলাকালে গত ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের চিরিরবন্দরের আমতলী এলাকায় একটি খাদ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় গাড়ির চালক আব্দুর রহমানকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হাবিবুল হকসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল হাবিবসহ অন্যদের ধরতে তুলসীপুর গ্রামে অভিযানে নামে চিরিরবন্দর থানার পুলিশ। বাড়ি ঘেরাও করে হাবিবকে গ্রেপ্তার করে তারা। তাঁকে ধরে আনার সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। একপর্যায়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেয় তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রেজোয়ান, তাঁর মা আম্বিয়া বেগম, বোন হাবিবা, দাদি হনুফাসহ ছয়জন আহত হয়। পুলিশ চারটি গুলি ছুড়েছে। সংঘর্ষে পুলিশেরও চার সদস্য আহত হন। হাবিবকে ছাড়াই সেখান থেকে চলে আসে পুলিশ। পরে স্থানীয় লোকজন রেজোয়ানের মৃত্যুর খবর জানায়। তবে রেজোয়ানের দাদি হনুফা দাবি করেন, গতকাল জুমার নামাজের পর পাঞ্জাবি পরা পাঁচ-ছয়জন সশস্ত্র ব্যক্তি তাঁদের বাড়িতে ঢোকে। তারা কিছু না বলে সরাসরি হাবিবকে পাকড়াও করে তাঁর হাতে হাতকড়া পরাতে যায়। এ সময় ঝাঁকি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হাবিব দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। হাবিব ছুটে যাওয়ায় বাড়িতে আসা লোকজন রেজোয়ানকে ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। ছাড়া পেতে ধস্তাধস্তি শুরু করেন রেজোয়ান। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় সশস্ত্র ব্যক্তিদের একজন তাঁর বুকের ওপর পা চেপে ধরে পেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। কমপক্ষে আটটি গুলি করা হয়েছে। পরে অস্ত্রের বাঁট দিয়েও তাঁর মাথায় আঘাত করে তারা। ঘটনাস্থলেই রেজোয়ান মারা যান। পুনট্রি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মকবুল হোসেন গতকাল রাত ৮টার দিকে কালের কণ্ঠকে বলেন, রেজোয়ানদের বাড়িতে এখন কোনো পুরুষ মানুষ নেই। রেজোয়ানের লাশ ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। গ্রামবাসীও ভয়ে ঘটনাস্থলে আসতে ভয় পাচ্ছে। দিনাজপুরের এসপি রুহুল আমিন বলেন, হাবিব নাশকতার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় পরিবারের সদস্যরা হামলা করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে চারটি গুলি চালায়। কাল (আজ) রেজোয়ানের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হবে। আর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় হাবিবের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করবে পুলিশ। চিরিরবন্দর থানার পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, হামলায় আহত পুলিশের এএসআই মোস্তাফিজুর রহমান, রবিউল ইসলাম, কনস্টেবল হাবিবুল্ল্যাহ ও জাহাঙ্গীর আলমকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতা
লে ভর্তি করা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More