দুর্গাপুর: দুর্গাপুর উপজেলার হোজা অনন্তকান্দি গ্রামে ঋণগ্রস্থ হয়ে একই পরিবারের ৫ সদস্য কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পেয়ে আমজাদ হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যাক্তিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের দিকে ওই গ্রামের পশ্চিম পাড়ায়। আমজাদ হোসেন ওই গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে বলে জানা গেছে। ছেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর সময় বাবা আজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম, ছেলের বউ রোজিনা বেগম ও নাতনি আপনকেও সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পাওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে পরিবারটি এমনটিই দাবি করেছেন প্রতিবেশীরা।
আমজাদ হোসেনের প্রতিবেশীরা জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের দিকে হোজা অনন্তকান্দি গ্রামের আমজাদ আলীর সঙ্গে তার বাবা আজিম উদ্দিনের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। প্রায় ২০ লাখ টাকা ঋণের দায় নিয়ে গোটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছিল গত কয়েক মাস ধরে। ঘটনার রাতে বাবা-ছেলের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আমজেদ আলী কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করবে বলে ঘোষণা দেয়। এরপর ঘরে গিয়ে বিষপান করে সে। তার সাথে সাথে বাবা আজিম উদ্দিনও স্ব-পরিবারে আত্মহত্যা করবে বলে ঘোষণা দেয়। এসময় প্রতিবেশীরা ওই বাড়ির সদস্যদের কান্নাকাটির শব্দ শুনে বাড়িতে ঢুকে আমজেদ আলীর নিকট থেকে কীটনাশকের বোতল কেড়ে নিয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে। তবে কিছুটা কীটনাশক পান করে ফেলায় আমজাদকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
উদ্ধারকারীদের মধ্যে রাহেদুল ও জালাল নামের দুই প্রতিবেশী জানান, আজিম উদ্দিনের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভিতরে কান্নাকাটির শব্দ শোনা যায়। এরপর ভিতরে গিয়ে দেখি আজিমের ছেলে আমজেদ বিষের বোতল নিয়ে বিষপান করেছে। এ সময় তার হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে অন্যরাও আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে পরিবারের সদস্যরা কেউ আমজাদকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি।
আমজাদ হোসেনের বাবা আজিম উদ্দিন জানান, প্রায় ৩ বছর আগে ছেলে আমজাদকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা সুদের মাধ্যমে নিয়ে এক আদম ব্যাপারীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এরপর ওই টাকা নিয়ে সেই আদম ব্যাপারী পালিয়েছে। তখন থেকেই একের পর এক ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে আজিমের পরিবারে। পরে সুদ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ তুলে সুদ ব্যবসায়ীকে দেয়া হলেও টাকা শোধ হয়না। এই ভাবে চলতে চলতে ঋণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ লাখ টাকায়। এত টাকা ঋণ শোধ করা তার পরিবারের পক্ষে একেবারে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন এনজিও‘র লোকজন এবং এলাকার এক দাদন ব্যবসায়ী চড়া সুদে নেয়া টাকা পরিশোধের জন্য নানা ভাবে চাপ দিয়ে আসছিল আজিম এবং তার ছেলে আমজাদকে। এ নিয়েই মূলত প্রায় সময় তাদের বাড়িতে দ্বন্দ চলছিল। এ কারণে পরিবারের সব সদস্যই এক সঙ্গে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে।
দুর্গাপুর থানার ওসি পরিমল কুমার চক্রবর্তী জানান, লোকমূখে এ ধরনের খবর শুনেছি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।