চাঁদপুরের মাছের আড়তগুলোতে মৌসুম ছাড়াই প্রচুর ইলিশের আমদানি হচ্ছে। তবে ইলিশগুলো আকারে ছোট। গত ক’দিন ধরে জেলেদের জালে চার গুণ বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে।
ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরে ইলিশ আমদানির কারণে জেলে, মাছ ব্যবসায়ী, দাদনদার ও শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তারা কর্মচঞ্চল ও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে আড়তগুলোতে ইলিশের যে দাম হাঁকা হয়েছে, তাও অত্যন্ত চড়া।
মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, চরফ্যাশন, দৌলতখান, হাতিয়া, রামগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলার নিম্নাঞ্চল থেকে প্রতিদিন আড়তগুলোতে হাজার মণ ইলিশ আসছে।
আর এসব ইলিশ কোল্ড বাক্সের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে মাওয়া, ঝিনাইদহ, যশোর এবং ঢাকা, গাজীপুর, সিলেট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী দুলাল গাজী জানান, দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশ আমদানি হলেও চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আর ছোট আকারের যেসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেসব ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
অপর ব্যবসায়ী দেলোয়ার দেওয়ান জানান, এ বছর ইলিশের প্রকৃত মৌসুম বৈশাখ থেকে কার্তিক পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে মৌসুম না হলেও প্রাকৃতিকভাবেই এখন ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে, আড়ৎদার ও দাদনদাররা ইলিশ মৌসুমে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে নদীতে ও সমুদ্রে ইলিশ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। ওইসব ব্যবসায়ীরা এখন ইলিশ আমদানির কারণে সেই সময়ের খরচ অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারছেন বলে এ ব্যবসায়ী জানান।
তিনি আরো জানান, ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল থাকায় প্রতি কেজি বড় সাইজের ইলিশ চার/পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ দাম কমে তার অর্ধেক হয়েছে।
প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজ চোকদার বলেন, ৫০ বছরের জীবনে শীতের সময় এ ধরনের ইলিশ আমদানি হতে দেখিনি। এ সময় প্রচুর ইলিশ আমদানি হচ্ছে, দামও তুলনামূলক কম। তবে আকারে একটু ছোট। ২শ’থেকে ৫শ’গ্রামের ইলিশেই আমদানিই বেশি হচ্ছে।
মাছ কিনতে আসা ক্রেতা রেজাউল করিম, সুজন খান জানান, গত বছর শীতে ইলিশ পাওয়া যায়নি। ইলিশ আমদানির খবর পেয়ে কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, মাছ সাইজে ছোট, তবে দামটা বেশি।
শরীয়তপুর ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মোক্তার খান জানান, এ বছর শীতে যে ইলিশ ধরা পড়ছে, তা ছোট হওয়ায় প্রতি কেজিতে পাঁচটি থেকে তিনটি পাওয়া যাচ্ছে। তিনশ’গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ১৪ হাজার, পাঁচ/ছয়শ’গ্রাম ২৪ হাজার, সাত/আটশ’গ্রাম ৩৫ হাজার, এক কেজি ইলিশ ৬০/৬৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৪৫টি আড়তে এসব সাইজের ইলিশ আমদানি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫শ’মণ। অন্য সময় আমদানি হতো চার/পাঁচশ’মণ।
ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন গাজী জানান, এখন চাঁদপুর মাছঘাট ঈদের উৎসবের মত লাগছে। শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দিন-রাত কাজে ব্যস্ত। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের আয় বেড়েছে। আগে শ্রমিকরা প্রতিদিন পাঁচশ’টাকা রোজগার করলেও এখন ১৫শ’থেকে দুই হাজার টাকা আয় করছেন।
ওই ব্যবসায়ী আরো জানান, মৌসুমি ইলিশে যে স্বাদ পাওয়া যেতো বর্তমানে আমদানি হওয়া ইলিশে সেই স্বাদ অনেক কম হবে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, মৎস্য বিভাগ থেকে টাস্কফোর্সের যৌথ প্রচেষ্টায় জাটকা মৌসুমে জাটকা নিধন নিয়ন্ত্রণ রাখায় এসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
Prev Post
Next Post