লালমনিরহাট: যৌথ বাহিনীর একের পর এক অভিযান ও অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের পরও শান্ত হচ্ছে না সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। প্রতিনিয়ত চলছে জামায়াত-শিবির’র বিক্ষোভ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। আর তাদের এই বিক্ষোভ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বাঁধা দিতে গেলে ঘটছে সহিংস ঘটনা।
দলীয় কোন্দল ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে নেতাদের পাওয়া না পাওয়ার হিসাবের ক্ষোভে আওয়ামী লীগ তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। জামায়াত-শিবির’র পর এবার আওয়ামী লীগ বহিরাগত ক্যাডার দিয়ে গত বৃহস্পতিবার জেলার বাউড়া এলাকায় মাঠ দখলে চেষ্টা করলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সহযোগিতার অভাবে তাদের সেই মিশনও ব্যর্থ হচ্ছে।
সব মিলে এ জেলার ৫ টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বড়ই অসহায়।
গত ৩ দিনে ৪২ বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীকে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়নি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৩ টি সংসদীয় আসন নিয়ে লালমনিরহাট জেলা গঠিত। লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্চ-আদিতমারী) আসনে কালীগঞ্চ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান আহম্মেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও লালমনিরহাট-১ আসনের প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন ও লালমনিরহাট-৩ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিঃ আবু সাঈদ দুলাল গণসংযোগ করতে মাঠ পর্যায়ে যেতে পারছে না।
লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন কয়েক দিন ধরে বিএনপি-জামায়াত-শিবির’র বাধা উপেক্ষা করে গণ সংযোগের চেষ্টা করলেও খোদ আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতার অভাবে তিনি অনেকটা ব্যর্থ হয়ে গেছে।
পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল এ আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি অনেকটা ক্ষিপ্ত। যে কারণে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনকে সংগঠনিক ভাবে তেমন সহযোগিতা করছে না।
মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মোতাহার হোসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর এলাকার বেশ উন্নয়ন করলেও দলীয় কর্মীদের কোন মূল্যায়ন করা হয়নি। তার পরিবারের কতিপয় লোকজন নিজের আগা গোছাতে ব্যস্ত হয়ে ছিল। সংগঠনকে শক্তিশালী করেন নাই। যে কারণে এখন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অনেকটা অভিমানী হয়ে বের হচ্ছে না।
একই অবস্থা লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনেও। এ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিঃ আবু সাঈদ দুলাল দলীয় কোন্দলের কারণে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। এ আসনে জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক মতিয়ার রহমান মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা অনেকটা নিরবতা পালন করছে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বপন-মামুন গ্রুপ প্রার্থী ইঞ্জিঃ আবু সাঈদ দুলালকে সহযোগিতা করলেও সিরাজুল-জাহাঙ্গীরের অপর গ্রুপ মুখ ফিরে নিয়েছে। ফলে এ আসনেও আওয়ামীলীগ প্রার্থী ইঞ্জিঃ আবু সাঈদ দুলাল নিবাচর্নী প্রচারনায় যেতে পারছে না।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গোটা জেলাকে রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা ছাড়া বাকি ৪ টি উপজেলায় তাদের দখলে। এই উপজেলা গুলোতে অনেকটা অসহায় হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ।
এদিকে শুক্রবার জেলার পাটগ্রাম উপজেলা থেকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ২২ নেতা কর্মীকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তাদের মধ্যে অনেকেই বহিরাগত সশস্ত্র ক্যাডার বলে জানা গেছে।
জামায়াত-শিবিরের বিক্ষোভ ও অবরোধের কারণে কয়েকদিনে এ জেলায় ৫টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ভাবে তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মতিয়ার রহমান জানান, দলীয় কোন্দল থাকলেও প্রার্থী নিয়ে এ জেলায় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ সহিংসতার রাজনীতি বিশ্বাস করে না। আর বিএনপি-জামায়াত সহিংসতার পথ বেচে নিয়েছে। যে কারণে আমাদের একটু সমস্যা হলেও ভোটের রাজনীতিতে আমরা এগিয়ে আছি।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপি’র সম্পাদক হাফিজার রহমান জানান, গত ৫ বছরে এ জেলায় আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের উপর অনেক নির্যাতন করেছে। যে কারণে সাধারণ মানুষ মাঠে নেমে ১৮ দলীয় জোটের সাথে আওয়ামী লীগের মোকাবেলা করছে।
এইচ এন