কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট, একদিনে ১৪ হাজার কোটি টাকা ধার

0

নগদ অর্থের সংকট মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একদিনে (সোমবার) ১৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। বাকি ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে কলমানি মার্কেট থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ জমা সমন্বয় ও গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই মূলত এ অর্থ ধার করা হয়। এর মধ্যে তারল্য সংকটে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংক ধারের সিংহভাগ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তার বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের ১৭ শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। ইসলামি ব্যাংকগুলোকে রাখতে হয় সাড়ে ৯ শতাংশ। এসব অর্থ প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সমন্বয় করতে হয়। আজ ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এ কারণে সোমবারই ব্যাংকগুলোকে ওই অর্থ সমন্বয় করতে হয়েছে। ওই অর্থ সমন্বয় না করলে বা ঘাটতি থাকলে জরিমানা দিতে হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক জরিমানা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী তারল্য না থাকায় কয়েকটি ব্যাংক বিধিবদ্ধ আমানতের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।

এছাড়া গ্রাহকদের নগদ অর্থেও চাহিদাও বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় গ্রাহকরা এখন ব্যাংক থেকে সঞ্চয়ের টাকা তুলে দৈনন্দিন খরচ মেটাচ্ছেন। এছাড়া নানা অনিশ্চয়তায় আক্রান্ত হয়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিজের হাতে রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময় ধরেই তারল্য সংকটে ভুগছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ, আমানতের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। ফলে ব্যাংকে আমানত জমা হচ্ছে কম। এদিকে খেলাপি ঋণও বেড়ে গেছে। ফলে বাড়ছে ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ। এতে ব্যাংকের অর্থের একটি বড় অংশই আটকে গেছে। এ অবস্থায় অনেক ব্যাংকই তাদের মূলধন পর্যাপ্ততা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না। একই সঙ্গে প্রভিশনও চাহিদা অনুযায়ী রাখতে পারছে না। এসব কারণেই এখন ব্যাংকগুলো বেশি মাত্রায় ধার করছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি না হলে সংকট আরও বাড়বে। ফলে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর করতে হবে।

একই ব্যাংকে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের পরিমাণও আগের চেয়ে কমেছে। ব্যবসায়ীদের হিসাবেও বাড়তি টাকা থাকছে না। কারণ ডলারের দাম বাড়ায় বাড়তি টাকা দিয়ে ডলার কিনে সেগুলো দিয়ে এলসি খুলছেন।

এছাড়া ব্যাংকগুলোও বৈদেশিক ঋণ ও আমদানি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকায় ডলার কিনছে। ফলে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। গত জুলাইয়ে বিক্রি করেছে ১১৪ কোটি ডলার। এ খাতে চলে গেছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এসব মিলে তারল্য সংকট বেড়েছে।

এ সংকট মেটাতে সোমবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তা নিয়েছে ৫ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে এসব অর্থ ধার নিয়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কলমানির মাধ্যমে নিয়েছে ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কলমানিতে সর্বোচ্চ সুদ উঠেছে ৮ শতাংশ, যা আগে সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত ছিল। এছাড়া স্বল্পমেয়াদি ধারের সুদের হার ৯ শতাংশে উঠেছে। এ হার ৯ শতাংশের বেশি উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। কলমানিতে সর্বনিু সুদ ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। ১২৮টি লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ধার করেছে ৭ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ২ থেকে ১৪ দিন মেয়াদে ধার করা হয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো নিয়মিতই ধার করে। এটি একটি রুটিন প্র্যাকটিস। এটি কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোয় তারল্যের জোগান বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। রিজার্ভ থেকে ডলার কেনা বাবদ ব্যাংকগুলোর মোটা অঙ্কের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে আসছে। এর বিপরীতে তারল্য সহায়তার আওতায় ব্যাংকগুলোয় অর্থের জোগান বাড়ানো হয়েছে।

উৎসঃ   যুগান্তর
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More