জীবন চলছে কিন্তু প্রাণহীনভাবে। সবকিছুই চলছে; কিন্তু স্বাভাবিকতা নেই। সংসার জীবনে টিকে থাকার লড়াইয়ে খাবার ও অন্যান্য খরচ কমিয়ে দিয়ে মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। চেখে দেখলে মনে হয় সবকিছুই ভালোভাবে চলছে। কিন্তু বাস্তবে সবই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। ডলার সঙ্কট, ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা, রেমিট্যান্সের প্রবাহে ভাটা, গার্মেন্ট পণ্যের ক্রেতা কমে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা উৎপাদন কমে যাওয়া, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া চলমান অর্থনীতির সব সূচকই অস্বাভাবিক, অগ্রগতি নেই। উন্নয়ন ও উৎপাদনের কথামালার প্রচারণা দৃশ্যমান থাকলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলার সঙ্কট, জ্বালানি সঙ্কট, মূল্যস্ফীতি, খাদ্যসহ সব সঙ্কটই আরো ঘনীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো দেখা গেলেও অধিকাংশ সূচকই অস্বস্তিতে। এর মধ্যে অন্যতম মুদ্রাস্ফীতি। কাগজে-কলমে এখনো দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, ৬ শতাংশের একটু বেশি। ফলে সাধারণ মধ্যবিত্তের এখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির চিত্র নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেছেন, আমাদের অর্থনীতি ভালো নেই। সব দিক থেকেই। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মূল্যস্ফীতির শিকার। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের যে সামান্য সঞ্চয় ছিল, সেই সঞ্চয় এখন তারা বেঁচে থাকার জন্য ভেঙে ভেঙে খাচ্ছেন। একদিকে অর্থনীতি এগোচ্ছে না বা উৎপাদনশীল হচ্ছে না। অর্থনীতি এগোচ্ছে না মানে হচ্ছে উৎপাদন বৃদ্ধি বা প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। মানুষও বেকার হচ্ছে। অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে বা তাদের শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা এত সহজ নয়।
মহামারি করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা করলেও বিপাকে ফেলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার নেতিবাচকপ্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। দেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করলেও অধিকাংশ সূচকই নিম্নমুখী বা স্বস্তিকর অবস্থায় নেই। ডলার সঙ্কটে এখনো আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে রফতানি আয়ের প্রধান উৎস অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রতিদিনই কমছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এছাড়া ডলার সঙ্কটের কারণে নিত্যপণ্যের এলসিও খোলা যাচ্ছে না। এমনকি প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ বিপর্যস্ত প্রায় অর্থনীতির বিভিন্ন্ন সূচকÑ এমনটিই মতো আর্থিক খাতের গবেষকদের। আর্থিক খাতের মন্দায় দেশের খাদ্য, জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার পাশাপাশি সঙ্কটে ফেলেছে কৃষি উৎপাদনকে এবং সংকুচিত হচ্ছে মানুষের কাজের ক্ষেত্র। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপেও এমন আশঙ্কার তথ্য ব্যক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বলছে, দুর্ভিক্ষ আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে বন্যা ও খরা বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ডলার সঙ্কট, জ্বালানির উচ্চমূল্য, মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতি দেশ ও মানুষকে বিপাকে ফেলছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, বাংলাদেশে খাদ্যের দাম দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, বিশ্বে দুর্ভিক্ষ আসছে। কাজেই স্পষ্টতই বাংলাদেশেও এর প্রভাব থাকবে। পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এরই মধ্যে দেশের মানুষ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। অবশ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিপিডি কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এতে সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের আমদানিতে কর রেয়াত দেয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট ভাঙা, ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সারে ভর্তুকি প্রদান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেছে সিপিডি। যদিও সরকারের দায়িত্বশীলরা এ নিয়ে চিন্তিত নয়; তাদের মতে, উন্নয়ন মহাসড়কে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা চলছে তা সহসাই কাটবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। সঙ্কট উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবেই কোন পদক্ষেপই নেই। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে শঙ্কা বাড়াচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
আর্থিকখাতের সঙ্কট নিয়ে সম্প্রতি সিপিডি ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ কোন পথে?’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে সঙ্কট উত্তরণের নানা দিক তুলে ধরেছে। সিপিডির মতে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সাত ধরনের সঙ্কটে পড়েছে। সেগুলো হলো ডলার সঙ্কট, জ্বালানি সঙ্কট, মূল্যস্ফীতি, খাদ্য সঙ্কট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কট। সঙ্কটের মধ্যে ডলার, জ্বালানি, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সঙ্কটের কারণে অন্য সঙ্কটগুলো আরো ঘনীভূত হচ্ছে। কাজেই এই সাত সঙ্কট বাংলাদেশের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে সিপিডি। এরআগে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছার আশঙ্কা করা হয়। মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক সঙ্কটে রয়েছে বাংলাদেশ, যা আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সবকিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে; সরকার অবশ্য সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে এ বছর চালের উৎপাদন কম হয়েছে; বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আমনের চাষ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। তাই সামনে কঠিন পরিস্তিতির মুখে পড়তে হচ্ছে দেশকে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করলেও সব সূচকই স্বস্তিকর অবস্থায় নেই। এর মধ্যে অন্যতম মুদ্রাস্ফীতি। কাগজে-কলমে এখনো দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, ৬ শতাংশের একটু বেশি। তবে বাজারদরের প্রতিফলন সরকারি পরিসংখ্যানে নেই। প্রায় সব ধরনের পণ্যের দরই ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সাধারণ মধ্যবিত্তের এখন সংসার চালানোই দায়। এমনকি প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা দেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ঘরে।
এদিকে করোনার প্রবল সংক্রমণের সময়েও প্রবাসী আয় ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু চলতি বছর প্রবাসী আয় টানা কমেছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশের জন্য নতুন দুশ্চিন্তার নাম প্রবাসী আয়ের নিম্নগতি। একই সঙ্গে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছালেও এখন তা ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট রিজার্ভের পরমাণ ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা এবং ঋণ হিসেবে দেয়া আট বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে নেট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
অপরদিকে করোনার ঠিক আগে বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। অতিমারিতে কত মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, এর কোনো সরকারি হিসাব নেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের জরিপ বলছে, দেশে এখন ৪২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। প্রতিদিন এই হার বাড়ছে।
এদিকে দেশে আয়- সম্পদ বৈষম্যও বাড়ছে। একটা সময় বলা হচ্ছিল করোনা-পরবর্তী বিশ্বে উত্তরণ কবে ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের। অর্থাৎ অর্থনীতি নিম্নমুখী হয়ে তা দীর্ঘ সময় বজায় থাকবে। পরে বলা হলো উত্তরণ হবে ইংরেজি ‘ভি ‘অক্ষরের মতো। অর্থাৎ অর্থনীতি দ্রুত নেমে গেলেও আবার দ্রুত ওপরে উঠে যাবে। আর এখন বলা হচ্ছে, উত্তরণ ঘটবে ইংরেজি ‘কে’ অক্ষরের মতো। এর অর্থ হলো, এক দলের উত্তরণ হবে ঊর্ধ্বমুখী, অন্য দল চলে যাবে নিচে। অর্থাৎ মূলত দেশে দেশে প্রকট হবে আয় ও সম্পদে বৈষম্য। দেশে এমনিতেই বৈষম্য বাড়ছিল। করোনার পর তা আরও প্রকট করছে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এছাড়া সরকার করোনা মোকাবিলায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা তহবিলের জোগান দিয়েছে। এর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে শিল্প খাতে। এই অর্থের কত অংশ উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই এ প্রশ্ন তুলেছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ গণনা দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো যা আগামী জুন পর্যন্ত বজায় রাখার দাবি জানিয়েছে। সুতরাং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কী পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে ফিরে আসবে, সে প্রশ্ন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের। তাই খেলাপি ঋণ আগামী দিনে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে ৬ শতাংশ করেছে। আইএমএফের বৈশ্বিক ইকোনোমিক আউটলুক প্রতিবেদনের সর্বশেষ সংস্করণে এ প্রাক্কলন করেছে। যদিও এপ্রিলে আইএমএফ জানিয়েছিল, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনে জ্বালানি ও খাদ্যের উচ্চমূল্য, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হার ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে পূর্বাভাস সংশোধন করে ৬ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি স্বল্পতা, মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ধীরগতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক। আইএমএফ আরও জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি গড়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে, যেখানে সরকারের বাজেট লক্ষ্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
এদিকে অর্থনীতিবিদদের উপর্যুপরি ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত মঙ্গলবার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির আকাশচুম্বি লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কোণ্ডঅর্ডিনেশন বৈঠকে চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমানোর এই প্রস্তাব করা হয়। এর আগে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. মো. কাওসার আহমেদ বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় বৈশ্বিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমানোর প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, জ্বালানি, সার, খাদ্য ও অন্যান্য সমস্ত উপকরণ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সম্প্রতি বেড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের জিনিসগুলোর দাম কমবে, তেমন কোনো ইঙ্গিতও নেই। বড় বাজারগুলোতে মন্দার প্রভাবের কারণে রফতানির চাহিদাও কমে যাবে। এ কারণে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি মূল বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হবে।
অপরদিকে দেশের ব্যাংকিং খাত গভীর সঙ্কটে পড়েছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি করোনা কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দুর্বল শাসন ও সংস্কারের অভাবে এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতে সুশাসনের তাগিদ দিয়ে খেলাপী কমানোর দাবি জানিয়েছে সিপিডি। সিপিডি’র মতে, যুদ্ধর প্রভাব নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতার কারণের ব্যাংক ব্যবস্থা নাজুক হয়েছে। ৬/৯ সুদহার ব্যাংকে টাকা রাখার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই সুদহারের সীমা তুলে দিতে বলছে সিপিডি। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা কোভিডের কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি হয়নি। এই খাত দীর্ঘদিন ধরে দুর্বলতার মুখোমুখি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, বিভিন্ন সূচকে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। দুর্বল সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে এই খাত ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।
অবশ্য পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অর্থনীতিতে যে মন্দা চলছে, তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের বিষয়টি আইএমএফ’রর পূর্বাভাসে বিবেচনা করা হয়নি। একই সঙ্গে আইএমএফ ইকোনমিক রিভিউর সম্পাদক পিয়েরে-অলিভিয়ের গোরিঞ্চাস সতর্ক করেন, এখনো সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আসেনি এবং অনেক মানুষই ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়বেন। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিলে কষ্টে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ। আর এরই মধ্যে যাঁরা গরিব হয়ে গেছেন, তারা থাকবেন সবচেয়ে বিপাকে।