সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের চেষ্টা করছে আদানি গ্রুপ। বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছে জোর লবিংও চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিদ্যুৎ ও বন্দর খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রাথমিক সমঝোতা স্বাক্ষরও হয়েছে।
এমনিতেই বাংলাদেশ বর্তমানে তীব্র ডলার সংকটে ভুগছে, যার জন্য আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে। আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে এলে ডলারের একটি বড় অংশ দিতে হবে তাদের। এতে দেশের ডলার সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সঙ্গে সংকটে পড়তে পারে দেশের ব্যাংকিং খাত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণায় ভারতের গুজরাটি শিল্পগোষ্ঠী আদানিদের অস্বাভাবিক বাণিজ্যিক উত্থানের পেছনে জালিয়াতি ও শেয়ারবাজারে কারচুপি করার অভিযোগ করেছে। তাদের প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের কারণে শেয়ারবাজারে এই গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে ধস নামে। আদানিদের বিভিন্ন শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যায়। বাজারে ছাড়া তাদের এফপিও (তালিকভুক্ত কোম্পানির বাজারে অধিকতর শেয়ার ছাড়া) ধুঁকতে থাকে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় ৮০ হাজার কোটি রুপি। আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নিকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারতীয় জীবন বীমা করপোরেশন (এলআইসি) ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বিপুল লোকসান হয়। ভারতের অর্থনীতিতে লুটপাট করেছে আদানি গ্রুপ এমনটি বলছে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা। ভারতজুড়ে এখন আদানি গ্রুপের লুটপাট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। শুধু ভারত নয়, বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটিকে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে আদানি গ্রুপ তার কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। গৌতম আদানির প্রায় ১৩ হাজার কোটি ডলার সম্পদের ১০ হাজার কোটি ডলারই অর্জিত হয়েছে গত তিন বছরে স্টক জালিয়াতির মাধ্যমে, অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানোর মধ্য দিয়ে।
আদানি গ্রুপের বাংলাদেশকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত হলেও এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিদ্যুতের দাম ও ক্যাপাসিটি চার্জ তুলনামূলক বেশি বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে বিদ্যুৎ কিনতে হতে পারে এই আদানি গ্রুপ থেকে।
অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ও আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে আদানি গ্রুপ। এমনিতেই দেশের ভোজ্য তেলের বাজারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডে (বিইওএল) সিঙ্গাপুরের উইলমার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ভারতের আদানি গ্রুপ রয়েছে যৌথ মালিকানায়। কোম্পানিটি রূপচাঁদা, ফরচুন, কিংস, মিজান ও ভিওলা ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেল বিক্রি করে। এখন বাংলাদেশ ভোজ্য তেলের বাজার পুরোপুরি দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আদানি গ্রুপ। চাল প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত চাল বিক্রির পাশাপাশি রাইস ব্র্যান অয়েলের ব্যবসায়ও আসতে চায় তারা।
আবার চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জোন নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে আদানি গ্রুপ। এ ছাড়া আদানি গ্রুপ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রকল্পে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি তুলে জমি ভরাটের কাজও করেছে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে বন্দরের জেটি ও টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আদানি গ্রুপ। এসব বিনিয়োগ বাংলাদেশে হলে সব প্রকল্পে অর্থ সরবরাহ করবে বাংলাদেশ সরকার। তাদের পুরো ডলার চাহিদা মেটাতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এতে চলমান ডলার সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। সংকটে পড়তে পারে দেশের পুরো ব্যাংকিং খাত।
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কে সব সময় বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিতে হয়। বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আদানি গ্রুপ হোক বা যে কোনো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের সম্পর্কে অর্থনীতিতে অভিযোগ থাকে, তাদের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ভুল পদক্ষেপ হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায় না। তাই যে কোনো বিনিয়োগে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
bd Pratidin