আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে বাংলাদেশ

0

Hasina_Shorbodolio_gvt-300x218 জাতিসংঘ, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোকে অবজ্ঞা এবং গোঁয়ার্তুমি করে পাতানো নির্বাচনের কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন আর  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির দুই দফায় টেলিফোন এবং চিঠি, অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর একাধিকবার ঢাকা সফর করে সংকট সমাধানের চেষ্টা, বান কি মুনের দুই প্রস্তাব কোনো কিছুই গ্রাহ্য করেননি সর্বদলীয় (!) সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ বিদেশের সব প্রস্তাব-অনুরোধ, মধ্যস্থতার চেষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৫ জানুয়ারি পাতানো নির্বাচন করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আন্তর্কাতিক সম্প্রদায়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ট্রাষ্টি ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন একাধিকবার বাংলাদেশে ফোন করেছেন। তিনি বিশ্বের অন্য কোন দেশে এতবার ফোন করেছেন এমন উদাহরণ খুবই কম। জন কেরির মতো লোক, যিনি হয়তো বাংলাদেশ কোন ভূখণ্ডে অবস্থিত তা স্পষ্ট করে জানেন না, তিনিও ফোন করেছেন। তারপরও বাংলাদেশে কেন কোন ব্যত্যয় নেই। এটা তাদের কাছে বিস্ময়কর। সমস্যারতো সৃষ্টি হবেই।

 

আর্ন্তাতিক দুনিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশ। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো। তারা বাংলাদেশের সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চান। কিন্তু দিল্লীর ইন্ধনে সরকার তাদের কোনো প্রস্তাব গ্রাহ্য করছে না। পাতানো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। পুলিশের গুলিতে রক্ত ঝড়ছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর জুলুম নির্যাতন হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশকে ‘কারাগার’ হিসেবে অভিহিত করেছে। কেউ কেউ বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বলেও রিপোর্ট করা হয়েছে।

মিডিয়াগুলোতে বলা হয় সরকারের একগুঁয়েমির কারণে জাতিসংঘ মিশনে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য নেয়ার প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মার্কিন বাজারে গার্মেন্টেস এর যে কোটা প্রথা বাতিলের সময়সীমা ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আবার দীর্ঘায়িত হতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকো ঢাকা সফরে এসে দুই দলকে সংলাপে বসালেও সরকারের অনমনীয়তার কারণে সংকটের সুরাহা হয়নি। বানকি মুন টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেটাও মানা হয়নি; বরং জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে আওয়ামী লীগ থেকে প্রচার করা হয় জাতিসংঘের মহাসচিব আওয়ামী লীগের সংবিধান প্রেমের পক্ষেই কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে ড. ইউনূস ইস্যুতে শীতল সম্পর্ক বিরাজমান। এখন গণতন্ত্র এবং দেশের কোটি কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার হনন করে পাতানো নির্বাচন ইস্যুতে দেশকে চরম সংঘাতের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের সরকারের গোঁয়ার্তুমি নিয়ে আলোচনাই শুধু হচ্ছে না;বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছে।

গতকালও বাংলাদেশে বিজয় দিবসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। সরকারের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কূটনৈতিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচিতের যোগদান থেকে বিরত থেকেছে। এমনকি বঙ্গভবনে অনুষ্ঠানও বর্জন করেছে। তবে সরকারের অনুরোধে ২৭ দেশ নিয়ে গঠিত এই জোটের মাত্র একজন কূটনীতিক বঙ্গভবনে উপস্থিত হন। পদ্মা সেতু দুর্নীতির ইস্যুতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টই শুধু নয়; প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। কিন্তু সরকারের গোঁয়াতুর্মিতে পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে পারে দেশ।

সবদিক দিয়ে সরকারের উপর চাপ আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় এক সভায় যোগ দেয়ার আগে সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক কংগ্রেস কমিটির সদস্য গ্রেস মেং জানিয়েছেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ না হলে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ফের শুনানি করে একটি সিদ্ধান্তে আসবেন তারা।

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ কংগ্রেস সদস্য বলেন, এ পরিস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য কোনোভাবেই সহায়ক নয়। মেং বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড আর রয়েস ও কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যান জোসেফ ক্রাউলিসহ ছয় কংগ্রেস সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে চিঠি দিয়ে সমাঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশে এখন যে ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে, তাতে আমরা সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সন্দিহান।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বান কি মুনের মুখপাত্র মার্টিন নেসারকি সংবাদ ব্রিফিংয়ের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরে মহাসচিব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বান কি মুন আগেও এই পদক্ষেপকে নিরুৎসাহিত করেছেন। যে কোনো পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের বিরোধীতা উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, মহাসচিব নির্বাচনপূর্ব সংবেদনশীর সময়ে ফাঁসি কার্যকর করাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার পর বাংলাদেশের সবপক্ষকে শান্ত থাকার ও সহিংসতা পরিহারেরও আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে নিজেদের সমন্বয় সভার ‘কারণ’ দেখিয়ে গতকাল বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন ইইউ’র রাষ্ট্রদূতেরা। পরে সরকারের দেনদরবারের ফলে বিকেল চারটায় বঙ্গভবনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রসঙ্গত; এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিত করার কথা জানিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বৃটিশ কমনওয়েলথ বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদা হুসেইন ওয়ার্সীও ঢাকা এসে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড না দিতে এবং সবদলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের কথা বলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইইউ দূতদের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন করার সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে আইনসভাতেও বাংলাদেশ ইস্যুতে আলোচনা হচ্ছে। এর ফলে কি হবে তা হুট করে বলে ফেলা মুশকিল। বাংলাদেশ নিয়ে এখন দেশিয় উদ্বেগ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানার গত ৬ ডিসেম্বরের সংখ্যার একটি প্রতিবেদনের শিরোনামেই বলা হয়েছে, ‘সেনাবাহিনীর জন্য দুঃসংবাদ : জানুয়ারিতে শান্তি মিশনে সৈন্য প্রেরণ স্থগিত, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন চায় না জাতিসংঘ’।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র মাসখানেক বাকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে চাইছেন। এজন্য তিনি সবধরনের চেষ্টাও করছেন। বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে দিতে রাজি নন তিনি। ইতোমধ্যে তাকে ভারতের তরফ থেকে যথাসময়ে নির্বাচন করার জন্য বলা হয়েছে। কোনো কারণে সমস্যা হলে তাকে রেসকিউ করে নিয়ে যাওয়া হবে সেই রকমও আভাস দেয়া হয়েছে। ইন্ডিয়া এ ব্যাপারে সবধরনের প্রস্তুতি রেখেছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং মূলত শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করার জন্য এবং ট্রানজিটের চূড়ান্ত চুক্তির জন্যই ঢাকায় আসছেন।

মূলত তিনি সমঝোতার কথা বলেও আসলে বিএনপির সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হবে,এটা তারা চাইছে না। তারা চাইছে বিএনপিকে বাদ দিয়েই সরকার নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসবে এবং সরকার তাদের সব চাওয়া পূরণ করবে। এর মধ্যে ট্রানজিটের চূড়ান্ত চুক্তি একটি। এজন্য সবধরনের সহায়তা করবেন। সেই সঙ্গে তিনি সরকারের পাশে ভারত আছে, সেটাও নিশ্চিত করবেন। তবে শেখ হাসিনা এভাবে কেবল ভারতকে পাশে নিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করলেও তা পারবেন কি না,এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। সূত্র বলছে,শেখ হাসিনা ও ভারতের পরিকল্পনা সফল হবে না। তারা একা হয়ে যেতে পারে। সবাই মিলে এমন অবস্থা করতে পারে এবং দেশের অবস্থা এতটাই খারাপ হতে পারে যে শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাচন থেকে পিছু হটতে হতে পারে। তার পরিকল্পনা হচ্ছে নির্বাচন ৫ জানুয়ারি করবেনই।

কিন্তু কোনো কারণে করতে না পারলেও বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে পারে,এমন কোনো পথ তিনি তৈরি করবেন না। এজন্য তিনি বিএনপিকে বাদ দিয়েই এগিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে দেশের এই অবস্থা থেকে দেশ ও জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারেন। তাদের সহায়তায় সরকার পরিচালিত হতে পারে। জরুরি অবস্থাও ঘোষণা হতে পারে। তিনি সরকার প্রধান থেকেই কাজ করার চেষ্টা করবেন। ’

বাংলাদেশ সফর শেষে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। এ সপ্তাহেই বান কি মুনের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করবেন তারানকো। বাংলাদেশের চলমান সংকটের অবসান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারানকো। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ.কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলার সময় এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারানকো। তিনি বলেন, আশা করি বাংলাদেশে নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তারানকোর প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠকের কথা আছে মোমেনের। ওই বৈঠকেই জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন।

নিউইয়র্কের সূত্রমতে, বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কিছুতেই কাজ না হলে জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশের সৈন্য প্রত্যাহার ও ফেরত পাঠানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জাতিসংঘে জানুয়ারিতে নতুন করে যে ফোর্স যাওয়ার কথা সেটাও পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত বন্ধের সম্ভাবনা থাকবে একথা এখন আমেরিকান প্রবাসীদের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রমতে, তারানকো তার রিপোর্টে পুরো প্রেক্ষাপট বর্ণনাও করবেন বান কি মুনের কাছে। এরপর বান কি মুন সিদ্ধান্ত নেবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বান কি মুন আরও একবার দুই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে এটা নির্ভর করবে সরকারের মনোভাবের ওপর। এর আগে তিনি শেখ হাসিনাকে ফোন করলে তিনি সংসদের কথা ও সংবিধানের কথাই বলেছেন। জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও সবদলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করবেন তেমন কথাই বলেছেন। বান কি মুন বাংলাদেশের পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এটা তিনি শেখ হাসিনাকে লেখা সর্বশেষ চিঠিতেও লিখেছেন। সেখানে বর্ণনাও করেছেন নিউইয়র্ক বৈঠকের কথা। এরপরও যদি শেখ হাসিনা এবং নিজ দাবিতে অনড় থাকা খালেদা জিয়া অনুরোধ রক্ষা না করেন তাহলে তিনি বাধ্য হবেন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, প্রয়োজনে তিনি একবার বাংলাদেশ সফরও করতে পারেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

এদিকে শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন মহল থেকে বোঝানো হয়েছে, জাতিসংঘ সৈন্য প্রত্যাহার করার হুমকি দিলেও কোনো কাজ হবে না। কারণ এ সময়ে জাতিসংঘ চাইলেই তা করতে পারবে না। তারা বিভিন্ন দেশে সৈন্য পাঠিয়েছে। হঠাৎ করে যদিও ওই সব সৈন্য ফেরত পাঠায় তাহলে এটা জাতিসংঘের জন্যই সমস্যা হবে। বাংলাদেশের মতো এত সৈন্য অন্য কোনো দেশ পাঠাবে না। এতে করে তারাও একটা সমস্যায় পড়বে। নতুন সৈন্য না নেয়া হলে পুরনো যারা আছে তাদেরও মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, সেই ক্ষেত্রে তাদের ফেরত পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে উল্টো চাপে পড়বে জাতিসংঘ।

এদিকে একাধিক সূত্র বলেছে, শেখ হাসিনার কাছেও বিকল্প রয়েছে যে, পশ্চিমা মহলের তরফ থেকে সহযোগিতা তুলে নেয়ার পরও কেবল সেনাবাহিনী ও ভারতের সহযোগিতা থাকলে তিনি নির্বাচন করবেনই। এখনও এ দুটোই তার ফেভারে রয়েছে। তিনি এটাও জানেন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন। মাঠ পর্যায়ের সবাই উপরের দিক-নির্দশনা অনুযায়ী কাজ করবেন এমন সিদ্ধান্ত বহাল রাখা যাবে কি না,এটা নিয়ে কিছুটা দোটানা রয়েছে। দোটানার কারণে সরকার চিন্তা করছে যে,বেশি আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে উপরের নির্দেশ যদি সবাই না মানে তা হলে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।

বিশেষ করে দেশে যেভাবে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে এটা কারো পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তারা নিজেরাও উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ কারণে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য আগেভাগে সেনাবাহিনী নামাতে চাইলেও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। একে তো সেনাবাহিনীর এখন শীতকালীন প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলছে। তাদের বেশির ভাগই এবার দূর-দূরান্তে নয়, কাছাকাছি প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তাদের নামাতে হলে শীতকালীন প্রশিক্ষণে ব্যাঘাত ঘটবে। এ ছাড়াও তারা প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে বেশি সময় ধরে মাঠে থাকতে পারবে না। যদিও সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই সেনাবাহিনীকে আরও পরে নামানোর ব্যাপারে ভাবছে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তবে সদস্যদের মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, তারা প্রস্তুতও আছে। আর এই প্রস্তুতি নিয়েই তারা মাঠেও প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছে। যখন তাদের ডাকা হবে তখনই তারা আবার মাঠে নির্বাচনী কাজে সহায়তা করতে আসবে।আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে বাংলাদেশ।

 

এম এস 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More