বঙ্গবন্ধুর চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ

0

Khorshedবাংলাদেশ ইতহাসের জোড়ালো দাবি রাখতে পারে- এই শিরোনামে যে, এ জাতির বহুসন্তান বীরত্বের ভূমিকায় এ জাতিকে রাহুগ্রাস (শত্রুর হাত) থেকে রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখেছিল। যদি বলি তিতুমীর, নিধিরাম, সিরাজউদ্দৌলা এবং ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের রফিক, জব্বার, শফিক, সালাম, বরকত সহ আরো কত সন্তানরা। সকল বীর সন্তানদের শুধু দেশ প্রেম নয়, ছিল দৃঢ় আত্মচেতনায় এ বাঙালিয়ানার সাংস্কৃতি রক্ষা করারও মন।
এ জাতির দু-প্রান্তে কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে। এক হয়েছিল ১৭৫৭ সালে মীর জাফরি বাংলার শেষ নবাবের পতন করে আর অন্যটি হলো স্বাধীন বাংলার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবুর রহমানকে ৭৫ এ হত্যার মধ্য দিয়ে। কারণ ব্যাখ্যা করলে দীর্ঘ সূত্র পাওয়া যায়। ব্যক্তি মুজিবুর রহমান ভয় ছিল না। ব্যক্তি মুজিবুর রহমানের এদেশের মানুষের প্রতি যে উদার দেশ প্রেম, আদর্শের রাজনীতি করার প্রয়াস তা দীর্ঘ দিন হলে, ছক্কা কিংবা (লুডু খেলার) পুট/কানা বলি- তার দুটোর একটাও শুত্রুদের ছকে পড়বে না। সুতরাং মুজিব আদর্শের পাহাড় রীতি মত ভয়ের কাঁপনি জাগতো শত্রুদের মনের শরীরে। তাই তারা তাকে হত্যার নেশায় মেতে উঠলো কতিপয়- কাপুরুষিত সেনারা। এরা সেনা নয় এরা ছিল প্রকৃতি স্বাধীনতা বিরোধী বিপদগামী শত্রু। কথায় আছে না- উদার পথে রাজনীতি করলে উদ্বাস্থ্য শত্রুর অস্ত্রাঘাত হয়। অর্থাৎ শত্রু কখনোই ঘামায় না, সে সুযোগ বুঝে অস্ত্রাঘাত করবেই। কিন্তু এখানে ভিন্ন বিশ্লেষণ যুক্তি আছে। ব্যক্তি মুজিবকে আস্ত্রাঘাত করেনি কেবল। ব্যক্তি মুজিবের দেহটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের একটি মানব স্তম্ভ। এখানে আঘাত করার অর্থই হলো স্বাধীনতার স্তম্ভে আঘাত হানা। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের দামে অর্জিত বাংলার জমিনে অনন্ত কালের শোকের ও কলঙ্কের ছায়ার রেখা পাত করা।
ব্যক্তি মুজিবুর রহমানকে আমার উপলব্ধি একজন আদর্শের পথদ্রষ্টা, চেতনার জায়গা, নেতৃত্বের গুণের আগামী প্রজন্মের অহংকার। বঙ্গবন্ধুকে যারা নিজের স্বার্থের জন্য দেখে তাঁরা, না বোঝা দেশপ্রেম, না বোঝে মহান মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য। বঙ্গবন্ধু কারও স্বার্থের প্রতীক হতে পারে না, আমাদের আগামী রাষ্ট্রনীতি রাষ্ট্র নেতৃত্বে যারা আসবেন তাদের অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জবিত হতে হবে। কেননা, মুজিব চেতনা ব্যতীত একটি রাষ্ট্রের নাম থাকতে পারে না। কারণ বাংলাদেশের নামটি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিল। শুধু নাম সৃষ্টির গল্পকার একজন অবশ্যই থাকবে। আর সেই গল্পের গল্পকার- আমাদের মহান নেতা বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে ঘিরেই আমাদের সংগ্রাম, তাঁকে ঘিরেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জনে ত্যাগের স্তম্ভ অবশ্যই অনেক আছে। কিন্তু শ্রেষ্ঠ স্তম্ভ অবশ্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনে যেমন ঐ জাতির প্রস্তুত থাকতে হয় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য, তেমনি ঐ জাতির সর্বোচ্চ নেতৃত্বও থাকতে হয়। সুতরাং প্রস্তুত থাকা ও নেতৃত্বের উভয়ই সমান ঝুঁজি থাকা দরকার। অন্যথায় স্বাধীনতার আকাঙ্খা বিনাশ হয়। তাই ১৯৭১ সালের মহান মুজিযুদ্ধের সেই সূত্রই আমাদের ছিল। আর তার ফলাফলও আমাদের ১৬ই ডিসেম্বরে আসলো- বিজয়। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ঐ জাতির সাংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হয়। অথবা একটি জাতিকে অর্জন করতে হলে ঐ জাতির ভাষাকে অর্জন করতে হয়। গুণিলোকের কথা গুলো অত্যন্ত যথার্থ তাৎপর্যপূর্ণ। ঠিক ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট আমাদের ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে কেনা দেশের সাংস্কৃতি ও ভাষা বাহন রূপে স্তম্ভ শ্রেষ্ঠ সন্তান সঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাই ছিল এ জাতিকে ধ্বংস করে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির আগমন ঘটানো। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সোঁনালী সময়গুলো এদেশের মানুষের জন্য সৎগ্রাম করে গেছেন, তা অবশ্যই আমাদের সমালোচনার উর্ধ্বে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রেষ্ঠ সন্তানের জায়গায় রেখে আগামীর বাংলাদেশের রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনীতি নিয়ে সমালোচনা করতে পারি। আর এটাই হবে আমাদের শুভবুদ্ধির পরিচয়। ১৯৭৫ সালে তাঁকেসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল। এটা কোন ব্যক্তি মুজিবুর রহমানকে হত্যা নয়। বরং সদ্য নতুন রাষ্ট্রের শিরোনামটি যেন শত্রু মেলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শেষ কীর্তনে পরিণত করাই ছিল উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধুকে আমাদের মাঝে শূন্য রেখেছে। কিন্তু ব্যক্তি মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও ত্যাগের মহান পথটি আমাদের ধারণ করতে সে অধ্যায় রেখে গেছেন। তাই ১৫ই আগষ্ট শাহাদাত বার্ষিকী নয়, এই দিনটি জাতিকে শোক থেকে শক্তি রূপে অসাম্প্রদায়িক ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহসযোগাবে। এটাই হবে আগামীর বাংলাদেশ।

লেখকঃ
প্রভাষক এইচ সিদ্দিকুর রহমান খোরশেদ
বিএ (অনার্স), এমএ (ইংরেজি), এলএলএম,
লেখক, গবেষক ও কবি।
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ নাগরিক লীগ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More