আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে প্রতিবাদ এবং ঘৃণা জানানোর এমনতর হৃদয়ছোঁয়া কথামালা কোনো দিন শুনিনি। কোনো নাটক-সিনেমা কিংবা যাত্রাপালাতেও দেখিনি। এমনকি গল্প উপন্যাসেও পড়িনি।
তিনি আরো বলেছেন, দেশের বর্তমান অবস্থাই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। বর্তমান অবস্থা বলতে তিনি বর্তমানের রাজনৈতিক সঙ্কটকে বুঝিয়েছেন। আর রাজনৈতিক সঙ্কট বলতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, প্রতিশোধ গ্রহণের আকাক্সক্ষা এবং একে অপরকে অমানবিকভাবে ছোট করার প্রবৃত্তিকে বোঝাননি। তার বুদ্ধিমত্তা এবং প্রজ্ঞা বর্তমান সঙ্কটের যে কারণ চিহ্নিত করেছে তার সাথে আমি সহমত পোষণ করি।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন পুরো জাতি আজ ধর্মের প্রশ্নে কট্টর অবস্থানে চলে গেছে। একদল ধর্মনিরপেক্ষতার স্লোগান তুলে তাদের প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য অব্যাহত চেষ্টা ও তদবির করে যাচ্ছেন। অপরপক্ষ ধর্মকে আঁকড়ে ধরে দিনকে দিন চরমপন্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। একপক্ষ যত বেশি মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ বলে চিৎকার করছে তত বেশি নিজেরা দুর্বল হচ্ছে এবং প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন তার সারমর্ম হলোÑ রাষ্ট্রে বিচার চাওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। একটি হত্যাকাণ্ডকে বিচারের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৎ, দক্ষ এবং নির্লোভ কর্মকর্তার নাম কেউ বলতে পারবে না। অন্য দিকে পুরো বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার মতো সুন্দর সুন্দর নজির এ দেশে নেই। এ অবস্থায় বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘোরা কিংবা আহাজারি করা একটি নিষ্ফল এবং ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। একজন শিক্ষিত, জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাবান মানুষ হিসেবে তিনি সাধারণ আমজনতার মতো আহাজারি করে নিজের এবং পরিবারের সীমাহীন ক্ষতির ক্ষতকে আরো গভীর, পচনশীল এবং দুর্গন্ধময় করবেন না- এটাই তো স্বাভাবিক।
নিহত দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের মতো অধ্যাপক অজয় রায়ও বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে খুবই নামকরা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনিও তার নিহত পুত্র অভিজিতের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে আশাবাদী নন। উল্টো অভিযোগ করেছেন যে, হত্যাকারীরা তাকেও রেহাই দিচ্ছে না। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি জীবনের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকবেন আর রাষ্ট্র কেবল ফাঁকা বুলি আওড়াবে এমন দুঃস্বপ্ন নিয়ে জীবনের ঘানি টানা যে কতটা দুঃসহ তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বলতে পারেন। গত এক বছর আগের কিংবা গত সাত বছর আগের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি, রাহাজানি, অনিয়ম, দুর্বৃত্তপনা কিংবা জাল-জালিয়াতির একটি বিচারও এ দেশে হয়নি। কিছু লোক এসব অপকর্মকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল এবং সময় ও সুযোগমতো নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়ে জাতির সামনে অদ্ভুত এবং বিরক্তিকর প্রাণী হিসেবে তাদের বদনখানিকে পরিচিত করে তোলার সৌভাগ্য অর্জন করার সফলতা প্রদর্শন করতে পারছে।
নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে উচ্চবাচ্য করা লোকগুলো আজ কোথায়? তাদের সাম্প্রতিক উত্থান, আলো ঝলমলে মসৃণ ত্বক, গাড়ি, বাড়ি, অফিস, পদ-পদবি এবং ঈশান-বিষাণের হুঙ্কারের পেছনে যে ক্ষমতার অমৃত সুধারস যোগমায়া হিসেবে কাজ করেছে তা বোঝার জন্য খুব বেশি পাণ্ডিত্যের দরকার নেই। শেয়ারমার্কেটের লুটেরা, ব্যাংক ডাকাতির খলনায়কেরা এবং মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসের গডফাদাররা যখন সর্বোচ্চ ক্ষমতাবানদের পাশে বসে মুচকি মুচকি হাসে, দাড়ি খাউজায় এবং মোচে তা দেয় তখন ভুক্তভোগীরা কতটা অপমানিত বোধ করে এবং ক্ষমতার রাজনীতিকে কতটা প্রবল ঘৃণা নিয়ে প্রত্যাখ্যান করে তা বোঝার ক্ষমতা যদি রাষ্ট্রের থাকত তা হলে প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক হয়তো ছেলে হত্যার বিচার চাইতেন।
রাষ্ট্রব্যবস্থার বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদ যারা দখল করে আছেন তাদের সবার প্রথম পরিচয় যে তারা ক্ষমতাসীন দলের আস্থাভাজন। গত সাত বছরের এসব পদ ও পদবিতে উঠে আসা লোকজন এত দ্রুত এবং এত অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন যে, তাদের প্রশাসনিক দক্ষতা, মানসিক বিকাশ, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং সংশ্লিষ্ট পদবির জন্য কাক্সিক্ষত আত্মবিশ্বাস খুবই নি¤œমানের। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়- এরশাদ আমলের একজন উপসচিব কিংবা এসপি পর্যায়ের কর্মকর্তার যে মান, ভারিক্কি এবং দক্ষতা ছিল তা বর্তমানের সচিব পর্যায়ের কতজন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছে তা খোঁজার জন্য অনেক কষ্ট করতে হবে। যেসব কর্মকর্তা দলীয় পরিচয়ে উঁচু পদে বসেন তাদের আত্মমর্যাদাবোধ, লোভ এবং স্বার্থপর মানসিকতার কাছে তাদের অন্তর্নিহিত মানবিক গুণাবলি এবং জ্ঞান-গরিমা মারাত্মকভাবে মার খায়। অধিকন্তু এসব লোকজন হলো সরল সোজা গোঁয়াড় গোবিন্দ প্রকৃতির মানুষ। তারা কাউকে উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। নির্বুদ্ধিতার কারণে তাদের উপকার করার প্রচেষ্টা প্রায়ই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উঁচু পদে বসা দলীয় লোকজনের বাইরে আরেকটি ধড়িবাজ শ্রেণী রয়েছে। তারা কোনো দল করে না বা করলেও পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী বোল পাল্টিয়ে ফেলে। তারা প্রচণ্ড ধূর্ত এবং কুটিল বুদ্ধিশুদ্ধির অধিকারী। এসব লোকজন সব সময় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার অসাধারণ প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার দরুন দ্রুত কাক্সিক্ষত জিনিস দখল করে বসে। তাদের অতিরিক্ত দলবাজি এবং ক্ষমতাসীন দেখে অন্য কর্মকর্তারা কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। দলবাজ কর্মকর্তা এবং বোল পাল্টানো ভণ্ড দলবাজদের বাইরে আরেকটি শ্রেণী রয়েছে যারা নিজেরা যেমন প্রচণ্ড দুর্নীতিবাজ তেমনি ম্যানেজ মাস্টার হিসেবে তাদের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা তারা ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের পেছনে ব্যয় করে। ফলে যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা ভালো থাকে এবং লোভনীয় পদ-পদবি বাগিয়ে বসে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাদ দিয়ে আমরা যদি দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকাই তবে দেখব যে, দলীয় প্রধানের করুণা, সাহায্য এবং সমর্থন ছাড়া দলের পদ-পদবি পেয়েছেন এমন একজনও নেই। দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততা, নিষ্ঠা, তৃণমূলে জনপ্রিয়তা এবং দেশব্যাপী পরিচিতি রয়েছে এমন অনেকেই পদ-পদবি তো দূরের কথা দলীয় অফিসে পা রাখতে পারেন না। ফলে আমাদের রাজনীতিতে রীতিমতো আকাল শুরু হয়েছে। এখানে নীতির দুর্ভিক্ষ চলছে এবং দুর্নীতির মহোৎসব শুরু হয়েছে। দলীয় প্রধানের দয়ায় থানা পর্যায়ের তৃতীয় সারির নেতা যেমন জাতীয় বিবেক হিসেবে পুরো জাতিকে সকাল-বিকেল দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তদ্রুপ এমন সব লোকজন মন্ত্রী-এমপি হয়ে প্রশাসনের ওপর খবরদারি করছেন যারা শিক্ষাজীবনে সব সময় পেছনের বেঞ্চে বসতেন। প্রতিটি পরীক্ষার আগে যাদের জ্বর আসত এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগের রাতে পেটে চিনচিনে বেদনার উদ্ভব হতো। সরকারি চাকরির ক্যাডার সার্ভিস তো দূরের কথা- সাবইন্সপেক্টর পদের লিখিত পরীক্ষা কিংবা ইউডি অর্থাৎ আপার ডিভিশনাল ক্লার্ক পদের ভাইভা পরীক্ষায় পাস করার দুঃসাহস তাদের কোনো কালে ছিল না। এসব লোক যখন ডিসি-এসপিকে চড়-থাপ্পড় মারে- মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব থেকে শুরু করে আরো বড় বড় কর্মকর্তাকে মারধর করে তখন প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক সাহেবের মতো গুণী মানুষ কার কাছে বিচার চাইতে যাবেন!
সাত বছর ধরে বাংলাদেশের প্রশাসনযন্ত্রে কেবল অযোগ্যদের জয়জয়কার এবং উল্লাস নৃত্যের দাপট অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে। আমি অন্তত ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবির কথা বলতে পারব সেখানে ছয় বা সাত বছর ধরে একই কর্মকর্তা বসে আছেন কেবল দালালি, অকর্মন্যতা এবং দলবাজিকে অবলম্বন করে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওসব পদে কোনো কর্মকর্তা দু-তিন বছরের বেশি চাকরি করতে পারেননি। এর বাইরে কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং অপেশাদারিত্ব রীতিমতো রেকর্ড স্থাপন করলেও তারা কিন্তু ঠিকই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ডিবির ডিসি পদবির এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠল। অভিযোগকারী অকাট্য তথ্য প্রমাণ দাখিল করলেন। পুরো দেশ জানল- জাতি জানল এবং পত্রপত্রিকা ও মিডিয়া মহাদর্পে তা প্রকাশ করল। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তির একটি লোমও কেউ ছিঁড়তে পারল না। সে নাকি এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলার এসপি। তিনি সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছেন এবং সাধারণ মানুষ যাতে বিচার পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করছেন!
আরেক পুলিশ কর্মকর্তার নির্বুদ্ধিতা এবং গোয়ার্তুমির বিষয়ে আমার কাছে আক্ষেপ করেছিলেন বিজিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। হেফাজতের সমাবেশ থেকে মুসল্লিরা যাতে বেরিয়ে যাওয়ার একটি নিরাপদ পথ পেয়ে যায় এই লক্ষ্যে বিজিবি সেদিনের সমাবেশের লোকজনকে তাড়িয়ে সায়েদাবাদ হয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ডেমরার দিকে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা বিজিবির অনুরোধ উপেক্ষা করে উল্টো কাজ করে বসেন। তিনি পলায়নপর মুসল্লিদের ওপর সর্বশক্তি চার্জ করে তাদেরকে বাধ্য করেন পুনরায় ঢাকামুখী হওয়ার জন্য। ফলে স্পর্শকাতর সেই অপারেশনটিতে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা শুরু হয় এবং উভয়পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায় বহু গুণে। এই ঘটনার পর বিজিবির শীর্ষ কর্তারা বহু দেনদরবার করেও সেই পুলিশ কর্তার টিকিটি স্পর্শ করতে পারেননি। নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার পর আরো অনেকের সাথে সেই কর্মকর্তাও বদলি হয়ে আসেন। তবে এবার তার জায়গা হয় আরো গুরুত্বপূর্ণ পদে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অফিসের বড়কর্তা পদে বসে সেই লোকটি সরকারকে কেমন সব আগাম গোয়েন্দা রিপোর্ট দিতে পারেন তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়।
দেশের প্রশাসনযন্ত্রের সব স্তরে নৈতিক অবক্ষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোনো সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার, সুশাসন কিংবা সেবার জন্য সরকারি অফিস আদালতে পারতপক্ষে পা বাড়ায় না। সরকারি অফিসগুলো এখন জনগণ পীড়নের চর্চার সেল হিসেবে কাজ করছে। তারা নিরীহ জনগণের কাছ থেকে ইচ্ছেমাফিক সরকারি পাওনা এবং নিজেদের ঘুষ আদায় করবে। প্রভাবশালীদের সাথে শলাপরামর্শ করে সরকারি পাওনা বা কর ফাঁকি দেয়ার রাস্তা বের করে দেবে এবং ক্ষমতাবানদের সেবাদাস হিসেবে তাদের সব অন্যায় আবদার অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বলতে এখন বোঝায় কোন কর্মকর্তা কতটা নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা এবং কূটকৌশলে সরকারের প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে পারল- তার ওপর। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সুশাসন কায়েম, আইনের শাসনের পথ তৈরির প্রচেষ্টা এখন কাজীর গরুর মতো- অর্থাৎ কেতাবে আছে গোয়ালে নেই।
সব মিডিয়াতে সরকার সমর্থকেরা রাতদিন গলা ফাটিয়ে বলছে- দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। জনগণ গণতন্ত্র চায় না- কেবল উন্নয়ন চায় আর এই উন্নয়ন কেবল আওয়ামী ভাবধারা এবং আদর্শের মাধ্যমেই সম্ভব। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা পাঁচ-ছয় বছর ধরে একই বক্তব্য প্রদান করছে। তারা গুলি করে লোকজনকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করছে এবং বন্দুকযুদ্ধ নামের একখানা ছোট কবিতা বারবার পড়ে শোনাচ্ছে। অন্য দিকে দুর্বৃত্তরা যখন কোনো চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে বগল বাজাচ্ছে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হালকা একটু দাঁত বের করে অভিনব মুচকি হাসি দিয়ে বলছে- আমরা অপরাধীদেরকে গোয়েন্দা জালে আবদ্ধ করে ফেলেছি- ওদের পালানোর পথ নেই। তারপর হালুম! হুলুম তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলছে- এ কাজে ওমুক টিম, তমুক টিমের সংশ্লিষ্টতা এবং এ দল-ও দলের ইঙ্গিত আছে। অতিসম্প্রতি তারা বড়ভাই তথ্য আবিষ্কার করে সারা দুনিয়ার অপরাধ বিশেষজ্ঞকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের বিস্ময়কর তৎপরতা এবং অপরাধী শনাক্ত করার দক্ষতা সরেজমিনে দেখার জন্য বেশ কয়েকবার এফবিআইর ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা, কেজিবি এবং ইন্টারপোলের কর্তারা গোপনে এবং প্রকাশ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেছে। এখন তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে গবেষণাপত্র লেখা শুরু করে দিয়েছে যার শিরোনাম হলো- আইএসআই আছে- আইএসআই নেই। জঙ্গি আছে- জঙ্গি নেই। তালেবান কখনো আলকায়েদা এবং আল কায়েদা কখনো তালেবান!
সরকার-সরকারি দল এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সবাই মিলে দেশবাসীর সামনে এমন এক ভাবমূর্তি হাজির করছে যা দেখে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের মতো গুণীজন বলছেন- বিচার চাই না- শুধু সুমতি চাই। আর সাধারণ মানুষ বলছেন- বিচার লাগবে না- প্লিজ একটু বাঁচতে দিন!
লেখক: গোলাম মওলা রনি
(ফেসবুক থেকে)