আমি কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি: সাদিয়া

0

ঢাকা: বাংলা চলচ্চিত্রে যারা আইটেম গানে অভিনয় করছেন তাদের নাম বলতে গেলে সাদিয়া আফরিনের নাম চলে আসে। পিরোজপুর সদরে জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ছোটবেলা কেটেছে পিরোজপুরেই। বর্তমানে মিরপুরের সরকারি বাংলা কলেজে ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্স করছেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রে আইটেম গান, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, পড়াশোনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন বাংলামেইলের সঙ্গে। আজকের বাংলামেইলের ফেস টু ফেস বিভাগের অতিথি সাদিয়া আফরিন।

বাংলামেইল: পৃথিবীতে তো বিভিন্ন ধরনের পেশা আছে, কেনো চলচ্চিত্রে আসলেন?
সাদিয়া আফরিন: একটা সময় আমি ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম যেহেতু আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় কোনো সরকারি মেডিকেলে সুযোগ পাই নি। তাই আর প্রাইভেট মেডিকেল বা অন্যকোন দিকে যাওয়া হয়নি। আর একটি বিষয় হল আমি ছোটবেলা থেকেই নাচের সঙ্গে জড়িত। আর ফিল্মে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ অনেক আগে থেকেই ছিল। সুযোগ পেলাম তাই কাজ শুরু করে দিলাম।
বাংলামেইল: চলচ্চিত্রে কাজ শুরুর গল্পটা যদি বলতেন…
সাদিয়া আফরিন: ২০১১ সালে বিনোদন বিচিত্রা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা ১২ এর মধ্যে ছিলাম। তারপর থেকে একটু একটু করে পথ চলছি। চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার। এ  পর্যন্ত আমি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। যেগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ৫টি চলচ্চিত্রে আইটেম কন্যা হিসেবে অভিনয় করেছি।

IMG_9551
বাংলামেইল: ফিল্মেতো সবাই হিরোইন হিসেবে কাজ করতে চায়, আপনি কেনো শুধু আইটেম কন্যা হিসেবে অভিনয় করছেন?
সাদিয়া আফরিন: প্রথমে যখন বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করি তখন সবাই বলত প্রধান চরিত্রে অভিনয়ে করার কথা। তারপর সবকিছু মিলে আর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা হত না। যারা আমাকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার কথা বলতো প্রথমে, তারা পরে আবার বলে আইটেম কন্যা হিসেবে অভিনয় কারার কথা। তাদের কথামত কয়েকটি ছবিতে পারফর্মও করলাম। তারপর সবাই দেখি আইটেম গানে অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব দিতে লাগল। এরপর ৭-৮ মাস আমি কোনো আইটেম গানে অভিনয় করিনি। এখন ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে আমার প্রধান উদ্দেশ্য প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার।
বাংলামেইল: নিজেকে আইটেম গানের জায়গায় পাকাপোক্ত করার কথা ভাবছেন কি?
সাদিয়া আফরিন: আপতত চিন্তার মধ্যে নেই। তারপর যেগুলোতে অভিনয় করেছি সেখানে ভালোভাবে অভিনয় কারার চেষ্টা করেছি। বেশিরভাগ পরিচালক প্রযোজকের চাপ থাকে তাড়াতাড়ি কাজ করিয়ে নেওয়ার। সবার এক্সপ্রেসন তো আর সমান হয় না। কেউ একটু এক্সপ্রেসন দিলেই হয় আবার আমার ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। তবে আমি চেষ্টা করি। শুধু খোলামেলা পোশাক পরিয়ে আইটেম গানে অভিনয় করার পক্ষে আমি নেই। তাহলে সৌন্দর্যের চেয়ে অসৌন্দর্য বেশি হবে। এ ধারা যদি পাল্টায় তাহলে এ ক্ষেত্রে অভিনয় ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা আছে।

Untitled-1
বাংলামেইল: বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আইটেম কন্যা হিসেবে কোন দিকটার পরিবর্তন চান?
সাদিয়া আফরিন: যখন একটা ছবির পরিকল্পনা পরিচালক প্রযোজকরা করেন তখন গানের বিষয়গুলো সংগীত পরিচালকের কাছে আগেই পৌঁছে যায়। কিন্তু আমার হাতে যখন গানগুলোর কাজ আসে তখন সময় থাকে মাত্র দু থেকে তিন দিন এত অল্প সময়ের মধ্যে নাচের মুদ্রা সব ঠিকভাবে অনেক সময় তোলা বেশ কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠে। যার কারণে অনেক কাজ নিজের মনের মত করে করতে পারি না। আর বাজেটের তো একটা বিষয় থাকেই। এত কম বাজেট যার কারণে আমরা অন্যদের তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছি আইটেম গানে। ভালো কাজের জন্য ভালো টাকা ব্যয়ও করতে হবে। বাজেট বাড়ানো, স্টেজ, কস্টিউমস, লাইট, ভালোমানের নাচের কোরিওগ্রাফারসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো একত্রে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারলে সুন্দর একটি আইটেম গান উপহার দেওয়া সম্ভব। নাহলে শুধু আইটেম গানের নামে গদ বাঁধা কাজ হবে।

IMG_9498
বাংলামেইল: যে তরূণীরা স্বপ্ন দেখে সাদিয়া আফরিন হওয়ার তাদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চান?
সাদিয়া আফরিন: যে কেউ স্বপ্ন দেখতেই পারে। আমি যখন ফিল্মে কাজ শুরু করিনি তখন স্বপ্ন দেখতাম যে আমিও একদিন বড়মাপের নায়িকা হব। শুধু সাদিয়া আফরিন নয়, কেউ যদি শুধু আইটেম কন্যা হিসেবে অভিনয় করতে চায় তাদেরকে বলব অবশ্যই ভালোভাবে নাচ শিখে আসতে হবে। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। এছাড়া বাহ্যিক চেহারার একটা বিষয় আছে। নিজেকে পুরোপুরি দশে দশ দিতে হবে। এক্সটা এক্সপ্রেশনের একটা বিষয়ও আছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা ক্লাইমেক্স হিসেবে কাজ করে। তাহলে আইটেম কন্যা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার সফল করা সম্ভব।
বাংলামেইল: অভিনয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক স্বীকৃতির একটা বিষয় আছে, আপনি যেহেতু আইটেম কন্যা হিসেবে অভিনয় করেন সেহেতু পারিবারিক বা অন্য কোন ক্ষেত্রে আপনাকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় কিনা?
সাদিয়া আফরিন: আসলে সবকিছুতো মানসিকতার উপর নির্ভর করে। পজেটিভ নেগেটিভ দুটোই আছে। প্রথমে খুব স্ট্রাগল করতে হয়েছে। মানুষ ভাবত মেয়েটা সকালে একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গভীর রাতে বাসায় ফিরে। অনেকের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন জাগত। এবং বাঁকা চোখে তাকাত। প্রতিবেশীদের বিভিন্ন কান কথাও সহ্য করতে হয়েছে। এখন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পর এ ধারণাটা কেটে গেছে। এখন সবাই বলে স্টার হয়ে গেছিস। এবং বেশ সম্মানও পাই সবার কাছ থেকে। সামাজিকভাবেও কোন সমস্যার মধ্যে পড়ি না। আর একটি বিষয় আমি কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি মাঝে মাঝে ফজরেরটা একটু বাদ পড়ে যায়। এছাড়া সামাজিক ক্ষেত্রে অন্যকোন ঝামেলা বা সমস্যার মধ্যে কখনও পড়তে হয়নি।

Untitled-2
বাংলামেইল: বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
সাদিয়া আফরিন: নীল ভালোবাসা আর ক্রাইম রোড নামে নতুন দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আর এখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের কথা রয়েছে। এদুটি ছবির কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় শিখছি। এবং নিজেকে গড়ছি সেভাবে। যাতে অভিনয় করতে গিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।
বাংলামেইল: আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সাদিয়া আফরিন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More