বলিউডে খ্যাতি আর বিলাসের মুখ দেখার পর জীবনের ওঠাপড়ার সঙ্গে খেই রাখতে পারেন না অনেকেই। অনেকের আবার স্বপ্নের আত্মপ্রকাশই হয়ে ওঠে না। ছোটখাট কিছু কাজের পরই হারিয়ে যেতে থাকেন দর্শকের মন থেকে। অবশেষে জীবনের স্রোতে এরাই জড়িয়ে পড়েন দেহব্যবসা বা মাদকপাচারের মতো বেআইনি চক্রে।
সম্প্রতি বেআইনি দেহব্যবসা চক্র চালানোর অপরাধে গ্রেফতার হয়েছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিশুশিল্পী শ্বেতা বসু প্রসাদ। একসময়ের বলিউডের প্রথম সারির নায়িকা মমতা কুলকার্নি আজ মাদকপাচারকারী ডন ভিকি গোস্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে অন্ধকার জগতের বাসিন্দা। শারলিন চোপড়া নিজেই জানিয়েছেন দেহব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা। দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রাজ কপূরের ছবির নায়িকা মন্দাকিনি। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বলিউডের উঠতি নামগুলো এভাবে ঝরে যায় অকালে?
কেন হয় এমনটা?
১. বলিউডের জীবনে বিলাস যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা। দৌড়ে টিকে থাকতে গেলে লাগাতার সাফল্য ধরে রাখতেই হবে। অনেক সময়ই দেখা যায় দারুণ ভাবে বলিউডে আত্মপ্রকাশ হয় কোনও অভিনেত্রীর। কিন্তু, সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারে না পরের ছবিগুলো। কমতে থাকে খ্যাতি, পারিশ্রমিক, কাজ এমনকী ছবিতে চরিত্রের গুরুত্বও। এদিকে, একবার সাফল্য চেখে ফেলা বিলাসবহুল জীবনের অভ্যাস কাটাতে পারেন না। তাই জীবনযাপনের জন্য বেছে নেন হাইপ্রোফাইল দেহব্যবসা বা এসকর্ট সার্ভিসের জীবন। এই জীবনে খ্যাতি না থাকলেও রয়েছে বিলাস।
২. বলিউডে বরাবরই নতুন মুখের ভিড়। অনেকের মাঝে কেউ কেউ বিশেষ ভাবে চোখেই পড়েন না। বড়সড় কোনও ছবিতে আত্মপ্রকাশের সুযোগ না পেয়ে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে করতেই একদিন ‘চেনা মুখ’ হয়ে যান। নতুন মুখের চাহিদায় গুরুত্ব হারিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে অভিনয় করতে থাকেন ‘বি’ বা ‘সি গ্রেড’ ছবিতে। সেখান থেকেই একসময়ে জড়িয়ে পড়েন বা বৈভবের টান স্বেচ্ছায় বেছে নেন দেহব্যবসা বা বেআইনি মাদকপাচারের মতো কাজ।
৩. এক অন্যধরনের ট্র্যাজেডির সম্মুখীন হতে হয় শিশুশিল্পীদের। ছোট থেকে অভিনয় করতে করতে পরিচিত হয়ে যান তাঁরা। বড় হয়ে পুরনো, পরিচিত মুখ হিসেবে কাজ পেতে অসুবিধা হয় তাদের। অন্যদিকে, বাড়তে থাকে প্রত্যাশার চাপ। পরিবার, পরিজনদের বিপুল প্রত্যাশা মেটাতে না পেরে ধীরে ধীরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। ছোট থেকে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পড়াশোনাও ঠিকমতো হয় না, তারওপর অতি পরিচিত মুখে অন্য কোনও জীবীকাও উপযুক্ত হয় না। এ দিকে ছোটবেলা থেকে বৈভবের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে বড় হয়ে আর সাধারণ জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না। অর্থের প্রয়োজনে তাই হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের এসকর্ট হয়ে যান তাঁরা। যতদিন জীবনে বিলাস রয়েছে, ততদিন চিন্তা নেই।
৪. অনেকের আবার পরিচিতিই হয়ে ওঠে না অভিনেত্রী হিসেবে। ইঁদুর দৌড়ের মাঝে কাজ শুরু করার আগেই কাস্টিং কাউচের শিকার হন। এইভাবেই কোনও বিশেষ প্রযোজকের সঙ্গে নাম জড়িয়ে গেলে কাজ পাওয়া হয়ে ওঠে আরও দুষ্কর। অবশেষে সেই প্রযোজকের অঙ্গুলী হেলনেই চলতে বাধ্য হন তাঁরা। ‘বি গ্রেড’ কিছু ছবিতে মুখ দেখানোর পাশাপাশিই চলতে থাকে বেআইনি চক্র।
৫. তবে বলিউডে টিকে থাকতে ভাগ্য ও প্রতিভার সঙ্গে যা প্রয়োজন তা হল ধৈর্য। ছবি ফ্লপ হওয়ার পরও সাফল্যের জন্য ধৈর্য ধরে রাখতে পারেন না অনেকেই। ফলে জীবনের বিলাস ধরে রাখার পন্থা হিসেবে বেছে নেন অন্ধকার পথ।