‘ওহ মাই গড! থ্যাংক ইউ সো মাচ ইন্ডিয়া। আই লাভ ইউ অল। আমি ভাবতেও পারিনি, আবারো গুগল সার্চে প্রথম স্থান পাব! শুভরাত্রি!’
১৭ ডিসেম্বর রাতের বেলা সানি লিওনের টুইট। ততক্ষণে সবখানেই চাউর হয়ে গেছে, ভারতবাসীর মন এখনো সানিতেই মজে রয়েছে ধারাবাহিকভাবে! টানা চার বছর বলে কথা। ‘পর্নো স্টার’ বলে যতই গালমন্দ চলুক না কেন, সানির প্রতি মোহ আদতেই কাটাতে পারছে না ভারতবাসী। সার্থক বটে সানির ‘আই লাভ ইউ অল’ বলে ওঠা! সে সঙ্গে নীল ছবির জগৎ ছেড়ে বলিউডে পাকাপাকি আসন তৈরি করার পরিকল্পনাও যে তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত নয়, সে বিষয়ে দ্বিমত করবেন না কেউই! কেন ভারতীয় দর্শকের এই সানি লিওন উন্মাদনা? তার কারণ তালাশ করতে গেলে অনেক কিছুই বিবেচনায় আনতে হয়।
সানি লিওনের বলিউডে আগমন ২০১২ সালে। ইরোটিক থ্রিলারকে রীতিমতো ফ্র্যাঞ্চাইজি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভাট ক্যাম্পের ‘জিসম-২’ ছবি দিয়ে। মনে রাখতে হবে, ‘জিসম’ দিয়ে বলিউড পেয়েছিল জন আব্রাহামকে! সে যা হোক, ‘জিসম-২’ এতটাই আলোচনায় ছিল, যার হিসাব মেলানো ভার। নীল ছবির শীর্ষস্থানীয় এক তারকা, যাঁর আবার কি না শরীরে খানিকটা বইছে ভারতীয় রক্ত, তিনি আসছেন বলিউডি ছবিতে। তাও আবার ‘জিসম’ ফ্র্যাঞ্চাইজি! উত্তেজনায়-শিহরণে ভারতবর্ষে তখন কাঁপাকাঁপি দশা। সেই আলোড়ন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও যে খানিকটা ছড়িয়েছিল, তা তো আর বলতে হয় না। রণদীপ হুড়া ও অরুণোদয় সিংয়ের সঙ্গে পর্দা গরম করে দেওয়া সব দৃশ্যে এলেন সানি, ছবি মোটামুটি ব্যবসাসফলও হলো। ছয় কোটি রুপি বাজেটের ছবি প্রথম উইকেন্ডেই কামাই করল ৩১ কোটি রুপি! সে সঙ্গে শুরু হলো বিতর্ক। বলিউডের কুলীন সমাজ থেকে আমদর্শকেরও বক্তব্য, পর্নো স্টার কেন বলিউডে?
ভারতীয় ছবিতে ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৃশ্য’ কিন্তু নতুন ব্যাপার নয়, হিন্দি ছবির আদিযুগে দেবিকা রানি আর হিমাংশু রাইয়ের ‘কর্ম’ ছবিতে ঐতিহাসিক চুমুর দৈর্ঘ্য কিন্তু এখনো পেরোতে পারেনি কোনো মেইনস্ট্রিম বলিউড ছবি। ভারতীয় ছবি বহু আগে থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক ছিল, মাঝখানে খেই হারিয়ে ফেলেছিল শুধু। আর সহজ ভাষায় বলতে, যে ভূমিতে বাৎস্যায়নের ‘কামশাস্ত্র’ জন্ম নিয়েছে, সেখানকার মানুষের তো এই বিষয়ে সহজাত মোহ থাকবেই!
ইরোটিক থ্রিলার বলিউডে ২০০০ সালের পর নতুন মোড়কে জনপ্রিয় করে তোলার পথিকৃৎ ভাট ক্যাম্প, তথা মহেশ ভাট। এ ছবিগুলোয় খুব নামীদামি তারকা নয়, বরং আলোচিত সেলিব্রেটি বা নতুনদেরই হাজির করা হয়েছে। ডিনো মোরিয়া-বিপাশা বসুর ‘রাজ’ দিয়ে শুরু, তার পর একে একে ‘জিসম’, ‘মার্ডার’, ‘আকসার’; আরো কত কী! যে যা-ই বলুক, সামান্য বাজেটে বক্স-অফিসে চমৎকার ব্যবসা করেছে সব ছবিই। ২০১২ সালে এই ঘরানায় বিপ্লব ঘটালেন ভাট-কন্যা পূজা ভাট। আপাদমস্তকে নীল ছবির শীর্ষস্থানীয় তারকা ও নির্মাতা সানি লিওনকে তিনি নিয়ে এলেন ‘জিসম’ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে। ব্যস, বাকিটা সানির জন্য কেবলই সাফল্যের ইতিহাস; গুগল সার্চ তো তাই বলছে!
অনেকের বক্তব্য, আগে সানির ‘ছবি’ থাকত কম্পিউটারের ‘লুকানো’ ফোল্ডারে, আর এখন মেইন ফোল্ডারে! তবে সে মনোভাব যেমনই হোক, সানি-দর্শনে আপত্তি নেই কারোই! সে বিষয়টি নির্মাতাদেরও ধরতে দেরি হয়নি। সুতরাং সানি লিওন নামের ব্রহ্মাস্ত্রটি এবারে প্রয়োগ শুরু হলো আইটেম সঙে। সেখানেও সানি জবরদস্ত, ‘বেবি ডল মে সোনে দি’ গান দিয়ে তো ‘বলিউডের বেবি ডল’ খেতাবও পেয়ে গেলেন।
সানি লিওনের প্রতি মোহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয়, ভারতে কখনোই নীল ছবির কোনো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকা বলিউডের মেইনস্ট্রিমে অভিনয়ে নাম লেখাননি। সুতরাং সানি লিওনের জন্য সার্চ আগের থেকে এখন বেড়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সে সঙ্গে আরেকটি বিষয়, সানি নিজেও তো ভারতীয়! স্বজাত্যবোধের একটি বিষয়ও এখানে কাজ করছে। অতীতে যাঁকে কেবল লুকিয়ে দেখতে হতো, তাঁকে এখন রীতিমতো সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যাচ্ছে।
এ ছাড়া রিয়েলিটি শোসহ বেশ কিছু টেলিভিশন শোতে নিয়মিত হয়ে উঠেছেন সানি। এমটিভির ‘স্প্লিটসভিলা’, ‘ওয়েবড’-এ তাঁর উপস্থিতি যথেষ্ট মনোযোগ কেড়েছে দর্শকের। এগুলোতে তাঁর উপস্থিতি দর্শকের আগ্রহকে করে তুলেছে আরো চনমনে। সে সঙ্গে বেড়ে চলেছে গুগল সার্চ জ্যামিতিক হারে!
রাখি সাওয়ান্ত কয়েক দিন মাথা গরম করে বলেছিলেন, সানি লিওনকে ভারত থেকে ভাগিয়ে দেবেন, প্লেনের টিকেটের খরচাও দেবেন তিনি নিজেই! সানি অবশ্য এ ধরনের কোনো মন্তব্যেই তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। তিনি সব সময়ই মিডিয়া সামলানোয় চরম ধৈর্যশীলতার পরিচয় দেন। যতই তাঁকে ‘পর্নো স্টার’ বলে সবাই গালমন্দ করুক, বারবারই তিনি জানান বলিউডের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা!
‘ল্যান্ড অব কামসূত্র’র জনতা এমন মানুষকে ভালো না বেসে কি পারে! হোক না তা গোপনে, প্রকাশ্যে কিংবা গুগল সার্চে!