পুরো ছবিতে তার একটা সংলাপও নেই, অথচ ‘বাজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির আসল তারকা হয়ে উঠলো হারশালি মালহোত্রা! তার নিষ্পাপ সরল চাহনিতে মুগ্ধ দর্শক। একটা কথা না বলেও সবার মন জয় করে ফেলেছে সাত বছর বয়সী এই পিচ্চি। বয়স কম হলে কি হবে, অভিনয়ে সে দারুণ। যাকে বলে একেবারে পাকা বুড়ি!
স্বয়ং তার সহশিল্পী সালমান খানও প্রশংসার বৃষ্টিতে ভেজাচ্ছেন তাকে। শুধু চোখের অভিব্যক্তিতে এমন অভিনয় খুব কম অভিনেত্রী করতে পারেন বলে বলিউডের এই সুপারস্টারের মন্তব্য।
কবির খান পরিচালিত ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এ হারশালি অভিনয় করেছে মুন্নি চরিত্রে। মেয়েটি কানে শোনে না, কথাও বলতে পারে না। তার দেশ পাকিস্তানে। কিন্তু ভুল করে ভারতে এসে পড়েছে। হনুমানভক্ত পবন চতুর্বেদির সঙ্গে একসময় দেখা হয় তার। এ চরিত্রে আছেন সালমান।
ছবিটি ব্যবসায় রেকর্ড গড়ায় হারশালির প্রতি কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন অনেকে। এই মেয়েটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ সবার। তাকে কীভাবে পাওয়া গেলো, সে কীসে পড়ে, সালমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সে কি বলেছিলো, দৃশ্যধারণের সময় মেয়েটি কী করতো- এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। এসবের উত্তর যারা খুঁজছেন, তাদের জন্য এই প্রতিবেদন।
অভিনয়ে আগেই অভিষেক হয়েছে হারশালির। সর্বশেষ লাইফ ওকে টিভি চ্যানেলের ‘লট আও তৃষা’ সিরিজে দেখা গেছে তাকে। এই সিরিজের মাধ্যমে অভিনয়ে ফেরেন ভাগ্যাশ্রী। তার মেয়ের চরিত্রে ছিলো হারশালি।
মজার বিষয় হলো, বড় পর্দায় ভাগ্যাশ্রীর অভিষেক হয়েছিলো সালমানের বিপরীতে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবির মাধ্যমে। এদিকে ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর আগে ‘কবুল হ্যায়’, ‘যোধা আকবর’ আর ‘সাবধান ইন্ডিয়া’য় অভিনয় করেছে হারশালি। শুধু তা-ই নয়, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী, হরলিকসসহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হয়েছে সে।
‘বাজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির মুন্নি চরিত্রের জন্য যুতসই শিশুশিল্পী পেতে পরিচালক কবির খান ও তার দলবলকে অনেক খাটতে হয়েছে। তারা এক হাজারেরও বেশি শিশুর অডিশন নিয়েছিলেন। অবশেষে হারশালির মাঝে মুন্নিকে খুঁজে পান কবির। কিন্ত তার মা কাজল মালহোত্রা বিশ্বাসই করতে পারেন নি সালমানের মতো তারকার ছবিতে প্রধান চরিত্রে নেয়া হচ্ছে তার মেয়েকে।
তবে ছবি মুক্তির আগে সব ধরনের প্রচারণামুলক কার্যক্রম থেকে তাকে সরিয়ে রাখা হয়। শুধু ছবি মুক্তির পরই গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি পেয়েছে সে। মেয়ের অভিনীত চরিত্র গোপন রাখতে তার মা-বাবাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে সই করতে হয়েছিলো।
হারশালির বয়স এখন ৬ বছর। সে মুম্বাইয়ের সেভেন স্কয়ার একাডেমিতে পড়াশোনা করে। পড়াশোনায়ও সে দারুণ। ‘বাজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে কাজের প্রস্তাব পেলে লেখাপড়ায় যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য স্কুল ছুটি থাকার সময় তার অংশের দৃশ্যধারণ করা হয়েছে।
ছবিটিতে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবার সালমান খানের সামনে এসেছে হারশালি। বলিউডের এই তারকাকে দেখেই সে বলে ওঠে, ‘তুমি কি আমাকে সুপারস্টার বানিয়ে দেবে ‘প্রশ্নটা শুনে তো সল্লু চমকে যান।
মেয়েটির মায়ের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এ কথা তাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি, সে নিজে থেকেই বলেছে। সালমান খান, কারিনা কাপুর খান, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর মতো তারকাদের ছাপিয়ে গেছে হারশালি মালহোত্রা।
কারিনা তো এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সালমানের সঙ্গে কাজ করলে সাধারনত আমিই সবার চেয়ে আদুরে থাকি। কিন্তু এবার ছিলো হারশালি। ও-ই ছবিটির সত্যিকারের তারকা। সেটে সবচেয়ে বড় তারকা ছিলো সে। ওর সঙ্গে কাজ করার আগে খেয়াল রাখতাম, হারশালি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে কিনা। পুরো ইউনিট তার দেখভাল করতো। এছাড়াও হারশালি বলিউডের অভিনেত্রী হতে বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’
হারশালির মেজাজমর্জি বুঝে তার দৃশ্যধারণের মাঝে কলাকুশলীরা ২-৩ ঘণ্টা পরপর বিরতি নেয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। একবার তো গোটা ইউনিটকে ছয় ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছিলো। শুটিংয়ের দিনগুলোর কথা জানাতে গিয়ে সে বললো, ‘সালমান চাচ্চুর মোবাইল ফোনে গেমস খেলতাম। কারজাতে তার সঙ্গে নিয়মিত টেবিল টেনিস খেলতাম। মাঝে মধ্যে কবির চাচ্চুর কোলে বসে বার্বি গেমস খেলেছি।’
‘বাজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে হৃদয়ছোঁয়া অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হচ্ছে হারশালি। সে সালমান খানের আরেক ছবি সুরজ বরজাতিয়া পরিচালিত ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’র জন্যও নির্বাচিত হয়েছিলো। এমনকি পোস্টারের জন্য কয়েকটি দৃশ্যেও কাজ করেছে।
তার মা কাজল মালহোত্রা জানান, স্বল্প উপস্থিতির একটি চরিত্রেও অভিনয় করার কথা ছিলো তার। কিন্তু কবির খানের প্রস্তাব পেয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টান কাজল। তিনি সালমানকে পুরো বিষয়টি জানান।
‘বাজরঙ্গি ভাইজান’-এর মতো প্রধান চরিত্রে কাজের পর চাইলে ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’র মতো চরিত্রে অভিনয় করতে পারে হারশালি, এই আলোচনায় রাজি হন সল্লু। শেষমেষ তিনি সুরজকে হারশালির জায়গায় আরেকজনকে নিয়ে নিতে বলেন।
‘বাজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির সব আলোকছটা কেড়ে নিয়েছেন সালমান খান ও হারশালি মালহোত্রা। তাদের রসায়ন বক্স অফিসে টাকার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। গড়ছে একের পর এক রেকর্ড। হারশালির মুন্নি চরিত্রকে তার দেশ পাকিস্তানে ফিরিয়ে দিয়ে আসার অভিযানে নামে সালমান অভিনীত পবন। মুক্তির আগে এক ফটোশুটে অংশ নিয়েছিলেন তারা।
‘বাজরঙ্গি ভাইজান’ তারকা বানিয়ে দিয়েছে হারশালিকে। প্রতিদিনই প্রশংসায় ভাসছে সে। সম্প্রতি, এক সাক্ষাৎকারে সালমানের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি প্রসঙ্গে কথা বলেছে। আবেগপ্রবণ দৃশ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে হারশালি বলেছে, ‘সালমান চাচ্চুর চোখে জল দেখলেই আমি কেঁদে ফেলতাম। তিনি যতোবার কেঁদেছে, আমিও ততোবার কান্না করেছি। তাকে মারামারি করতে দেখলেও মন খারাপ হতো! তখনও কেঁদে দিতাম।’
তার সহশিল্পী সালমান খানের মতো বড় তারকা হতে চায় সবার মন কেড়ে নেয়া ছোট্ট হারশালি। তার কথায়, ‘অভিনয় আর গান ভালো লাগে আমার। সালমান চাচ্চুর মতো সুপারস্টার হতে চাই আমি।’
হারশালির মা জানান, তার মেয়ে অভিনয় চালিয়ে যাবে। তবে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠা পর্যন্ত ৬-৭ বছরের লম্বা বিরতি নেবে হারশালি। এরপর যদি সে চায় তাহলে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করতে পারবে।
Next Post