ঢাকা: প্রভা একটা নাম, বাংলাদেশে যার বাসায় ইন্টারনেট নাই, যিনি নাটক দেখেন না, যার টিভি নাই, যিনি সারাদিন আল্লাহ-বিল্লাহ করেন, যিনি সারাদিন রিক্সা চালান, যিনি আর্ট ফিল্ম ছাড়া বাজে ছবি দেখেন না, যিনি পত্রিকা পড়েন না, যিনি পর্ণ দেখেন না বলে দাবী করেন- তিনিও প্রভাকে এক নামে চিনেন।
পর্ণস্টার প্রভা। মাল প্রভা। মাগী প্রভা। নষ্টা প্রভা। রাজিব-প্রভা। অপূর্ব-প্রভা। সবাই এক নামেই উনারে চিনেন। যেই মেয়ে পর্ণ উচ্চারণ করতে পারেন না লজ্জায়, সেই মেয়েও প্রভাকে চিনেন। সেই মেয়েও বয়ফ্রেন্ডের বাসায় প্রভার সেই ভিডিও দেখছেন। সেই মেয়ে এবং তার বয়ফ্রেন্ডও পর্ণ দেখা শেষ করে একসাথে বিছানায় শুয়ে প্রভাকে বেশ্যা বইলা গালি দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের সমাজে প্রেম করা খুব খারাপ জিনিস। এক ভিডিওতে দেখছিলাম বগুড়ায় পুলিশ আছে প্রেমিক-প্রেমিকা ধরার জন্য। এই অদ্ভূত সমাজে একটা ছেলে তার বান্ধবীর হাত ধইরা হাঁটতে পারবেন না। প্রকাশ্যে ধর্ষণ কোনো সমস্যা নাই, চুরি, ডাকাতি, টেন্ডারবাজি, রাস্তায় পেশাব করলে সমস্যা নাই, প্রকাশ্যে চুমু খাইলে আপনার জাত, আপনার চৌদ্দগুষ্টির মান-সম্মান সব যাবে। ক্যানো, প্রেমে সমস্যা কই? যারা বলেন, ‘বিয়ের আগে প্রেম? সেইটা তো পাশ্চাত্যের ধ্যাণ-ধারণা; আমাদের না’- তাদের জিগাই, আমাদের ধ্যাণ-ধারণা কিসে ভাইজান? সমস্ত প্রকৃতি-বিরূদ্ধ চিন্তা এবং কাজ আমাদের ট্র্যাডিশান? দুনিয়া আগায় যাক, আমাদের সমস্যা নাই, আমরা লজ্জাবণতঃ হইয়া, প্রেম না কইরা, মাস্টারবেশান না কইরা, অযৌন জীবন যাপন কইরা, পিরিয়ড নিয়া কথা না বইলা, বাচ্চা জন্ম-প্রক্রিয়া লুকাইয়া রাইখা, সেক্স এডুকেশান ছাড়াই একদিন বড় হইয়া- একদিন বিয়া কইরা বাচ্চা পয়দা কইরা একদিন সুখে শান্তিতে ঘর করতে থাকবো?
আপনি বাচ্চার বাপ মা, মানলাম। বাচ্চা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব আপনার, তাও মানলাম। কিন্তু আপনি বাচ্চার বাপ মা হইয়া যতই বাচ্চারে গিট্টু দিয়া রাখতে চান, বাচ্চা কিন্তু একদিন বড় হবেনই। সেই বাচ্চা আরেক বাচ্চার সাথে একদিন শুইতেও চাইবেন। সেই দুই বাচ্চা মিলা আরেক বাচ্চাও উনারা একদিন পয়দা করবেন। আপনারা বাপ-মা’রা যেইটা বুঝতে চান না, তা হইলো, যৌন চাহিদা মানুষের স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা। আপনারা বুঝেন না বইলাই ঢাকার বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরা, আপনাদের এবং ধর্ম এবং সমাজরে গোপন কইরা বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক করেন। তা উনারা যেইখানে এ্যাডাল্ট, সেইখানে উনাদের প্রেম করতে না দেওয়া বা বন্ধু বান্ধবীর লগে শুইতে না দেওয়া তো ক্ষুধার্তরে ভাত না খাইতে দেওয়ার মতই পানিশমেন্ট, নাকি? আপনি সমাজের নাম কইরা, ধর্মের নাম কইরা, ট্র্যাডিশানের নাম কইরা সুযোগ না দিতে চাইলে কি হবে, উনারা নিজেরাই নিজেদের সুযোগ কইরা নিবেন। এবং নিচ্ছেনও। এইটাই স্বাভাবিক। একদিন আপনারে পেটখারাপ অবস্থায় সারাদিন হাগা-মুতা না করতে দিয়া বসায়ে রাখলে আপনিও টের পাবেন জৈবিক চাহিদা কি জিনিস। কত প্রকার এবং কিকি। উদাহরণসহ।
তো বিয়ার আগে প্রভা রাজিবের সাথে শুইছেন। তাতে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হইছে? বিয়ার আগে আমিও আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে শুইছি, আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যত ছেলে মেয়ে আছেন, তার নাইনটি পারসেন্টই শুইছেন। যারা শোন নাই, তারা বয়ফ্রেন্ডরে চুমা দিছেন, মেইক আউট করছেন, ঢাকা-কুমিল্লা যাওয়ার পথে বাসে ওড়নার তলায় গার্লফ্রেন্ডের বুকে হাত দিছেন। সমাজ তাতে ধ্বংস হইয়া গেছে? ধর্মের জুজুর ভয় দেখাইতে আল্লাহর লানত নাইমা আসছে তাতে? এইসব ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা না কইরা নষ্ট হইয়া গেছেন? ড্রাগ এডিক্ট হইয়া গেছেন? জারজ সন্তানে মেডিক্যাল কলেজের আঙ্গিনা ভইরা উঠছে?
আমি এখন বিবাহিত। আমার স্বামীর সাথে আজকেই আমার পাঁচ বছরের ওয়েডিং এনিভার্সারি। বিয়ের আগে আমি আরেকজনের সাথে শুইছি বইলা আমার কি আমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভাইঙ্গা গেছে? আমাদের ঘরের সব শান্তি কি নীল আসমানে উড়াল দিছে? আল্লাহ (যদি থাকেন) উনি আমারে মরলে পরে কী শাস্তি দিবেন, সেইটা আল্লাহ এবং আমার ব্যাপার। আপনার তো তাতে মাথা ব্যথা থাকার কথা না, তাই না? প্রভারেও যদি শাস্তি দিতে হয়, সেইটা প্রভার খোদা দিবেন। আপনাদের এত ক্ষমতা কে দিলো? আপনারা নিজেরা কোন ধোয়া তুলশী পাতা?
প্রভার সাহসরে আমি রেস্পেক্ট করি। প্রভার জায়গায় নিজেরে চিন্তা করি। যেই বয়ফ্রেন্ড আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত সময়গুলা বাইরে বেইচা দেওয়ার সাহস এবং ধৃষ্টতা এবং কুরুচি রাখতে পারেন, তার মুখের সামনে কোমড় সোজা হইয়া দাঁড়ায়ে আবার নিজের কাজে ফেরৎ যাওয়া সাহসের বিষয় বটে। প্রভার জায়গায় আপনি হইলে হয়তো আত্মহত্যা করতেন। নিজের ন্যাংটো শরীর সারা বাংলাদেশ দেখছে জানলে বোরখা পিন্দা ঘরে গিট্টু দিয়া বইসা থাকতেন। নিজেরে দ্বীপান্তর করতেন আন্দামান কি হনলুলু। প্রভা তা করেন নাই। তিনি এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বেশ্যা সাইজা- সেক্সুয়ালি ফ্রাস্টেটেড পুরুষ সাংবাদিকরা উনার নামে আবার কী নতুন রসালো কেচ্ছা লিখবেন সেই ভয়ে ধুকধুক করতে করতে নতুন সংসার করেন। অন্য কোনো সমাজে অন্য কোনো দেশে যেইখানে রাজিবরে কোর্টে দাঁড়াইতে হইতো, জরিমানা গুনতে হইতো নিজের পকেট থিকা, যেইখানে প্রভার চোখের সামনে রাজিব চইড়া খান।
প্রভার কপাল খারাপ, উনার জন্ম হইছিলো বাংলাদেশ নামক এক উলটা রাজার দেশে। প্রভার কপাল খারাপ, উনি যেই সমাজে জন্মাইছেন, সেই সমাজ ভালোরে ভালো, খারাপরে খারাপ বলতে শিখেন নাই। উনি সেই সমাজে জন্মাইছেন, যেইখানে ধর্ষণের দায় ধর্ষিতার কাপড়রে দেওয়া হয়। উনি সেই সমাজে জন্মাইছেন, যেইখানে একজন সৎ সাংবাদিক নাই, সৎ নেতা নাই, সিনেমার সৎ পরিচালক নাই, সৎ রাজনীতিবিদ নাই, সৎ নাট্যকর্মী নাই, একজন সৎ মানুষ নাই, যিনি কোমড় সোজা কইরা প্রভার পাশে দাঁড়াইয়া বলবেন, প্রভা তো ভাই একলা চু* নাই। প্রভা যদি বয়ফ্রেন্ডের সাথে শুইয়া বেশ্যা হন, তাইলে রাজিব প্রভার সাথে শুইয়া কোন নবী হইছেন? প্রভা সেই সমাজে জন্মাইছেন, যেইখানে উনার মেয়ে বন্ধুরাও উনার পাশ থিকা সইরা গিয়া গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেইলা হাসিমুখে কইবেন, আল্লাহ বাঁচাইছে, আমার বয়ফ্রেন্ড রাজিব না, ভাই! আমার বয়ফ্রেন্ড কিন্তু এত্তগুলা ভালো, ইশ! (নাইলে কত কী যে কেলেংকারি হইতো, হায়!) প্রভা সেই যৌনহতাশাগ্রস্থ সমাজে জন্মাইছেন, যেই সমাজের লোক এই স্ট্যাটাস পইড়াও যৌনসুখ পাবেন, ফেইসবুকে ধর্ম এবং সমাজ নিয়া বড় বড় বাণী দিয়া, ফেইসবুক বন্ধ কইরা- ইন্টারনেটে প্রভার বুক দেইখা হাত মারবেন। প্রভা কপাল খারাপ নিয়া জন্মাইছেন। প্রেম করলেন সবাই, নাম হইলো উনার একলার, হাহা।
ভাইজানেরা, বড় হন, বড় হইতে শিখেন। যৌনতা খারাপ এবং গোপন জিনিস না। ‘তোর ছবি বাজারে ছাইড়া দিবো’ টাইপ ভয় আর মেয়েদের কত দেখাবেন? যেই মেয়ে আপনার সাথে আর প্রেম করতে চান না, উনারে জোর কইরা ক্যানো আপনার সাথেই প্রেম করতে হবে? উনার মন কী সারাজীবন আপনার কাছেই বেঁচা? আর, আপারা, আপনারা যারা অতীতে বহুত কর্মকান্ড কইরা ইদানিং খুব ভদ্র হইছেন, শ্বাশুড়িরে শব-ই-বরাতে চালের রুটি বেইলা দিতেছেন, তারা মনে রাইখেন, পাশার ছক উল্টাইতে বেশিদিন লাগে না। আপনার আজকের আপাত-নিরীহ স্বামী কালকে যে আপনার ছবিই বাজারে বেঁচবেন না, তার নিশ্চয়তা কিন্তু নাই, হাহা! সুতরাং, অন্যায় আইডেন্টিফাই করতে শিখেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। ছেলেরা খারাপ বলতেছে, সমাজ খারাপ বলতেছে, ধর্ম খারাপ বলতেছে কী কী জিনিসরে একটু তলায়ে দেখেন যদি বুদ্ধি থাকে! সমাজের শিখায়ে দেওয়া বুলি তোতা পাখির মত আউড়ায়েন না।
নারী আন্দোলন, নারী স্বাধীনতা, নারী নির্যাতন নিয়া আপনারা যারা এনজিও খুলছেন, বক্তৃতা দিচ্ছেন ইয়োরোপ আমেরিকা, তারা সাদিয়া জাহান প্রভারে দেইখা শিখেন, নারী আন্দোলন কোন জিনিস। প্রতিদিন মানসিক নির্যাতন সহ্য কইরা প্রভা যেই আন্দোলন কইরা এখনো দাঁড়ায় আছেন সোজা হইয়া, সেইজন্য প্রভারে অভিনন্দন! সাদিয়া জাহান প্রভা, আপনার প্রতি ভালোবাসা!
বাংলামেইল২৪ডটকম