মুখ খুললেন ‘আমেরিকান অ্যাপারেল’-এ অর্ধনগ্ন হয়ে পোজ দেয়া বাংলাদেশী মডেল। বললেন, ওই ফটোশুট করে আমি পরিপূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। এর মাধ্যমে আমি নিজেকে মুক্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা যে যেখান থেকেই আসি না কেন আমাদের মত প্রকাশে স্বাধীনতা থাকা উচিত। সব নারীর এক্ষেত্রে মনোবল থাকা উচিত। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া ওই মডেলকে নিয়ে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভাইস’ নামের একটি ম্যাগাজিনে তিনি শরীরের উপরের অংশ একেবারে অনাবৃত করে পোজ দিয়েছেন। তার অনাবৃত বক্ষদেশে ইংরেজিতে লেখা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা, আলোচনার জন্ম দেয়। ওই তরুণীর নাম মাকস। বয়স ২২ বছর। তিনি বাংলাদেশে জন্ম নিলেও চার বছর বয়সের সময় চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানে লস অ্যানজেলেসে চাকরি খুঁজতে গিয়ে কাজ পেয়ে যান আমেরিকান অ্যাপারেলসে। লন্ডনের ডেইলি মেইলকে মাকস বলেছেন, এই ছবির মাধ্যমে যে বার্তা দেয়া হয়েছে আমি পরিপূর্ণভাবে তা সমর্থন করি। আমি সব ধর্ম ও সংস্কৃতিকে পছন্দ করি ও ভালবাসি। আমি সৃষ্টিশীল হতে চাই। সে জন্য নিজেকে মুক্তভাবে প্রকাশ করতে চাই। আমেরিকান অ্যাপারেল শ্রমিকদের ১২ থেকে ১৪ ডলার বেতন দিয়ে থাকে। তাদের দাবি, এটাই বিশ্বে শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি মজুরি। ফলে এই মজুরির সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মজুরির যে ফারাক রয়েছে তা দেখে মাকস মনে করেন, ভবিষ্যতে তৈরী পোশাক প্রস্তুতিতে আমেরিকান অ্যাপারেল তাদের প্রভাব প্রয়োগ করতে পারবে এবং এ বিষয়ক যে সংস্কৃতি আছে তা পরিবর্তন করতে পারবে। মাকস বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে তৈরী পোশাক কোম্পানির মতো নয়, আমেরিকান অ্যাপারেল-এর রয়েছে অত্যন্ত ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করি। আমরা তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুবিধা দিই। মাকস আমেরিকান অ্যাপারেল-এর পক্ষে এসব কথা বললেও টপলেস হয়ে মডেল হওয়ায় তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে টুইটারে লিংরান কোং নামে একজন লিখেছেন, আমেরিকান অ্যাপারেল অর্থ বানানোর জন্য বাংলাদেশে সমপ্রতি গার্মেন্টে যে ভয়াবহতা ঘটে গেছে তাকে ব্যবহার করছে। জেজেবেল নামে একজন লিখেছেন, আমেরিকান অ্যাপারেলের ওই বিজ্ঞাপনটি একটি ধান্দাবাজি। তারা মাকস-এর নগ্নতা দেখিয়ে ন্যায্য শ্রমিক অধিকারের কথা বলছে। ইলি ডটকম-এ বাংলাদেশী লেখক তন্বী নন্দিনী ইসলাম লিখেছেন, আমাদের সামনে যেসব নারী আছেন তাদের জন্য ওই বিজ্ঞাপনটি মোটেও কোন কাজে আসবে না। আমেরিকান অ্যাপারেল এমনটিই করে থাকে। মেড ইন বাংলাদেশ বলে এভাবেই আমাদের সঙ্গে ফ্যান্টাসি করা হয়েছে। যেসব হতদরিদ্র, কম বেতনভোগী ও অতিরিক্ত সময় কাজ করা নারী শ্রমিক ঘণ্টায় মাত্র ৩০ সেন্ট মজুরিতে করেন, মাত্র ৫ ডলারে একটি শার্ট তৈরি করেন, তাদের এতে কোন উপকার হবে না।