ডেস্ক : দেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে প্রবাস জীবন যাপন করছিলেন। অস্বাভাবিক মুটিয়ে যাওয়ায় চলচ্চিত্র পরিচালকরাও তাকে নিয়ে নতুন চলচ্চিত্রে কাজ করতে সাহস করতে পারছিলেন না। তবু নায়িকা হিসেবে নয়, মা চরিত্রে তাকে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শাবনূর তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কেনইবা দিবেন না? বাংলা চলচ্চিত্রে যে শাবনূর একটা সময় একাধিপত্য বিস্তার করেছিলেন তিনি কেন এতো সহজে হার মানবেন?
কিন্তু সত্য এই যে,ক্যারিয়ারে সত্যি সত্যিই শাবনূর তার ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। ব্যাক্তিজীবনই কি তবে এ জন্য দায়ী? কেন বিয়ে করছেন না শাবনূর? এমন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিললো মঙ্গলবার দিবাগত রাতে। শাবনূরের বাবা শাহাজাহান চৌধুরী নিজেই মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যটি গনমাধ্যমের কাছে উন্মোচন করলেন।
জানা গেলো, নিজের বিয়ের কথা গোপন করেছিলেন শাবনূর। ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিয়ে করেছেন শাবনূর। বর তার বিপরীতে ‘বধু তুমি কার‘ চলচ্চিত্রে অভিনয় করা চিত্রনায়ক অনিক। শুধু তাই নয় বিযের দু‘বছর পর শাবনূর এবার মা হতে চলেছেন। মাত্র আর কিছুদিনের মধ্যেই সন্তানের মুখ দেখতে চলেছেন তিনি। ডাক্তার জানিয়েছেন সম্ভাব্য তারিখ এ মাসেরই ২২ অথবা ২৩ তারিখ। বর্তমানে তিনি অষ্ট্রেলিয়ার সিডনীতে বসবাস করছেন তার পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু কয়েকমাস আগেই তিনি দেশে এসেছিলেন। ফিরেছেন ২ অক্টোবর। অথচ কেউ জানতে পারেনি তার এ গোপন খবর।
কিন্তু কেন কাউকে জানতে দেননি শাবনূর? তবে কি শাবনূরের ইচ্ছে ছিলো নিজের বিয়ে ও সন্তান ধারণের খবরটি চেপে গিয়ে নায়িকা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারকে আরো কিছুদূর টেনে নিতে? নিজের কুমারীত্ব অক্ষুন্ন রাখতে চেয়েছিলেন দর্শকদের মনে? এমন প্রশ্নই এখন শাবনূর ভক্তদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিয়ের ব্যাপারে গনমাধ্যম বারবার জানতে চাইলেও তিনি তা এড়িয়ে গেছেন। বলেছেন সময় হলে ঘটা করেই জানাবেন সব। কিন্তু শাবনূর শেষমেশ সে সত্য চেপে রাখতে পারেননি। তবু শাবনূরের বিয়ে ও মা হওয়ার খবরে তার ভক্তরা আনন্দিতই হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ভক্তরা সমালোচনার চাইতে অভিনন্দিতই করছেন এ নন্দিত অভিনেত্রীকে।
উল্লেখ্য, নব্বই দশকের শুরুতে এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন শাবনূর। তারপর জুটি বাঁধেন প্রয়াত সালমান শাহের সঙ্গে। আর তাতেই সফলতা আসে তার । কিন্তু হঠাৎ সালমানের চলে যাওয়াতে শাবনূরের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠেন রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে। পাশাপাশি ফেরদৌস, মান্না এমন কি হালের নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করেও সফল হন তিনি।
কিন্তু সবকিছু উলটপালট হয়ে যায় ডিজিটাল চলচ্চিত্রের আগমনে। তখন থেকেই শাবনূরের হাতে ছবির সংখ্যা কমতে থাকে। ২০১১ সালে শাবনূর অভিনীত মাত্র দুটি ছবি মুক্তি পায়। আর তাতেই চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব নেয়া সর্ম্পকে সেই সময় শাবনূর বলেন, ‘চলচ্চিত্র ছাড়ছি না। অস্ট্রেলিয়াতে বছরে মাত্র তিন মাস থাকবো তাও ভাই-বোনদের জন্যে।’
তবে শাবনূর মুখে যাই বলুক না কেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, মুটিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে আর দর্শকরা গ্রহণ করছিলেন না। পাশাপাশি নতুন নায়িকাদের গ্লামারের কাছেও হার মানতে হচ্ছিল তাকে।
সম্প্রতি শাবনূর অভিনীত, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে শাবনূর পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। একই পরিচালকের আরো একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু নানা কারণে ছবিটি আর করা হয়ে ওঠেনি।
সবমিলিয়ে শাবনূর এখন তার স্বামী আর আসন্ন সন্তান আর নতুন জীবন নিয়েই ব্যস্ত আছেন এ বলাই যায়। আর ক‘দিন পরই সন্তানের মুখ দেখবেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার আর ফেরা হবে কি না কে জানে? তবু দর্শক-ভক্তদের যে শুভকামনা থাকবেই তাদের প্রিয় নাযিকার প্রতি। সুখী হোন শাবনূর!