ঢাকা: রেণু নামটা বড় বেমানান। পরিচালক মহিউদ্দিনের নায়িকা পছন্দ হয়েছে, কিন্তু নামটা হয়নি। তাছাড়া নায়িকাদের নাম তিন অক্ষরের না হলে, সে ছবি এবং ছবির নায়িকা নাকি হিট হয় না! অগত্যা পরিচালক হাঁক ছেড়ে বললেন, নায়িকার নাম বদলাতে হবে। এরপর লম্বা মিটিং। সর্বসম্মতিক্রমে রেণু হয়ে গেলেন রোজিনা। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে নানা বাড়িতে রোজিনার জন্ম। শৈশব ও কৈশোরের প্রাণবন্ত দিনগুলো কেটেছে নিজ বাড়ী রাজবাড়ী শহরেই। পিতা দলিল উদ্দিন মনভোলা মানুষ। মা খোদেজা বেগম সদা হাস্যময়ী। দলিল উদ্দিন ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী।
১৯৭৭ সালে মহসীন পরিচালিত ‘আয়না’ ছবি দিয়ে রুপালি জগতে পদার্পণ। ছোট একটি চরিত্র, নাম শায়লা। এরপর এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘রাজমহল’ ছবি দিয়ে নায়িকার তকমা গায়ে লাগে তার। বিপরীতে অভিনয় করেন সেই সময়ের ‘হাটথ্রুব’ নায়ক ওয়াসীম। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। সুপার ডুপার হিট হয় আয়না। জীবনের চাকা ঘুরতে থাকে রেণুর। আশেপাশের সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। এভাবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রোজিনার অভিনীত ছবির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫৫ তে।
১৯৯০ সালের পর রোজিনা কলকাতায় পাড়ি জমান। টালিউডে প্রায় ২০টি ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। ফিরেই ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘রাক্ষসী’ ছবিতে অভিনয় করেন। রেণু থেকে রোজিনা হতে হতে এই অভিনেত্রী পাড়ি দিয়েছেন বেশ লম্বা একটা পথ। কখনো মসৃণ, কখনো বন্ধুর ছিল সেই পথচলা। এই চলার মাঝে তিনি সমাদৃত হয়েছেন ১৫ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে।
১৯৮০ সালে ‘কসাই’ ছবির জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার এবং ১৯৮৮ সালে ‘জীবন ধারা’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন এই গুনি অভিনেত্রী। এছাড়া শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ‘বাচসাস পুরষ্কার’ ও ‘দিনকাল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অর্জন করেন রোজিনা।
রোজিনা ভারতের জনপ্রিয় নায়ক মিঠুন চক্রবর্তী, পাকিস্তানের জনপ্রিয় নায়ক নাদিমসহ ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক নামি অভিনেতার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন।
১৯৮৬ সালে পাকিস্তানে ‘হাম দো হায়’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জার্মানিতে ‘নিগার এ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনেন ‘বঙ্গদেশে’র রেণু।