২০০৫ সালে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। তার পর থেকে বিস্তর সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। নিজের আবেদনময়ী শরীরী ভাষা ও অভিনয় দক্ষতাকে সঙ্গী করে ভারতের দক্ষিণী ছবির জগৎকে কয়েক বছর ধরে রীতিমতো শাসন করে চলেছেন তিনি। আজ তাবড় অভিনেতারা চাইছেন, তাঁর বিপরীতে অন্তত একবার অভিনয় করতে। তিনি ভারতের দক্ষিণী ছবির অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী আনুশকা শেঠি।
দক্ষিণী ছবির জগতে একটানা ১১ বছর কাটিয়ে এবার আরব সাগরের তীরে বলিউডে পা রাখতে চলেছেন আনুশকা। তার আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেকে মেলে ধরলেন তিনি। নিজেই জানিয়ে দিলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম পা রাখার পর একরকম ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল তাঁকে। দক্ষিণী ছবিতে যেখানে কার্ভি ফিগারের নায়িকারা বেশি কাজ পান, সেখানে আনুশকার চেহারা নিয়ে নানা রকম সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছিল। তবে সব আলোচনা-সমালোচনা মুখ বুজে সহ্য করে প্রচণ্ড জেদ নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ওই সময় দক্ষিণী ছবিতেই আমার ওই অবস্থা, সেখানে দাঁড়িয়ে বলিউড যে আমাকে ডাকবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে আজ ১১ বছর পর বলিউডের টনক নড়েছে দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।’
২০০৫ সালে ক্যারিয়ার শুরু করার মাত্র চার বছরের মাথায় ২০০৯ সালে ভারতের দক্ষিণী ফিল্মে অন্যতম শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন আনুশকা। তবে আনুশকা মনে করেন, অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে বলিউডি ছাপ দরকার এমনটা কখনই নয়। বললেন, ‘রজনী কান্ত, নাগার্জুন, কমল হাসান—এঁদেরকে সবাই দক্ষিণী নায়ক হিসেবেই চেনেন। এঁদের প্রতিষ্ঠা পেতে বলিউডের ছাপ দরকার পড়েনি। অথচ এঁদের জনপ্রিয়তা বলিউডের প্রথম সারির নায়কদের তুলনায় কিন্তু মোটেই কম নয়।’ তবে হ্যাঁ, বলিউডের ব্যাপ্তিটা অনেক বেশি বলে মনে করেন আনুশকা।
বলিউডে পা রাখার আগে দক্ষিণী ছবির এই হার্টথ্রব নায়িকা বলেন, ‘গত দু-তিন বছরে আমি বলিউডের বেশ কয়েকটি ছবির অফার পেয়েছি। কিন্তু একটাও মনে ধরেনি।’ অবশ্য বরাবরই ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ সাবধানী আনুশকা। পছন্দ না হলে ছবি বাতিল করে দিতে বিন্দুমাত্র ভাবেন না। সেই সঙ্গে নিজেকে নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসীও আনুশকা। জানালেন, বলিউডের নায়িকাদের মধ্যে কাউকেই তিনি নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করেন না। কারণ হিসেবে বললেন, ‘আমার সঙ্গে বলিউডের নায়িকাদের কোনো তুলনাই হয় না।’ কথায় কথায় বলিউডের বর্তমান নায়িকা দীপিকা, প্রিয়াঙ্কা, আলিয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই আনুশকা জানিয়ে দিলেন, দীপিকা অভিনয়টা ভালো করে। কিন্তু ওর মধ্যে ডায়নামিক ব্যাপারটাই নেই। আর প্রিয়াঙ্কা তো বিদেশে টেলিসিরিজ করতেই ব্যস্ত। তবে আলিয়া অভিনয়টা মন্দ না করলেও আলিয়ার মধ্যে সেক্স অ্যাপিল একেবারেই নেই বলে মনে করেন তিনি। জানালেন, ‘অথচ অভিনেত্রী হতে গেলে সেক্স অ্যাপিলটাই মাস্ট। তা ছাড়া আমি বলিউডে ছবি করলে অনেক অভিনেত্রীই কাজ পাবেন না।’
আজ ভারতের দক্ষিণী ছবি ছাড়িয়ে পা রাখতে চলেছেন বলিউডে। আগামী দিনে বলিউড ছেড়ে হলিউডে অভিনয় করার ইচ্ছা কিন্তু তাঁর একেবারেই নেই। জানিয়ে দিলেন, ‘আমি কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার সিরিয়ালে অভিনয় করতে চাই না। তবে হ্যাঁ, যদি স্পিলবার্গের ছবি হয়, তবে আমি এককথায় নিজের দেশ ছাড়তে রাজি আছি, তা ছাড়া নয়।’
নিজের ওপর নিজের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে আনুশকার। বললেন, ‘অভিনয় জগতে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। আগামী পাঁচ বছরে এক নম্বর হওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই। তবে দক্ষিণী ছবি কিংবা বলিউডি ছবি সব ক্ষেত্রেই সেরা ছবিগুলো আমার কাছে থাকুক, সেটাই চাইব।’
নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথা সেভাবে খোলামেলা না বলতে চাইলেও জানিয়ে দিলেন, ‘দক্ষিণী নায়ক সূর্য আমার খুব ভালো বন্ধু। তবে ওর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক বলে যা গুঞ্জন শোনা যায়, তা মোটেই ঠিক নয়। সূর্যের সঙ্গে আমার মোটেই প্রেমের সম্পর্ক নয়।’ আর বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘বিয়ে নিয়ে কোনো প্ল্যানই করা হয়ে ওঠেনি আমার।’ জানিয়ে দিলেন, ‘বিয়ে করার মতো পাত্রও বা আর পেলাম কোথায়?’