মুখবন্ধ সোনালি খামটা গত বছর ছিল থিয়েরি অঁরির হাতে। পাশে ছিলেন তখনকার ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার। জুরিখে কাল রাতে অঁরি ছিলেন না মঞ্চে, ব্ল্যাটারের তো ফিফা সদর দপ্তরের আশপাশে যেতেও নিষেধাজ্ঞা! এবার সোনালি খাম হাতে এমন একজন, লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর আগে যিনি সর্বশেষ ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন—কাকা। পাশে ফিফার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসা হায়াতু।
সামনের সারিতে তিনটি উৎকণ্ঠিত মুখ—মেসি, রোনালদো, সঙ্গে নেইমার। কাকার হাতের মুখবন্ধ খামে আছে তাঁদের যেকোনো একজনের নাম। মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে একবার ক্যামেরায় দেখাল। নার্ভাস মুখে বসে আছেন ছেলে থিয়াগোকে কোলে নিয়ে। কাকার মুখে মুচকি হাসি। উপস্থাপক আইরিশ অভিনেতা জেমস নেসবিট রসিকতা করে বললেন, ‘সময় হয়ে গেছে। খাম খুলে ফেলো, কাকা।’ মুখের হাসিটা রেখেই ব্রাজিল তারকা সোনালি খাম খুললেন। তারপর একটুও নাটকীয়তা না করে ঘোষণা করলেন নামটা। লিওনেল মেসি!
নেইমার হাসলেন, হাসলেন রোনালদোও। খুব ক্ষীণ হাসি যদিও। স্ত্রীকে চুম্বন, ছেলের মাথায় হাত রাখার পর মেসি নেইমারের সঙ্গে গাল মেলালেন প্রথমে, তারপর রোনালদোর সঙ্গে হাত। মঞ্চে উঠতে উঠতেই তাঁর মুখের হাসিটা একেবারে চওড়া হয়ে গেছে। কাকার হাত থেকে ট্রফিটা নেওয়ার পর পুরো মুখ ঝলমল করছিল। করারই কথা। টানা চারবার জিতে যে ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা প্রায় নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলেন, সেটাই গত দুই বছর অধরা রয়ে গিয়েছিল। জুরিখে কাল মেসি আবার সেই ট্রফি ফিরে পেলেন, ফিরে পেলেন সিংহাসন। এ নিয়ে পঞ্চমবার। চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া তিনজনের মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ২৭ ভাগ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন রোনালদো, তৃতীয় নেইমার পেয়েছেন ৭ শতাংশ ভোট। ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতলেন মেসি।
কিছুটা অনুমিতই ছিল হয়তো। বার্সেলোনার হয়ে গত বছর পাঁচটি শিরোপা জিতেছেন মেসি। ৪৩ গোলে গত মৌসুমের লা লিগা শেষ করেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগেও ১০ গোল করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা। সব মিলিয়ে ৬১ ম্যাচে ৫২ গোল। তবে এর মধ্যে বার্সেলোনা গত বছর যে পাঁচটি ফাইনালে খেলেছে, তাতেই ৬ গোল মেসির। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগেও সংবাদ সম্মেলনে এমনকি রোনালদোও বলে দিয়েছিলেন, ‘এবার আমার চেয়ে লিওর সুযোগ বেশি, এটা আমার কাছে আশ্চর্যজনক নয়। নেইমার বা লিও পুরস্কারটা পেলে আমি খুব একটা বিস্মিত হব না।’ গালা অনুষ্ঠান শুরুর আগে আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারও বলেছেন, ‘বার্সেলোনার কোনো খেলোয়াড়েরই এবার ব্যালন ডি’অর জেতা উচিত। আর বার্সেলোনার কোনো খেলোয়াড় হলে, সেটা মেসিই হওয়া উচিত।’
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মেসি অবশ্য খুব উচ্ছ্বাস দেখালেন না। তবে আগের দুই বছর এ অনুষ্ঠানে দর্শক হয়ে থাকতে যে খুব একটা ভালো লাগেনি সেটা বললেন হাসিমুখেই, ‘দুই বছর দর্শক হয়ে ক্রিস্টিয়ানোকে জিততে দেখার পর এই মঞ্চে আবার ফিরতে পেরে আমি দারুণ আনন্দিত। এ নিয়ে পাঁচবার হলো। ছোটবেলায় আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, এটা তার চেয়েও বেশি কিছু।’
এক নজরে
ফিফা ব্যালন ডি’অর
লিওনেল মেসি
বর্ষসেরা নারী ফুটবলার
কার্লি লয়েড
বর্ষসেরা কোচ
লুইস এনরিকে
নারী দলের বর্ষসেরা কোচ
জিল এলিস
পুসকাস পুরস্কার (বর্ষসেরা গোল)
ওয়েন্ডেল লিরা
ফেয়ার প্লে পুরস্কার
শরণার্থীদের সহায়তাকারী সব ফুটবল সংগঠন
ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশ
গোলরক্ষক—ম্যানুয়েল নয়্যার, ডিফেন্ডার—দানি আলভেজ, সার্জিও রামোস, থিয়াগো সিলভা, মার্সেলো, মিডফিল্ডার—পল পগবা, লুকা মডরিচ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ফরোয়ার্ড—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, নেইমার।