বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা কে—মাশরাফি না সাকিব?
কে দেবেন এই প্রশ্নের উত্তর? আচ্ছা, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানকেই জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়! তা-ই করলাম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হয়ে গেছে দুদিন আগে। গত রোববার খুলনার সিটি ইন হোটেলের রেস্টুরেন্টে দুজনকে এক টেবিলে বসিয়েছি একসঙ্গে একটা সাক্ষাৎকার নেব বলে। কিছুদিন আগেই সাকিবের বড় একটা সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে প্রথম আলোতে। অধিনায়ক বলে মাশরাফির কথাবার্তা তো প্রায়ই ছাপা হয়। কলামও লেখেন নিয়মিতই। ভাবলাম, সাক্ষাৎকারে নতুন কী আর জিজ্ঞেস করব! প্রথাগত সাক্ষাৎকার না নিয়ে দুজনকে একসঙ্গে বসিয়ে একে অন্যের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বরং তা একটু ভিন্ন মাত্রা পাবে। দুজনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটা এমনই যে, বলতেই তাঁরা রাজি। মূল সাক্ষাৎকারে ঢোকার আগে দুজনকে একটু অস্বস্তিতে ফেলতেই ওই প্রশ্নটা করলাম। অস্বস্তিতে অবশ্য পড়লেন না কেউই। সাকিব অব্শ্য কূটনৈতিক উত্তর দিলেন, ‘তারকা তো বদলায়। আজ যে ম্যান অব দ্য ম্যাচ, সে-ই সেদিন বড় তারকা। সেই হিসাবে আমাদের দলের ১১ জনই তারকা। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় তারকা মাশরাফি ভাই।’ মাশরাফি প্রশ্নটাকে শুধু সাকিব আর তাঁর নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে। একেক সময়ে একেকজন তারকা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন—এ কথা মনে করিয়ে দিতে একে একে নাম এলো আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন, হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক এমন অনেকের। সাকিব মনে করিয়ে দিলেন, মুশফিকুর রহিম অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর কিছুদিন এমন খেলেছিলেন যে, তখন তিনিই ছিলেন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা; কী দারুণই না শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল! ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা তারকা হিসাবে তামিমের নামও আসবে বলে বিশ্বাসের কথা জানিয়ে দিলেন মাশরাফি। মোহাম্মদ আশরাফুলের নামটাও না বলে পারলেন না। মাশরাফি ও আশরাফুলের প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ দলে শুরু। দুজনের তাই দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। ফিক্সিংয়ের চোরাবালিতে ডুবে না গেলে আশরাফুল কী করতে পারতেন, এটা নিয়ে মাশরাফির প্রায়ই আক্ষেপ হয়। কোনো বিতর্কে জড়াতে চান না বলে ওই প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চান না। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তারকার প্রসঙ্গ উঠলে আশরাফুলের নামটি কিভাবে ভুলে যান? একেক সময়ে একেক জন তারকা ছিলেন সত্যি, তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা তারকা নিয়ে আলোচনা হলে মাশরাফি ও সাকিবের নাম দুটিই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হবে। যে প্রশ্ন দিয়ে লেখাটা শুরু হয়েছিল, সেটির উত্তর তাহলে কী হবে—মাশরাফি না সাকিব? সবচেয়ে ভালো সমাধান দিয়ে দিলেন সাকিব, ‘এটা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। আমরা খেলা ছাড়ার পাঁচ বছর পর মানুষের ভোট নিলে হয়তো ঠিক উত্তরটা পাওয়া যাবে।’ আমরা তাহলে না হয় একটু অপেক্ষাই করি!