একদিকে এবারের লা লিগার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোল করা রিয়াল মাদ্রিদ, অন্যদিকে সবচেয়ে কম গোল করা রিয়াল বেতিস। দুদলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও একতরফা লড়াইয়ের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু মাঠের ফুটবলে দেখা মিলল পুরো উল্টো চিত্র, একের পর এক সুযোগ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট হারিয়েই মাঠ ছাড়ে জিনেদিন জিদানের দল।
রিয়াল বেতিসের মাঠে রোববার রাতে লিগের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়।
এ বছরের শুরুতে রাফায়েল বেনিতেসের জায়গায় দায়িত্ব নেওয়া জিদানের অধীনে এই প্রথম হোঁচট খেল রিয়াল। ফরাসি এই কোচের অধীনে প্রথম দুটি ম্যাচে দারুণভাবে জিতেছিল তারা, ওই দুটি ম্যাচই ছিল তাদের ঘরের মাঠে।
এ মৌসুমে ‘অ্যাওয়ে ম্যাচে’ রিয়ালের ভঙ্গুর চেহারাটা আরও বড় হয়ে উঠলো। এই নিয়ে এবারের লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে চতুর্থবারের মতো পয়েন্ট হারালো তারা। মোট ১০টি অ্যাওয়ে ম্যাচের মাত্র চারটিতে জিতেছে তারা, বাকি দুটিতে হার।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে প্রথম পর্বে বেতিসকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বেল-বেনজেমারা। গত অগাস্টে হওয়া সেই ম্যাচে দুটি করে গোল করেছিলেন গ্যারেথ বেল ও হামেস রদ্রিগেস, অন্যটি করিম বেনজেমা।
সাম্প্রতিক সময়েও দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ওয়েলসের ফরোয়ার্ড বেল। তবে চোট পেয়ে টটেনহ্যাম হটস্পার্সের সাবেক এই তারকা ছিটকে পড়ায় তাকে ছাড়াই খেলতে নামে জিদানের দল।
বেল না থাকলেও গত সাত ম্যাচে কোনো গোল করতে না পারা বেতিসের বিপক্ষে হয়তো সহজ লড়াইয়ের প্রত্যাশাই করছিল রিয়াল সমর্থকেরা। তবে সে লক্ষ্যে শুরুতেই হুমকি হয়ে আসে স্বাগতিকদের দারুণ এক প্রতি-আক্রমণ।
সপ্তম মিনিটে ফাবিয়ান রুইসের শট পা দিয়ে রিয়াল গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি, ফিরতি বল পেয়ে দুর্দান্ত এক ভলিতে বাঁ কোণা দিয়ে জালে জড়ান স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আলভারো সেহুদো।
গত দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১০ বার বল পাঠানো রিয়ালের আক্রমণভাগকে এ দিন প্রথমার্ধে চেনাই যায়নি। ৩১তম মিনিটে এই অর্ধে প্রথম ও একমাত্র সুযোগটি পায় অতিথিরা, কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ব্যর্থ হওয়ায় পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় তাদের।
৬২তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ পান রোনালদো। কিন্তু এ যাত্রায় বলে পা লাগাতেই পারলেন না পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। সাত মিনিট বাদে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে সুযোগ নষ্ট করেন দানি কারবাহাল।
এর পরের মিনিটেই রিয়ালকে কাঙ্ক্ষিত গোল এনে দেন বেনজেমা। গোলটিতে বড় ভূমিকা ছিল হামেস রদ্রিগেসের। কলম্বিয়ার এই মিডফিল্ডার গোলরক্ষককে কাটিয়ে গোলমুখে ছুটে আসা সতীর্থের দিকে বল বাড়ান, বিনা বাধায় এবারের লিগে ১৭তম গোলটি করেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার।
১৮ গোল নিয়ে গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষে আছেন বার্সেলোনার লুইস সুয়ারেস।
খানিক বাদে এগিয়ে যেতে পারতো রিয়াল; ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো কোনাকুনি শট নিয়েছিলেন রদ্রিগেস, ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে তা ঠেকান গোলরক্ষক আদান। পরমুহূর্তে কর্নার থেকে অতিথিদের আরেকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন রিয়ালের সাবেক এই গোলরক্ষক।
৮৭তম মিনিটে গোলমুখে আরেকটি সুযোগ নষ্ট করেন তিনবারের বর্ষসেরা রোনালদো। বাকি সময়ে আরও কয়েকটি সুযোগ পেলেও একের পর এক ব্যর্থ হওয়ায় রক্ষা পায়নি ইউরোপের সফলতম দলটি। যোগ করা সময়ে উল্টো গোল খেয়ে বসেছিল রিয়াল, তবে প্রতি-আক্রমণে স্প্যানিশ স্ট্রাইকার রুবেন কাস্ত্রোর দূরপাল্লার শট একটুর জন্যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে বেঁচে যায় রিয়াল।
এই ড্রয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট হলো ২১ ম্যাচে ৪৪।
অন্য ম্যাচে সেভিয়াকে হারিয়ে শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করার সুযোগ ছিল আতলেতিকো মাদ্রিদের। কিন্তু তাদের ঘরের মাঠের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হওয়ায় দ্বিতীয় স্থানেই থাকতে হচ্ছে ২০১৩-১৪ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নদের।
২১ ম্যাচে আতলেতিকোর পয়েন্ট ৪৮। বার্সেলোনার পয়েন্টও সমান ৪৮, তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে শীর্ষে লুইস এনরিকের দল। এক ম্যাচ অবশ্য কমও খেলেছে মেসি-নেইমাররা।