ঢাকা: ‘আমি একা বড় একা, আমার আপন কেউ নেই’ মনে মনে এ গানটির কলি গুণগুণ করে গাওয়া ছাড়া আর কী উপায় আছে মুশফিকুর রহীমের! চাইলে ১০ উইকেটের বিশাল পরাজয় ভুলতে বাংলাদেশ অধিনায়ক এ গান গেয়েই সান্ত্বনা খুঁজতে পারে। যারা সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্ট রাত জেগে দেখেছেন তারা রাগে গজগজ করবেন স্বাভাবিক। এমন কি একজনও নেই যিনি মুশফিকের সঙ্গে থাকতে পারেন উইকেটে।
প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৪৮। একপ্রান্তে মুশফিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন তাকে একা রেখে সবাই চলে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও সেই একই চিত্র। পঞ্চম উইকেটে ভায়রা ভাই মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ১৩০ রানের একটা জুটি বেঁধেছিলেন। অনেকে তো স্বপ্ন দেখেছিলেন পঞ্চম দিনে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাবেন মুশফিক। হ্যাঁ, তা তিনি দেখাতে পেরেছেন। কিন্তু বাকিরা যদি তার পাশে না দাঁড়াতে পারেন একা একা মুশফিক আর কী করবেন।
একসময় মনে হচ্ছিল ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিও বোধহয় ফসকে যাচ্ছে টেলএন্ডারদের ব্যর্থতায়। তা হয়নি মুশফিক (১১৬) ঝুঁকি নিয়ে কেমাররোচকে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা মারায়। তাইজুল-রুবেল-আল আমিনদের ব্যাটিং দেখে মনে হলো জীবনে এই প্রথম ব্যাট ধরলেন। এমন কাণ্ডে ফল যা হওয়ার তাই হলো। সান্ত্বনা এতটুকু যে, শেষ অব্দি ইনিংস পরাজয়টা এড়ানো গেছে। বাংলাদেশের ১৩ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজ টপকে গেছে ২.৪ ওভারেই।
কম তো হলো না। দেখতে দেখতে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার ১৪ বছর পার হতে চললো। টেস্ট ক্রিকেটে এখনও সেই আগের বাংলাদেশ। মাঝে মাঝে ঝলক দেখা যায় এই যা। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।
ব্যাটসম্যানদের উইকেটে থাকতে বোধহয় বড্ড কষ্ট হয়! তা না হলে কেন তারা তড়িঘড়ি করে ড্রেসিংরুমে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন? সেন্ট ভিনসেন্টের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে এক মুশফিক ছাড়া কারও ব্যাটেই মিলল না টেস্ট মেজাজের ছাপ। প্রথম ইনিংসে নাসির হোসেনের আউট ছিল অত্যন্ত জঘন্য! এদিনও এর ব্যতিক্রম হলো না।
টেলএন্ডারদের কথা আর কী বলার আছে? আল আমিন ব্যাট দিয়ে নয় বরং হেলমেট আর পা দিয়ে ক’টা বল ঠেকালেন। পরিতাপের বিষয়, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসেও একজন ক্রিকেটার কীভাবে ব্যাটকে বলে কাছাকাছি নিয়ে যেতে হয় সেটাই জানেন না! মিচেল জনসন, ডেল স্টেইন, ভুবেনশ্বররা কি ব্যাট করেন না? তাদের কে বলেছে যে বোলার হলে তাকে ব্যাট করতে জানতে হয় না!
গাব্রিয়েলের বল অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়া তাইজুলের পায়ে লেগে আস্তে আস্তে স্ট্যাম্পে আঘাত হেনে বেল ফেলে দিল। সেই দৃশ্য বোকার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন তাইজুল! রুবেলও বোল্ড ওই গাব্রিয়েলের বলে। আর শুভাগত হোমকে টেস্টে নামিয়ে দেয়া কী খুব জরুরি ছিল? সে প্রশ্ন না হয় থাকলো; শুভাগতসহ তিন টেলএন্ডারের কারও কি সামর্থ্য ছিল না উইকেটে থাকার? চারজনই কেন শূন্য রানে আউট হবেন? এর কী কোনো ব্যাখা আছে?