ঢাকা: সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জুরিখে জমকালো অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে হাস্যোজ্জ্বল মুখে ঘোষণা করা হলো ফিফা ব্যালন ডি’অর-২০১৫ বিজয়ী ‘লিওনেল মেসি’। ঘোষণার পর মঞ্চে উঠলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। আর মঞ্চে উঠে বিশ্ব ফুটবলের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো এ পুরস্কার জিতে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল সুপারস্টার লিওনেল মেসি।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) জুরিখের ফিফার কংগ্রেস হাউসে আলো ঝলমলে মঞ্চ সাজানোই ছিল। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল পুরো ফুটবল বিশ্ব। জনাকীর্ণ ফিফার কংগ্রেস হাউসে ছিল পিন পতন নীরবতা। মেসির হাতে পুরস্কার উঠে সব ‘ছিল’ এখন অতীত।
প্রতিযোগিতা ছিল চার-তিন-শূন্যের মধ্যে! মেসির চার থেকে কী পাঁচ হবে? নাকি তিন থেকে চার যাবেন রোনালদো? নাকি সব হিসেব পাল্টে মেসি-রোনালদোকে টপকে নেইমারই পেতে চলেছেন জীবনের প্রথম ব্যালন ডি’অর? এমন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মেসির হাতেই উঠল এই পুরস্কার। মূলতঃ এখন মেসিময় হয়ে গেল ফিফা ব্যালন ডি’অর।
দুরন্ত গতি, পাসিং, শ্যুটিং, স্কোরিং সব বিভাগে ‘এ প্লাস’ পাওয়া আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার প্রাণভোমরাকে টপকে যাওয়া কঠিনই ছিল অপর দুই প্রতিযোগী বার্সায় মেসির সতীর্থ ব্রাজিল দলপতি নেইমার এবং রিয়াল মাদ্রিদের পতুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর।
২০০৯ থেকে ২০১২, টানা চারবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন কাতালানদের আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মেসি (২০১০ থেকে এর নাম হয় ফিফা ব্যালন ডি’অর)। রিয়ালের পর্তুগিজ মহাতারকা রোনালদো ২০০৮ সালের (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকাকালীন) পর ২০১৩ ও ২০১৪, মোট তিনবার জিতেছেন এই পুরস্কার। আর এবার মেসির হাতে এই পুরস্কার উঠায় বলা যায়, পুরস্কারটা মেসি ও রোনালদো নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। ঘুরেফিরে তাদের হাতেই উঠেছে এই পুরস্কারটি।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ও দলীয় সাফল্য বিবেচনায় ফিফা ব্যালন ডি’অরের জন্য এবার ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল মেসিকেই। ২০১৪-১৫ মৌসুমটা অসাধারণ কেটেছে তার। গত মৌসুমের ট্রেবল জয়ী বার্সার মূল নায়ক ছিলেন আর্জেন্টাইন এই খুদে জাদুকর। লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ, কোপা দেল রে’র সঙ্গে বছরের শেষ দিকে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। ক্লাব ও দেশের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় মেসি ৬১ ম্যাচ খেলে ৫২টি গোলের পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন ২৬টি।
জাতীয় দলের জার্সি গায়েও সফল ছিলেন মেসি। শিরোপা জেতাতে না পারলেও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে গেছেন ৪৪তম কোপা আমেরিকার ফাইনাল পর্যন্ত। সবকিছু বিবেচনায় এবার ফিফা ব্যালন ডি’অর জেতার ক্ষেত্রে হট ফেভারিট ছিলেন মেসিই।
ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের জন্য ফিফার ২০৯টি সদস্য দেশের জাতীয় দলের অধিনায়ক, কোচ ও একজন ক্রীড়া সাংবাদিক ভোট দিয়ে থাকেন। ফিফা ফুটবল কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং ফ্রান্স ফুটবলের একটি বিশেষজ্ঞ দল যৌথভাবে ২৩ জন পুরুষ খেলোয়াড়ের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেন। সেখান থেকে ভোটাররা তাদের শীর্ষ তিনজনকে বাছাই করে ভোট দেন। প্রত্যেক ভোটার নিজের প্রথম (৫পয়েন্ট), দ্বিতীয়(৩ পয়েন্ট) ও তৃতীয়(১ পয়েন্ট) পছন্দের খেলেয়াড়কে ভোট দেন। তাদের ভোট জনসমক্ষে প্রকাশ করে চূড়ান্ত হয় তিনজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা। সেখান থেকেই মেসিকে সেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত করা হলো।