মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১২৮ রানের সঙ্গে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৮৮/৭, ৫০ ওভার শেষে। সেই ২৮৮ রানের পুঁজি নিয়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের সামনে ভালোই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদুতে কুপোকাত হয়ে ৭ উইকেট হারিয়েছে কিউইরা। বার কয়েক তো বাংলাদেশের দিকেই ম্যাচের পাল্লা ঝুলে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৭ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
কিউইদের পক্ষে মার্টিন গাপটিল ১০৫, রস টেলর ৫৬, এলিয়ন এবং এন্ডারসন করেন ৩৯ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে ৫৫ রানে ৪ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।
কিউইরা বাংলাদেশের স্পিনের সামনে বরাবরের মতই অসহায়। এই অসহায়ত্ব কাজে লাগাতেই কি না স্বাগতিকদের বিপক্ষে শুরু তেকেই স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ইনিংসের প্রথমওভারটা নিজেই করেন সাকিব। শুধু তাই নয়, প্রথম ওভারে কোন রানই দিলেন না কিউইদের। দ্বিতীয় ওভঅরে তিনি বল তুলে দিলেন বিশ্বকাপে অভিষিক্ত তাইজুল ইসলামের হাতে। তবে এই ওভারে তাইজুল দিলেন ৮ রান।
তৃতীয় ওভারে দুটি ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারি মারার পর চতুর্থ ওভারেই পেস আক্রমণ। রুবেলকে নিয়ে আসেন সাকিব। তবে পঞ্চম ওভারে নিজেই বোলিং করেন সাকিব এবং পর পর তুলে নেন দুই উইকেট। প্রথম বলেই তুলে নিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের উইকেট। সাকিবদের লং অফে ছক্কা মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ম্যাককুলাম।
এরপর সবচেয়ে বিপজ্জনক কেনে উইলিয়মসনকেও ফিরিয়ে দিলেন সাকিব। ওভারের ৫ম বলেই পয়েন্টে তামিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন উইলিয়ামসন।
৩৩ রানে কিউইদের ২ উইকেট তুলে নিলেও তৃতীয় উইকেট জুটিতে মার্টিন গাপটিল আর রস টেলর ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে ৮০ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন তারা দু’জন। বার বার বোলার পরিবর্তন করেও সাফল্য পাচ্ছেন না সাকিব আল হাসান।
এরই মাঝে ক্যারিয়ারে ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেলেন মার্টিন গাপটিল। ৮৮ বলে ৮টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কায় তিন অংকের ঘরে পৌঁছান কিউই এ ওপেনার। অবশেষে রস টেলরের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন দু’জন। ১০৫ রান করে ৩১তম ওভারের চতুর্থ বলে রুবেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন গাপটিল। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে নিজেই সফলতার দেখা পেলেন সাকিব আল হাসান।
টেলর আর এলিয়ট জুটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই আঘাত হানলেন রুবেল হোসেন। ৩৪ বলে ৩৯ রান করে ফেলেন গ্র্যান্ট এলিয়ট। এসময় তাসকিনকে সুইপ কভার অঞ্চলে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রুবেল হোসেন।
স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন রস টেলর। হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলক পার হয়ে গেছেন আগেই। তবে তার স্পিন দুর্বলতা ভালোই কাজে লাগালেন সাকিব। নাসিরকে দিয়ে তুলে নিলেন টেলর উইকেট। ৪২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাসিরের স্লো বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে পরাস্ত হন টেলর। এলবির আবেদন উঠতেই আম্পায়র কেটেলবার্গ আঙ্গুল তুলে দিলেন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি টেলর।
নিউজিল্যান্ডের আরেক বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান লুক রনকি। শেষ দিকে এসে ঝড় তুলতে ওস্তাদ। কিন্তু তিনিও কুপোকাত হলেন স্পিন ঘূর্ণির কাছে। সাকিব আল হাসানের স্লো অর্থোডক্সে প্রথমে লোভ সামলাতে না পেরে খেলেন ডিপ এক্সট্রা কভারে। সেখানে একেবারে বাউন্ডারি লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন নাসির হোসেন।
২৬ বলে ৩৯ রান করে যখন কোরি এন্ডারসন বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন, তখন তার ওপর আঘাত হানলেন নাসির হোসেন। আগের ওভারেই ক্যাচ মিস করেছিলেন তিনি। সেটাই যেন পুষিয়ে নিলেন ওভারের দ্বিতীয় বলে এন্ডারসনকে সরাসরি বোল্ড করে।
তবে নিউজিল্যান্ডের জয়ের পথে এরপরও বাধা তৈরী করতে পারেনি সাকিব অ্যান্ড কোং। টিম সাউদি ৬ বলে ১২ এবং ভেট্টোরি ১০ বলে ১৬ রান করে স্বাগতিকদের ৩ উইকেটে জয় এনে দেন।