ঢাকা: মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের নির্ভরতার নাম। তার ব্যাটিংয়ে হয়তো আগ্রাসন নেই, তবে রয়েছে নান্দনিকতা ও শৈল্পিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে খেলছেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপে যে পারফেরমেন্স দেখিয়েছেন, তাতে করে তাকে ‘বাংলাদেশের সাঙ্গাকারা’ উপাধি দিলে হয়তো বাড়াবাড়ি হবে না। ইতোমধ্যে অনেকেই ভারতের রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে তুলনা করে তাকে, বাংলাদেশের দ্য ওয়াল নামে ও আখ্যায়িত করতে শুরু করে দিয়েছেন।
আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন মাহমুদুল্লাহ। শুক্রবার চলতি বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা বোলিং লাইনআপ সমৃদ্ধ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অংকের ঘরে পৌঁছে, বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এখানে উল্লেখ্য, এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই প্রথম সেঞ্চুরি।
বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করা প্রতিটি ব্যাটসম্যানের আরাধ্য স্বপ্ন। যে স্বপ্ন গত ম্যাচেই পূরণ করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাও, বাংলাদেশের হয়ে এই প্রথম। তবে এবার স্বপ্নকেও হয়তো ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। বিশ্বকাপে টানা দুটি ইনিংসে সেঞ্চুরি করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!
এমন নয় যে, বিশ্বকাপেই শুধু দুর্দান্ত খেলছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বরং প্রতিটি সিরিজেই দলের জন্য নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছেন তিনি। দলের প্রয়োজনে ৩ থেনে ৭ নম্বর সব পজিশনেই ব্যাটিং করেছেন তিনি। সব পজিশনেই ব্যাট হাতে সফল হয়েছেন এই টাইগার অলরাউন্ডার।
বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আড়ে মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোন পজিশন তার পছন্দ। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘দলের প্রয়োজনে যে কোন পজিশনে খেলতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ৩ থেকে ৭ যে কোন পজিশনে নিজেকে মানিয়েও নিয়েছি।’
তবে কোনো কিছুর সঙ্গেই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সকে তুলনা করা যায় না। ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩৫.২৪, সেখানে এবারের বিশ্বকাপে ইতোমধ্যেই ৮৬.০০ গড়ে ৩৪৪ রান করে ফেলেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে অসাধারণ ধারাবাহিকতা দেখিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানকে পেছনে ফেলে উঠে এসেছেন চতুর্থ স্থানে।
রান সংগ্রহে পেছনে ফেলে দিয়েছেন ভারতের শিখর ধাওয়ান (৩৩৩) ও দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলার (৩০৭) মতো বড় তারকাদের। সামনে রয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা (৪৯৬), ডি ভিলিয়ার্স (৪১৭) ও তিলকারত্নে দিলশান (৩৯৫)। তবে গড়ের দিক থেকে সামনে রয়েছেন কেবল লংকান গ্রেট সাঙ্গাকারা (১২৪)। মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং গড় ৮৬.০০, সর্বোচ্চ ১০ রান সংগ্রহকারীদের মধ্যে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে সফল ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ৮৯.৫০ গড়ে করেন ১৭৯ রান। এরপর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ-পূর্ব ওয়ার্ম আম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে হেরে গেলেও ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলেছিলেন রিয়াদ। রান আউট হওয়ার আগে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৩ রান করেন তিনি।
চলতি বিশ্বকাপে শ্রীলংকা (২৮) ও আফগানিস্তানের (২৩) বিপক্ষে নিজের চেনা ছন্দে ছিলেন না বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটসম্যান। বাকি তিন ম্যাচের তিন ইনিংসেই অসাধারণ খেলেছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস দিয়ে মাহমুদুল্লার শুরু। এরপর ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি সেঞ্চুরি করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।
বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং পারফরমেন্সকে অসাধারণ, অতুলনীয়, অবিশ্বাস্য এই তিনটি বিশেষণে বিশেষায়িত করা যেতে পারে। তবে টাইগার সমর্থকদের চাওয়া, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক নকআউট পর্বেও। কোয়ার্টার ফাইনালের একটি জয়ই বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের সেমিফাইনালে। আর লাল সবুজের জার্সিধারীরা যদি সেমিতে যেতে পারে তবে ৯২’র পাকিস্তান ও ৯৬’র শ্রীলংকা যা করে দেখিয়েছে, তখন আমরা সেই স্বপ্ন দেখলে দোষ কী!