ঢাকা: আর মাত্র মাত্র চার দিন বাদেই শুরু হচ্ছে ফুটবল মহাযজ্ঞ। বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ফুটবলাররা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের নেশায় বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটার জন্য লড়বেন। কার আলোয় আলোকিত হবে ব্রাজিল? নেইমার কী স্বাগতিক ব্রাজিলের ১৯৫০ সালের দুর্দশা ঘোচাতে পারবেন? লিওনেল মেসি কী পারবে আর্জেন্টাইনদের ২৮ বছরের আক্ষেপ ঘোচাতে? নাকি বিশ্বকাপ হবে পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর? তা জানতে কমপক্ষে ১৩ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু মেসি-রোনালদোদের এই ঝড়ের সময় কিছু তারকা নিজেদের হতভাগা ভাবতেই পারেন। তারা কারা? আসুন ব্রাজিল বিশ্বকাপ মিস করাদের সেরা একাদশ দেখে নেই-
১. ভিক্টর ভালদেস (গোলকিপার):
‘সেইন্ট’ ইকার ক্যাসিয়াসের ছায়ায় সব সময় ঢাকা থেকেছেন বার্সেলোনা গোলকিপার ভিক্টর ভালদেস। কিন্তু এবার তার সেই আক্ষেপ মোচনের সময় প্রায় হাতের নাগালেই এসে উপস্থিত হয়েছিল। কেননা এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তেমন গোল বার আগলানোর সুযোগ পাননি ক্যাসিয়াস। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেছেন কেবলমাত্র। এই অবস্থায় ভালদেসের সেরা একাদশে অন্তর্ভূক্তির সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ঘাতক ইনজুরি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে লা মাসিয়ার এই গ্রাজুয়েটকে।
২. ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচ (ডিফেন্ডার):
এই মৌসুমে নিয়মিতভাবেই চেলসির হয়ে ঔজ্জল্য ছড়িয়েছেন ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচ। হোসে মরিনহোর আস্থার প্রতিদান দিয়ে নিজেদের সেন্টার হাফে বিশ্বস্ত এক নামে পরিণত হয়েছিলেন এই সার্বিয়ান। তাছাড়া ফুলব্যাক হিসেবেও বেশ স্বচ্ছন্দ শক্তিশালী এই ডিফেন্ডার। কিন্তু তার দল ইউরোপ অঞ্চল থেকে কোয়ালিফাই না করায় ব্রাজিলের বিমানে ওঠা হয়নি ইভানোভিচের।
৩. ডেভিড আলাবা (ডিফেন্ডার):
নিজের আদিভূমি নাইজেরিয়ার হয়ে খেলার ইচ্ছা ছিল ডেভিড আলাবার। কিন্তু আফ্রিকার দেশটি থেকে প্রস্তাব না পাওয়ায় সেই স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে অস্ট্রিয়ার জার্সি গায়ে চড়ান বায়ার্ন মিউনিখের ভিয়েনা জাত ফুলব্যাক আলাবা। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস দেখুন সেই অস্ট্রিয়া বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিটই কাটতে পারেনি। তাই বিশ্বকাপ স্বপ্ন আরাধ্যই থাকছে বাভারিয়ানদের হয়ে আলো ছড়ানো ফুটবলারের।
৪. নিভেন সুবোটিক (ডিফন্ডার):
সার্বিয়া যদি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিত তাহলেও নিভেন সুবোটিকের বিশ্বকাপ যাত্রা হতো কিনা তা নিয়ে শংসয় থাকছে। কারণ, সদ্য সমাপ্ত ফুটবল মৌসুমে লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে তেমন মাঠেই নামতে পারেননি সুবোটিক।
৫. মেহদি বেনাটিয়া (ডিফেন্ডার):
ইতালিয়ান সিরি ‘আ’র দল রোমার হয়ে দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটিয়েছেন মরক্কোর ডিফেন্ডার মেহদি বেনাটিয়া। সেজন্য এখন বার্সেলোনা, ম্যানসিটি ও ম্যানইউয়ের নজরে আছেন ২৭ বছর বয়সী মরোক্কান। কিন্তু আফ্রিকান আঞ্চলের বাছাইয়ে তার দল ব্রাজিল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করতে পারেনি।
৬. ফ্রাঙ্ক রিবেরি (মিডফিল্ডার):
এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলের প্রাণ ভোমরা হওয়ার কথা ছিল বায়ার্ন মিউনিখ উইঙ্গার ফ্রাঙ্ক রিবেরির। সেজন্য ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ৩০ ও ২৭ জনের দলেও ছিলেন ২০১৩ ফিফা ব্যালন ডি অরের দ্বিতীয় রানার্সআপ। কিন্তু বিশ্বকাপের একেবারে শেষ মুহূর্তে জানা গেল, কাধের ইনজুরিতে বিশ্বকাপ দলে থাকা হচ্ছে না ফ্রান্সের প্রতিভাবান এই ফুটবলারের।
৭. মার্কো রেউস (মিডফিল্ডার):
বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার, মেসুত ওজিলদের ফিটনেস সমস্যার প্রত্যুষে এবারের বিশ্বকাপে জার্মানির কালো ঘোড়া ছিল মার্কো রেউস। জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো নিভৃতে সেভাবেই হয়তো রণ পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর ছয় দিন আগে ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলতে গিয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড মিডফিল্ডারের।
৮. গ্যারেথ বেল (উইঙ্গার):
রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর পর নিজেকে নতুনভাবে চিনিয়েছেন গ্যারেথ বেল। এই মৌসুমে স্প্যানিশ লা লিগায় প্রতিপক্ষের আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। গোল করানো ও করা- উভয়ক্ষেত্রেই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এই ওয়েলশম্যান। কিন্তু নিজের দেশকে বিশ্বকাপে তুলতে পারেননি তিনি।
৯. কার্লোস তেভেজ (ফরোয়ার্ড):
ইংল্যান্ড থেকে ইতালিতে জাওয়ার পর জুভেন্টাসের হয়ে মাঠে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন আর্জেন্টাইন তারকা কার্লোস তেভেজ। শারীরিকভাবেও ছিলেন ফিট। কিন্তু আর্জেন্টিনা কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলার পছন্দের তালিকায় না থাকায় নিজেদের মহাদেশের বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না তেভেজের।
১০. জাতান ইব্রাহিমোভিচ (ফরোয়ার্ড):
লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনলদোদের কাতারে উচ্চারিত হয় তার নাম। প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের হয়ে পারফরম্যান্স অনুবাদে তার যথার্থতা প্রমাণ করেছেন জাতান ইব্রাহিমোভিচ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের দলকে বিশ্বকাপে তুলতে পারেননি সাবেক বার্সা তারকা। পর্তুগালের বিপক্ষে প্লে-অফ হেরে ব্রাজিল যাওয়ার সুযোগ হারায় তার দেশ সুইডেন।
১১. রবার্ট লেভানডফস্কি (ফরোয়ার্ড):
নিজে কী করতে পারেন ২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিকে তা বুঝিয়েছেন পোলিশ ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভানডফস্কি। এজন্য অনেক জলঘোলা করে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বায়ার্ন মিউনিখ তাকে নিজেদের শিবিরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অমিত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বকাপে যাওয়া হচ্ছে না এই ফরোয়ার্ডের।