মুস্তাফিজ ঝড়ে ভেঙ্গে গেলো ভারত!

0

Mustafizঢাকা: বিস্ময় বালক মুস্তাফিজুর রহমান। তার আগমনী বার্তা পাওয়া গিয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচে। অসাধারণ লাইন-লেন্থ। জায়গায় বল রেখে দুরন্ত সুইং আর সর্পিল গতি। প্রতিটি বলই যেন প্রতিপক্ষের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যায়। ব্যাটসম্যানদের জন্য রীতিমত শিহরণ জাগানিয়া। শিরদাঁড়া বেয়ে হিমশীতল স্রোত বইয়ে দেয়ার মত।

৩০৭ রান ওয়ানডেতে এখন একেবারেই মামুলি। জয়ের জন্য নিরাপদ স্কোর তো কোনভাবেই বলা যায় না। শিখর ধাওয়ান আর রোহিত শর্মার ৯৫ রানের ওপেনিং জুটির পর সেটা আরও শঙ্কায় ফেলে দেওয়ার মত। কিন্তু চার পেসার তত্বের যে চিন্তা তা যে আজ ভারতের বিপক্ষে শতভাগ কাজে লেগে যাবে তা কে জানতো!

বিশেষ করে তরুণ তুর্কী মুস্তাফিজুর রহমানের এমন অসাধারণ আবির্ভাব! কল্পনাকেও হার মানায়। রীতিমত ভয়ে কেঁপেছে ভারতীয়দের হাঁটু। ভারতের অহমিকা আর সব দম্ভ নিমেশে ধুলায় মিশিয়ে দিলেন মুস্তাফিজ তার বাম হাতের যাদুতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি ধোনির ভারত। ৩০৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তারা অলআউট ২২৮ রানে। প্রথম ম্যাচেই ৭৯ রানের বিশাল জয় পেলো বাংলাদেশ।

১২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকছিল সফরকারী ভারত। এরপর রায়না ও জাদেজা মিলে অসাধারণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে নেয়ার জোর চেষ্টা চালান। তবে মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ৩৭তম ওভারে পরপর দুই বলে রায়না ও অশ্বিনকে আউট করে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখান  অভিষিক্ত এই পেসার। অবশেষে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ এবং সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২২৮ রানে অলআউট হয়েছে ধোনির ভারত।

প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই উত্তেজনা-রোমাঞ্চ বেশ জেঁকে ধরে টাইগার সমর্থকদের। ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের নেশায় বুদ গোটা বাংলাদেশ। জয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং স্কোরও গড়ে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৯.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান। এরপর ৩০৮ রানের জয়ের টার্গেটে করতে নামে ভারত।

উদ্বোধনী জুটিতে শেখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা মিলে ৯৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে তাসকিন আহমেদ পরপর দুই ওভারে ভারতীয় শিবিরে জোড়া আঘাত হেনে মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দর্শকদের গর্জন তুলেন। একে একে ধাওয়ান ও বিরাট কোহলিকে বিদায় করেন এই তরুণ পেসার।

এরপর মুস্তাফিজুর রহমান ওপেনার রোহিত শর্মাকে আউট করে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে গর্জন তুলেন। এই অভিষিক্ত পেসারের লাফিয়ে উঠা বলে বিভ্রান্ত হয়ে মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা মাশরাফিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রোহিত। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে এটিই মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম উইকেট।

১১৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ। পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান ফের ভারতীয় শিবিরে আঘাত হেরে মিরপুরের ২৩ হাজার দর্শকদের উল্লাসে মাতান, হাসি ফোটান কোটি কোটি দর্শকের। মুস্তাফিজের স্লোয়ার বলে বিভ্রান্ত বলে নাসিরকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আজিঙ্কা রাহানে। এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান রানের জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করেন। ২৫ বলে মাত্র ৯ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।

২৫ ওভার পেরিয়ে গেলেও সাকিবকে আক্রমণে আনেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিছুটা কী ক্ষেপে ছিলেন এই অলরাউন্ডার। ২৬তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সবচেয়ে দামি উইকেটটি তুলে নিলেন দেশসেরা এই ক্রিকেটার। সাকিবের স্পিনে নাকাল হয়ে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ভারতীয় অধিনায়ক এমএস ধোনি। ইনিংসের শুরুতে দু’দুটি ক্যাচ মিসের মূল্য যেন শোধ করলেন মুশফিক। অসাধারণ এক ক্যাচ লুফে বাংলাদেশের দর্শকদের আনন্দে মাতান তিনি।

১২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়া ভারতকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন জাদেজা ও সুরেশ রায়না। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজনের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ভারত। তবে ফের মুস্তাফিজুর রহমানের আঘাতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। এই অভিষিক্ত পেসারের করা ৩৭তম ওভারে চতুর্থ বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সুরেশ রায়না।

মুস্তাফিজের ইনসুইং বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন রায়না। পরের বলে অশ্বিনকে আউট করে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেন এই অভিষিক্ত পেসার। এক ওভার পর ফের বোলিংয়ে এসে ভারতের কোমর ভেঙে দেন মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের জয়ের পথের শেষ বাধা জাদেজাকে আউট করে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান এই তরুণ পেসার।

একই সঙ্গে অভিষেকেই ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার বিরল কৃতিত্ব অর্জণ করলেন ১৯ বছর বয়সী বাম হাতি এ পেসার। ৪৩তম ওভারের চতুর্থ বলেই মোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দেন মাশরাফি। তার স্লোয়ারে আলতো করে ব্যাট ঠেকিয়ে রান নিতে চেষ্টা করেন মোহিত। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ লুফে নেন মুশফিক।

৪৬তম ওভারের শেষ বলে উমেষ যাদবকে এলবির ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গেল ভারতের ইনিংস। ২২৮ রানেই অলআউট মহাপরাক্রমশালী ব্যাটিং লাইনআপের অধিকারী ভারত। প্রথম ওয়ানডেতেই ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ।

এর আগে ব্যক্তিগত ১৫ রানে আউট হতে পারতেন ওপেনার শিখর ধাওয়ান। ৯.২ ওভারের মাথায় মাশরাফির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ধাওয়ান। কিন্তু সহজ ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি অনেকদিন পর কিপিংয়ে ফেরা মুশফিকুর রহীম। অথচ মাশরাফির আবেদনে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

তারপরও বেশিদূর আগাতে পারেননি ধাওয়ান। ব্যক্তিগত ৩০ রানের মাথায় তাসকিনের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ভারতীয় এই ওপেনার। সেই সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয় ভারতের ওপেনিং জুটি। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৯৫ রান।

এরপর দ্বিতীয় উইকেটে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তবে ফের তাসকিন আহমেদ ভারতীয় শিবিরে আঘাত হেনে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান। তাসকিনের শর্ট অব লেংথ বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক। ৪ বলে মাত্র ১ রান করে আউট হন তিনি। অল্প সময়ের ব্যবধানে রোহিতকে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরের ওভারে রাহানেকে আউট করে ভারতকে চেপে ধরেন এই অভিষিক্ত পেসার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড
বাংলদেশ: ৩০৭/১০, ৪৯.৪ ওভার (তামিম ৬০, সৌম্য ৫৪, সাকিব ৫২, সাব্বির ৪১, নাসির ৩৪, মাশরাফি ২১, মুশফিক ১৪, লিটন ৮, রুবেল ৪, তাসকিন ২; অশ্বিন ৩/৫১, কুমার ২/৩৭, যাদব ২/৫৮।

ভারত: ২২৮/১০, ৪৬ ওভার (রোহিত শর্মা ৬৩, রায়না ৪০, জাদেজা ৩২, ধাওয়ান ৩০, ভুবনেশ্বর ২৫*; মুস্তাফিজুর ৫/৫০, তাসকিন ২/২১, সাকিব ২/৩৩)।

ফল: বাংলাদেশ ৭৯ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা: মুস্তাফিজুর।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More