ঢাকা: গাঢ় নীল রঙের জার্সি পরে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। সেই নীল রঙ যে দুঃখের রঙ হবে তা কেই বা জানত। দুর্দান্ত খেলতে থাকা আর্জেন্টাইনদের বিজয় ছোঁয়ার মত মুহূর্ততো অনেকবারই এসেছিল। কিন্তু বিধাতা যে বিজয় গাথা লিখে রেখেছিলেন জার্মানদের নামেই। তাই প্রিয় তারকা মেসির কান্না দেখতে হলো কোটি কোটি ভক্তের। আর আর্জেন্টাইনদের গাঢ় নীল দুঃখের দিনে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ছোঁয়ার মুহূর্তটা শেষ পর্যন্ত খুঁজে নিল মুলার-লামরা। গ্যালারিতে থাকা জার্মান সমর্থকদের উল্লাসে মাতিয়ে বিজয় মঞ্চটা রচনা করলো জোয়াকিম লোর শিষ্যরা। মেসিদের কান্না পেছনে ফেলে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নিয়ে আনন্দে মাতলো তারা। সোমবার রিওডি জেনোরোর মারাকারনা স্টেডিয়ামে রচিত হলো জার্মানদের বিজয় গাথা। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে অতিরিক্ত সময়ের গোলে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে চতুর্থ শিরোপা জয়ের মহাকাব্য রচনায় ইতিহাসের অংশ হলো মুলার-গোটশেরা। লাতিন সম্রাজ্যে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জয় করে ইতিহাস রচনা করলো তারা।
বিশ্ব জয়ের এত কাছে থেকে ফিরে আসাটা কষ্টের। আর সেই কষ্টটা আরো বেশি হয় যখন ১১৩ মিনিট পর্যন্ত সমতায় থেকেও ফিরতে হয় শূন্য হাতে। ম্যাচ শেষে তাই সেই কষ্টে সবটুকু হৃদয়ে ধারণ করতে হয়েছে মেসিকে। সেই সাথে সেই কষ্টের সবটুকু ছোঁয়ে গেছে সাবেলার শিষ্যদের। বিষণ্নতা ভর করেছিল মারাকানার গ্যালারিতে ভিড় করা আর্জেন্টাইন সমর্থকদেরও। একই সঙ্গে প্রিয় দলের স্বপ্ন ভঙ্গের সেই দৃশ্যায়ন দেখতে হয়েছে বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তদেরও। আর জার্মানদের বিশ্বজয়ের আনন্দটাও ছিল বাধ ভাঙ্গা। দুই যুগ পর শিরোপাটা যোগ্য দল হিসেবেই অর্জন করেছে জোয়াকিম লোর শিষ্যরা।
ম্যাচটা হয়ত জয় করে নিতে পারতো আর্জেন্টিনাই। কিন্তু বিশ্বজয়ের মঞ্চে এসে এমন সব গোল মিসের মহড়া প্রদর্শন করেও কী জয় পাওয়া সম্ভব? অবশ্য এদিন এমন মিসতো করেছে জার্মানরাও। তবে কী বিধাতার লেখা নিয়তিই বাধা হয়েছিল মেসির ম্যারাডোনা হবার পথে।
এদিন প্রথম গোলের সুযোগটা পেয়েছিল আর্জেন্টিনাই। টনি ক্রুসের ব্যাক পাস থেকে সহজ সুযোগ পায় আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড গঞ্জালো হিগুয়েন। ম্যাচে ২০ মিনিটে ডি বক্সের ভিতরে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে তার নেয়া শট অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়। নয় মিনিট পর হিগুয়েনের গোল অফ সাইডের কারণে বাতিল হয়। ৩৭ মিনিটে মুলারের পাস থেকে শটটা ঠিক নিশানাতেই ছিল জার্মান মিডফিল্ডার আন্দ্রে শার্লের। কিন্তু গোলকিপার রোমেরোর দুর্দান্ত সেভে রক্ষা পায় আলবেসেলিস্তেরা। প্রথমার্ধে শেষ হবার ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে জার্মানির বেনেডিক্ট হাওয়েডসের কর্নার থেকে নেয়া হেড বারে লেগে ফিরে আসায় গোল বঞ্চিত হয় তার দল। ফলে প্রথমার্ধে গোল শূন্য থেকে মাঠ ছাড়ে দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনার সমর্থকদের উল্লাসের সুযোগ করে দেয়ার সুযোগ পান মেসি। কিন্তু দিনটা হয়ত ছিল জার্মানদেরই। ডি বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে তার নেয়া শট বার পোস্ট ঘেষে বাইরে চলে যায়। জার্মানির বিপদ সীমানায় এদিন অতঙ্ক ছড়ানোর কাজটা ভালই করে যাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। কয়েকবার মেসির ঝলকও দেখলো সমর্থকরা। কিন্তু সেই চেষ্টায় যেন আবারও সঙ্গহীন থাকতে হলো তাকে। আর অন্য দিকে মুলারের পাসে শার্লে ও ক্লোসার ডিফেন্স ভাঙ্গার চেষ্টাও অব্যাহত ছিল। তবে আর্জেন্টিাইন ডিফেন্স দৃঢ়তা বারবার ব্যর্থ করেছে সেই চেষ্টা।
নির্ধারিত সময়ে কোন দল গোল না পাওয়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ায় ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই শার্লের শট আটকে দেন নীল জার্সিধারীদের গোলকিপার রোমেরো। আর ৯৬ মিনিটে প্যালসির মিসটা মনে গেথে থাকবে আর্জেন্টিনার ভক্তদের। ডি বক্সের ভিতরে ডান দিকে অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও সেদিকে বল নিয়ে দৌড়ে যাননি তিনি। জার্মান গোলরক্ষক নোয়ারের মাথার উপর দিয়ে তার নেয়া শটে বল বাইরে চলে যাওয়ার দৃশ্যটা প্রতীকী হয়ে থাকল আর্জেন্টিনার শিরোপা হারানোর দিনটার। শেষ পর্যন্ত সফলতা জার্মানরা চূড়ান্ত সফলতা ছুঁয়েছে ১১৩ মিনিটে। আন্দ্রে সার্লের পাসে বল পেয়ে বল জালে জড়াতে ভুল করেনি মারিও গোটশে। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি আলবেসেলেস্তিরা। ১৯৯০ সালের পরাজয়ের সেই স্মৃতির পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে বিজয় গাথা রচনা করলো মুলাররাই।