এর আগেও অনেকবার এই বিমানবন্দরে নেমে বাড়ির পথ ধরেছেন। কিন্তু কাল যশোর বিমানবন্দরে পা রাখতেই গোটা শরীরে যেন এক শিহরণ বয়ে গেল মান্নাফ রাব্বির। এই যশোরেই যে জন্ম বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের এই স্ট্রাইকারের। যশোরের চুড়ামনকাঠির যুবক আজ হয়তো লাল সবুজ জার্সি গায়ে নামতে পারেন শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে।
যশোরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামেই ফুটবলের হাতেখড়ি রাব্বির! বছর পাঁচেক আগে শামস-উল হুদা ফুটবল একাডেমির ট্রায়ালে এসেছিলেন। বাছাইয়ে টিকে যাওয়ার পর শামস-উল হুদা একাডেমিতেই তাঁর খেলোয়াড় হিসেবে বেড়ে ওঠা। স্টেডিয়ামের পাশেই পৌরপার্ক। খেলা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে পার্কের পুকুরে কত যে সাঁতার কেটেছেন তাঁর হিসাব নেই। কাল স্থানীয় টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে রাব্বি খুলে দিলেন পুরোনো স্মৃতির ঝাঁপি, ‘কত যে মজার স্মৃতি আছে এই শহরে তা বলে শেষ হবে না। বন্ধুরা মিলে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। দাপাদাপি করতাম। খেলা শেষ হলেই ছুটে যেতাম পুকুরে।’ রাব্বি পড়াশুনাও করেছেন যশোর জিলা স্কুলে।
রাব্বির বাবা আবদুল মোনায়েমও ফুটবলার ছিলেন। খেলেছেন স্থানীয় জেলা লিগে। নিজে জাতীয় দলে খেলতে পারেননি। ছেলেকে দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা। কাল রাব্বি বলছিলেন, ‘বাবার অনুপ্রেরণাতেই আমি ফুটবলে এসেছি। বয়সভিত্তিক দলে খেলছি। একদিন জাতীয় দলে খেলতে চাই।’
ঘরের মাঠে চেনা পরিবেশে খেলবেন ঘরোয়া ফুটবলে রহমতগঞ্জের হয়ে খেলা এই স্ট্রাইকার। পরিবারের লোকজন মুখিয়ে আছেন তাঁর খেলা দেখতে। রাব্বি নিজেও একটু রোমাঞ্চিত এসব নিয়ে, ‘আমার খেলা দেখতে বাবা-মা, চাচা-চাচিরা সহ সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সবাইকে খেলার টিকিট দিয়েছি। বন্ধুরাও ফোন করছে অনেক। মোবাইল বন্ধ করে রাখা ছাড়া উপায় দেখছি না। ফেসবুকের ইনবক্স ভরে গেছে শুভেচ্ছায়।’
তুলনাটা একটু বাড়াবাড়িই হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও ফুটবল ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা কার্ডিফ সিটির ইতালিয়ান স্ট্রাইকার ফেদেরিক মাচেদার সঙ্গে কেন যেন মেলাতে চান রহমতগঞ্জের মান্নাফ রাব্বিকে। দুজনের মধ্যে চমৎকার একটা মিলও খুঁজে পেয়েছেন তিনি। বদলি হিসেবে নেমে বড় দলের পয়েন্ট কাড়তে মাঠে দুজন ভালোই অবদান রাখেন। গত প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেলের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগ করেছে রহমতগঞ্জ। প্রতিটি ম্যাচেই মান্নাফ রাব্বির গোলের কারণে ড্র করে মাঠ ছাড়ে দলগুলো। লিগে ভালো খেলার পুরস্কারও পেয়েছেন রাব্বি। সাফের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার পর সুযোগ পান এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও। এবার সুযোগ এসেছে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে কিছু করে দেখানোর। সেই অপেক্ষায় আজ পৌনে তিনটায় বাহরাইনের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে নামতে চান রাব্বি। যশোরের ছেলের গোলে যদি বাংলাদেশ জেতে, তা যেন রাব্বির জন্য হবে সোনায় সোহাগা।
রাব্বির স্বপ্নটা এখানেই আটকে নেই, সেটা যে বিস্তৃত অনেক দূর-দিগন্তেই।